সৌদি আরবে ১৫ দিন ধরে নিখোঁজের পর মরুভূমিতে বালু ও পাথর চাপা দেওয়া মাদারীপুরের যুবক সবুজ মাতুব্বরের (২৪) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) মরুভূমিতে পাওয়া অর্ধগলিত লাশের চেহারা চেনা না গেলেও পরিচিতরা শনাক্ত করেন যুবক সবুজকে। পরে খবর আসে বাড়িতে। এদিকে বাড়িতে খবর এলে শোকের মাতম ওঠে অসহায় পরিবারে।
নিহত সবুজ জেলার শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকপুর এলাকার মেছেরমোল্লার গ্রামের আব্দুল জলিল মাতুব্বরের একমাত্র ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, পরিবার পরিজন নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গত আট মাস আগে সৌদি আরব যান সবুজ। প্রথমে রিয়াদে ও পরে কাজের খোঁজে আল কাসিম এলাকায় থাকা শুরু করেন তিনি।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ভ্যান চালক বাবা ধার-দেনা করে টাকা জোগাড় করে পাঠিয়েছিলেন সৌদি আরব। স্বপ্ন ছিল দেনা পরিশোধের পর বিদেশ থেকে পাঠানো টাকায় নতুন ঘর তুলবেন। স্বচ্ছল জীবন-যাপন করবেন। তবে সেই স্বপ্ন নিমিষেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৯ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ছেলের সঙ্গে কথা হয় বাবা জলিল মাতুব্বরের। বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য টাকা পাঠানোর কথা বলে ফোন রাখেন। ১ তারিখ সকালে টাকা পাঠানোর কথা ছিল। টাকা না আসায় ওই দিন দুপুরে ফোন দিলে ছেলের নম্বর বন্ধ পান। পরে আবার চেষ্টা করেন। অথচ নম্বর বন্ধই থাকে। এভাবে একদিন পার হবার পর উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন বাড়িতে থাকা বাবা-মা। এরপর সৌদিতে থাকা অন্যদের কাছ থেকে খবর পান ১ তারিখ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সবুজ!
গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) আল কাসিম এলাকায় মরুভূমিতে বালু ও পাথর চাপা দেওয়া এক যুবকের লাশ খুঁজে পায় সৌদি পুলিশ। লাশটি সবুজের বলে ধারণা করে সেখানে থাকা অন্য বাঙালিরা। এ খবর বাড়িতে পৌছালে শোকের মাতম শুরু হয়।
জানতে চাইলে নিখোঁজ সবুজের চাচা খোকন মাতুব্বর বলেন, প্রায় ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সৌদি পুলিশকেও জানানো হয়। গতকাল সোমবার সবুজ যেখানে থাকতো তার কাছেই নির্জন মরুভূমিতে বালু আর পাথর চাপা লাশ পায় পুলিশ। লাশ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবুজ যে প্যান্ট ও গেঞ্জি গায়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল, ওই পোশাক দেখে আশপাশে থাকা পরিচিতরা বুঝতে পারে লাশটি সবুজের!
সবুজের ছোট বোন রিয়ামনি আক্তার বলেন, আমার ভাইর কাছে ৩ লাখ টাকা ছিল। আকামা করার জন্য রাখছিল। ওই টাকার জন্যই আমার ভাইরে মাইরা ফালাইছে। আমার বাবা ভ্যান চালিয়ে কষ্ট করে উপার্জন করে। তার একটাই ছেলে। ঋণ করে টাকা জোগাড় করে সবুজকে সৌদি পাঠায়ছিল!
প্রতিবেশী মান্নান ফকির বলেন, পরিবারটি খুবই দরিদ্র। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন ছেলের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছে। লাশ আনার টাকা-পয়সা নাই। যাওয়ার সময় ওর কাছে প্রথম আকামা করার টাকা ছিল। প্রায় তিন লাখ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে টাকার জন্যই সবুজকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে থাকতো হয়তো তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
নিহতের বাবা জলিল মাতুব্বর বলেন, বাড়িতে ১০ হাজার টাকা পাঠাইতে চাইছিল। আমার সঙ্গে ওইটাই শেষ কথা। এতোদিন নিখোঁজ ছিল। গতকাল ওখানে লাশ পাইছে। সৌদি থেকে জানাইছে লাশ সবুজের! আমরা এখন কি করমু?
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম ইবনে মিজান বলেন, আমরা খোঁজ খবর নেব। যতটুকু পারি পরিবারটিকে সহযোগিতা করবো। লাশ আনার বিষয়ে পরিবার সহযোগিতা চাইলে নিয়ম অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
কেকে/ এমএস