বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫,
৩০ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা      নির্বাচন ঠেকাতে আরেকটি এক-এগারোর পাঁয়তারা      দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ চাকসু নির্বাচন      মিরপুরে নিহতের ঘটনায় তারেক রহমানের শোক      মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক আজাদ ওএসডি      আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে      মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক      
খোলাকাগজ স্পেশাল
নির্বাচন ঠেকাতে আরেকটি এক-এগারোর পাঁয়তারা
রোকন উদ্দিন
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:৪১ এএম

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি গোষ্ঠী। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে নির্বাচন বানচালে উঠে-পড়ে লেগেছে তারা। এ লক্ষ্যে দেশে আরেক ‘এক-এগারো’র মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরের একটি চক্র এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বাইরে থেকে সরকার, সেনাবাহিনী নিয়ে নানা গুজব ছড়াচ্ছে কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি। এ ছাড়া দেশের ভেতরে, বিশেষ করে প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসররা নির্বাচন ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট শক্তি নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া। তারা কোনোভাবেই দেশে শক্তিশালী নির্বাচিত সরকার চায় না। তাই দেশের ভেতরে-বাইরে থাকা তাদের এজেন্টদের সক্রিয় করেছে। তারা নানা গুজব সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে জনগণকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি করার চেষ্টাও হয়েছে সম্প্রতি। 

এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথ দখলে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চেষ্টা করছে কিছু রাজনৈতিক দলও। যাতে শঙ্কায় পড়ে যায় নির্বাচন। এদিকে হঠাৎ করেই উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে আলোচনা উসকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে সরকারের মধ্যেও এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দেশে আরেকটি এক-এগারো পরিস্থিতির আয়োজন চলছে। 

এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক খোলা কাগজকে বলেন, ‘যখন মানুষ অপেক্ষা করছে একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য, সেইসঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, স্টেকহোল্ডার, সবাই অপেক্ষা করছে, তখন এসব তৎপরতা বিদ্যমান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। এটা নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছুটা ঝুঁকি তৈরি করছে। এ পরিস্থিতি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হচ্ছে কিনা, সে সন্দেহটা দিনে দিনে প্রবল হচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেখানে একটি শক্তিশালী পলিটিক্যাল ম্যান্ডেট সম্পন্ন সরকার ছাড়া দেশকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বহুমাত্রিক যে সংকট, নিরাপত্তার যে ঝুঁকি, সামগ্রিকভাবে একটি রাজনৈতিক সরকার ছাড়া সেই ক্রাসিইস থেকে উত্তরণের সুযোগ নেই। এটা জানার পরও যারা নতুন নতুন ইস্যু হাজির করছে। বোঝা যাচ্ছে যে, নির্বাচনের বাইরেও তাদের অন্য কোনো এজেন্ডা আছে।’ 

তবে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘এখানে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি পরিষ্কার থাকে, তাহলে সব ধরনের ঝুঁকি ওভারকাম করা সম্ভব।’ 

সরকারের ভেতর থেকেও কোনো শক্তি অস্থিরতা তৈরি করছে বলে আশঙ্কা তার। এ বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘এখন সরকারের ভেতরকার কোনো শক্তি যদি অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য পরোক্ষভাবে কাজ করে তা আরো বিপজ্জনক হবে। যদিও আমরা এখনো আশাবাদী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। ১৭ (অক্টোবর) তারিখে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে। এরপর তো শুধু নির্বাচন।’ 

মীমাংসিত বিষয়ে কিছু রাজনৈতিক দল আন্দোলনে যাওয়াটার মধ্যে কোনো উদ্দেশ্য আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে বিষয়ে আমরা ঐকমত্য কমিশনে একমত হয়েছি, তা নিয়ে যখন দুই-একটা দল রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেয়, উত্তেজনা তৈরি করে, তখন বোঝা যায় যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, অন্য কোনো মতলব আছে। মীমাংসিত বিষয় নিয়ে যখন রাজপথ দখলের লড়াই শুরু হয়ে যায়, তখন অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের পরিস্থিতি হয়। সে অবস্থার সুযোগ তো কেউ কেউ গ্রহণ করতে পারে। আবার ফ্যাসিস্ট রেজিমও গ্রহণ করতে পারে। তাই এরকম জায়গায় কারো যাওয়া ঠিক হবে না। তাহলে আমরা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব।’ 

