দশমিনা উপজেলা মৎস্য দপ্তরের “সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ” প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা গ্রহণ, জেলেদের টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি ও অফিসের কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, “মা ইলিশ সংরক্ষন অভিযান-২০২৫” বাস্তবায়নে অনিয়ম, বিধি বহির্ভূত কার্যক্রম, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্থানীয় দুস্কৃতিকারীদের সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনার সময় স্থানীয় জেলেদের রোশানলে পরে শারীরিক নিয়াতনের স্বীকার হন ওই কর্মকর্তা। অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তর, বরিশাল সাসটেইনেবল কেষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প পরিচালক ওই রাতেই তাকে মৌখিক আদেশে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম পালনের নির্দেশ দেন। উপজেলা মৎস্য অফিসে কর্মরত অবস্থায় অফিস সহকারী রন্তা মন্ডলকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরনের সময় স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে অফিস স্টাফকে মারার জন্য তেরে আসেন। এ ঘটনায় রত্না মন্ডল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দেন।
ইমরান হোসেন ও আলফে সানীকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দপ্তর চট্রগ্রাম ও ঢাকা স্থল বন্দরে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা নেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জেলেদের বকনা বাছুর দেওয়ার কথা বলে ভোটার আইডি কার্ডসহ নাম প্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। জেলেদের ট্রলারের লাইসেন্স দেবার কথা বলে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা নিয়েছেন। জেলেদের ট্রলারের লাইসেন্স রেনু করার জন্য ওই টাকা সরকারি কোষাগারে না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়নে নদীতে টহলরত ট্রলারে তেলের টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও জানা যায়।
উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহকারি রত্না মন্ডল জানান, “২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রান্তিক জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরনের সময় জেলেদের স্বাক্ষর নিতে সময় হলে “সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ” প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মনাজমুল হাসান (পলাশ) তার টেবিল থেকে আমার টেবিলে এসে মারার জন্য চেষ্টা করেন। সেখানে অফিসের আমিনুল ইসলাম ও মৎস্য বোট চালক সুজালক আমাকে রাক্ষা করেন। আমি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মহোদয়েকে মৌখিক জানাই তিনি আমাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।”
ফিরোজ জানান, “নাজমুল আমাদের কাছে গিয়ে ট্রলারের লাইসেন্স করার জন্য বলেন। লাইসেন্স না করলে ট্রলার নিয়ে যাবেন এবং মামলা দিবেন বলে হুমকি দেয়। আমরা ৮ জন জেলে মিলে ৫ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা দেই ট্রলারের লাইসেন্স করার জন্য। আমাদের আজকাল বলে ৬-৭ মাস ঘুরায়। আমরা সকলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিবো যেন আমাদের টাকা পাই।”
ইমরান হোসেন ও আলফে সানী জানান, “দশমিনায় যোগদানের পর নাজমুল নিজেকে মৎস্য কর্মকর্তা দাবি করেন। আমারও দেখি সকল কাজে তিনি সবসময় থাকেন। আমাদের জেলা মৎস্য কর্মকতার দপ্তর চট্রগ্রাম ও ঢাকা স্থল বন্দর নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা নেন। তিনি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। আমরা এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ জানিয়েছি, তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।”
উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের জেলে অলিউল, জলিল, সান্টু জানান, “আমাদের বকনা বাছুর দেওয়ার কথা বলে ১০-১৫ হাজার টাকা নেন। এ বছর আমাদের বাছুর গরু দেওয়ার কথা ছিলো। গরু বিতরণের সময় অফিসে ফোন করে নেন। বিতরনের সময় আমাদের নাম ডাক পরেনি। তখন নাজমুল বলেন কয়েক দিনের মধ্যে আবার আসবে তখন দিবো। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।”
উপজেলা মৎস্য মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান জানান, আমার বিষয়ে যে সকল অভিযোগ দেওয়া হয়েছে আমি তার সাথে জড়িত নই। আমার অনুপস্থিতিতে এ সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “আমি যোগদান করার পর “সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ” প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নাজমুল হাসানকে (পলাশ) পাইনি। আমি যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা পরেছে। তার বিরুদ্ধে অফিসের স্টাফ লাঞ্চিত, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা গ্রহন, জেলেদের বকনা বাছুর দেওয়ার নামে টাকা গ্রহন, ট্রলারে লাইসেন্স দেওয়ার নামে টাকা গ্রহন এবং ট্রলারের লাইসেন্স রেনু করার টাকা আত্মসাৎ করেন। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় ট্রলারের তৈলের টাকা দোকানে না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন। এসকল বিষয়ের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মহোদয়কে সকল বিষয় জানিয়েছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, “উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাকে দশমিনা মৎস্য অফিসের “সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ” প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় জানিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে উপ-প্রকল্প পরিচালক, বরিশাল সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প মৎস্য অধিদপ্তর এবং বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক মহোদয়কে জানিয়েছি।”
কেকে/ আরআই