প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানীর মিরপুরে গুলি করে একজন ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় তুলেছে। এছাড়া রাজধানীর ১৯ হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। পশু আনা-নেওয়ার সময় ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে তারা ছিনতাই বা ডাকাতির কবলে পড়তে পারেন বলে উদ্বিগ্নে আছেন। অন্যদিকে কুরবানির ঈদে বাড়ি ফেরার সময় বা বাড়িতে রওনা দেওয়ার পর খালী বাসায় ডাকাতির ভয় কাজ করছে ঢাকাবাসীর।
মিরপুরের ছিনতাইয়ের ঘটনা মানুষকে আতঙ্কিত করেছে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনের গলিতে এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যবসায়ীর নাম জাহিদুর রহমান। মিরপুর-১০ নম্বরে তার মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা আছে।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি লেগেছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। ঘটনার পর তাকে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছিলেন স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, তার শরীর থেকে গুলি বেরিয়ে গেছে। তিনি বিপদমুক্ত।
মিজানুর রহমান বলেন, ওই ব্যবসায়ীর বাসা ফায়ার সার্ভিসের পেছনের গলিতে। সকালে শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। তারা ফায়ার সার্ভিসের গলি দিয়ে মূল সড়কে আসার সঙ্গে সঙ্গে একটি মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা ব্যবসায়ীর ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এ সময় ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়েন তারা।
মিজানুর রহমান আরো বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
ঈদ যাত্রায় শঙ্কা ডাকাতি-ছিনতাইয়ের : সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় একটি বাস দিনে অন্তত তিনটি করে ট্রিপ দেবে। প্রতি ট্রিপে গড়ে ৪০ জন যাত্রী থাকলে ১০ হাজার বাসে দিনে ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। এবার ডাকাত আতঙ্ক নিয়েই যাত্রীসেবা দিতে হবে। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ঈদ যাত্রায় ভিড় এড়াতে যারা খুব ভোরে মহাখালী, গাবতলী, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ির দিকে রওনা দেবেন, তারা ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে পারেন। ঢাকায় এত সংখ্যক মোড়, রাস্তা, অলিগলিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার রাজধানীর খালী বাসা-বাড়িতে এবার ডাকাতি হওয়ার শঙ্কা অনেক বেড়ে গেছে। এটা ঠেকানোর কোনো প্রক্রিয়া আসলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নেই।
পশুবাহী ট্রাকগুলো সর্বোচ্চ নিরাপত্তাহীনতায় : ঢাকায় এবার ১৯টি পশুর হাট বসবে। সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সেসব হাটে দিন-রাত পালা করে টহল দেবে। তবে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোর নিরাপত্তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সড়ক পথে ঢাকার তিন দিক দিয়ে পশুবাহী ট্রাক ঢুকবে। আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ি- এই তিন প্রবেশ পথে দিন-রাত পুরো নিরাপত্তা দেওয়ার সক্ষমতা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেই। তারা হয়তো বাস স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করতে পারে। কিন্তু আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং অলিগলিগুলো থাকবে অরক্ষিত। যানজটে ট্রাকগুলো থামলে বা চলার সময় ট্রাকগুলো থামিয়ে দল বেঁধে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা হামলা করে টাকা ও পশু ছিনতাই করলে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। নৌপথে নৌযানে করে কুরবানির পশু আসে সদরঘাট ও আশপাশের এলাকা, গাবতলী ঘাট ও আশপাশের এলাকা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এবং আব্দুল্লাহপুরের আশপাশের তুরাগ নদী এলাকা হয়ে। এ বিশাল এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
কেকে/এআর