নির্বাচন সামনে রেখে কিছু উদ্বেগ আছে বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। বিশেষ করে দেশের মানুষের কাছে অপরিচিত সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবি যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করি। সরকার ও নির্বাচন কমিশন সে চেষ্টা করছে; কিন্তু কিছু বিষয় আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। পিআর পদ্ধতির মূল সমস্যা হলো- এতে ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী নির্বাচনের স্বাধীনতা খর্ব হয়। ভোটারকে ব্যক্তির বদলে দলকে বেছে নিতে হয়। এতে জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্বের ধারণা দুর্বল হয়ে পড়ে।’

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘এখন দেশে হঠাৎ করে নতুন পদ্ধতি চালু করলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও দ্রুত নির্বাচন চাওয়া মানুষের জন্য এটি উদ্বেগের বিষয়।’ 

সেনাবাহিনীকে নিয়ে গুজব : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ ছাড়া অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে নাগরিকদের জানমাল এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকার ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল। কিন্তু সেই সেনবাহিনীকে নিয়ে অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে একটি চক্র। বিশেষ করে গত রোববার রাতে ফ্রান্সপ্রবাসী এক এক্টিভিস্ট লাইভে এসে সেনাবাহিনীকে নিয়ে গুজব ছাড়ায়। তিনি দেশের মানুষকে ওই রাতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। যদিও তার আহ্বানে জনগণ বিভ্রান্ত হয়নি। কিন্তু এমন অপচেষ্টাকে দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

তারা বলছেন, কোনো বিদেশি শক্তির উসকানিতেই ওই ব্যক্তি দেশের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রে নামেন। তাদের ধারণা, ওই ব্যক্তি আসলে ফ্যাসিস্ট রেজিমেরই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। যাতে সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং মানুষের মথ্যে অবিশ্বাসের জন্ম হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি জয়লাভ করতে পারে। তবে তার সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। 

এ ছাড়া সরকার সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে রাখা নিয়ে একটি মহল বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী তাদের ওই সদস্যদের নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকউটর মো. তাজুল ইসলাম এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল ঠিক করবেন আসামিরা কোথায় থাকবেন। 

আলোচনায় ‘সেফ এক্সিট’ : হঠাৎ করে কয়েকজন উপদেষ্টার ‘সেফ এক্সিট’ দেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতর অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা। এতে সরকারের অভ্যন্তরীণ সংহতি দুর্বল হয়ে পড়বে। আর সরকারকে দুর্বল দেখিয়ে অশুভ শক্তি দেশ দখলের চেষ্টা করতে পারে।  

সেফ এক্সিটের বিষয়টি প্রথম সামনে আনেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কয়েকজন উপদেষ্টা সেফ এক্সিটের চিন্তা করছেন।’ তার এমন বক্তব্যের পর রাজনীতিতে নতুন ঝড় ওঠে। যদিও কারা সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন, তা খোলাসা করেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নাহিদের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। 

কারা সেফ এক্সিট নিতে চান, নাহিদ ইসলামকে তার প্রমাণ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন এখন সেফ এক্সিট নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি, আমাদের কারো কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। 

এদিকে নির্বাচিত সরকারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক এক্সিট চান বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা নিজেরা সেফ এক্সিট চাচ্ছি না, স্বাভাবিক এক্সিট চাচ্ছি। দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি আমার ঘরে থাকব; বিদেশে পালিয়ে যাব না। কারণ, আমার তো দ্বিতীয় কোনো ঘর নেই।’

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  নির্বাচন   এক-এগারো   পাঁয়তারা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শ্রীপুরে ট্রাকচাপায় বাবা নিহত, গুরুতর আহত ছেলে
নিখোঁজের ১৫ দিন পর সৌদির মরুভূমিতে মিললো বাংলাদেশীর মরদেহ
বন্দর ব্যবস্থাপনায় জাতীয় স্বার্থ রক্ষা জরুরি
ইলিশ আহরণের অপরাধে সদরপুরে ২২ জেলের কারাদণ্ড
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

সর্বাধিক পঠিত

ইলিশ রক্ষার অভিযানে গিয়ে অস্ত্র খোয়ালেন আনসার সদস্য
লালপুরে সরকারি রাস্তার মাটি কাটায় জরিমানা
মদনের কাইটাইল ইউনিয়নে বিএনপির পরিচিতি ও নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা
স্বর্ণের ঊর্ধ্বগতি থামছেই না, ২২ ক্যারেটের ভরি ২ লাখ ১৬ হাজার টাকায়
আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close