মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া ১৫ কর্মকর্তাকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায় সেনাবাহিনী। যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল ঠিক করবেন আসামিরা কোথায় থাকবেন। এই আলোচনার মধ্যেই ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়।
এ প্রজ্ঞাপন ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা সেনা সদস্যদের গ্রেফতার দেখানো হলে তাদের আদালতে হাজির করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ট্রাইব্যুনাল ঠিক করবেন আসামিদের সাবজেল না অন্য কোনো কারাগারে পাঠাবেন।
তিনি বলেন, ‘কোনো জায়গাকে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হবে সেটা প্রসিকিউশন বা তদন্ত সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয়, আমাদের বিবেচ্য বিষয় হলো আইন অনুযায়ী কাজটা করতে হবে। আসামিকে যদি গ্রেফতার করা হয়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। সেটা সংবিধান, ট্রাইব্যুনাল আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে আছে।’
তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা তিন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। এই বিষয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের একটা ভাবনা হচ্ছে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি হওয়া এসব কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে থাকবে। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে সেনাবাহিনী এদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করবে, আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার হেফাজতে নিয়ে যাবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন।
এরপর গত শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ১৫ কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। আর এক কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ‘যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে তাদের মধ্যে ১৫ কর্মকর্তা ঢাকায় সেনা হেফাজতে আছেন। আমরা ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম। ১৫ জন আমাদের সেনা হেফাজতে এসেছেন।’
এমন আলোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করল। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. হাফিজ আল আসাদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ৫৪১(১)-এর ক্ষমতাবলে এবং দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট, ১৮৯৪ (১৮৯৪ এর নবম) এর ধারা ৩(বি) অনুসারে, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ ঘোষণা জারি করা হয়েছে এবং এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে এই কারাগারে কাদের রাখা হবে, তা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়নি।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার যদি কোনো বাড়িকে সাবজেল বা উপ-কারাগার ঘোষণা করে, সেখানে মামলার আসামি রাখতে পারেন। এমন নজির এর আগেও রয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে এক-এগারোর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর সংসদ ভবন এলাকায় দুটি বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে সেখানে তাদের রাখা হয়েছিল।
কেকে/ এমএস