সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসবকে ঘিরে আমিরাতের অবস্থানরত বাংলাদেশী সনাতন ধর্মালম্বীরা দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে দশটি পূজা মণ্ডপ তৈরি করেছিল।
আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে একটি, আল আইনে তিনটি, ফুজিরাহ প্রদেশে একটি, শারজাহ প্রদেশে তিনটি ও আজমান প্রদেশে দুটি পূজার মণ্ডপ তৈরি হয়েছিল। দুর্গাপূজা উদযাপনে ৫ দিনের অনুমতি দিয়েছিল আমিরাতের স্থানীয় প্রশাসন।
আমিরাতের আজমান প্রদেশে ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল প্রবাসী সনাতনী ঐক্য পরিষদ। ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনিতে উৎসবমুখর পূজা প্রাঙ্গণ ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে ছিল চোখে পড়ার মত।
আমিরাত মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও এখানে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ও ভারতীয় সনাতনী প্রবাসীরা মিলে প্রতি বছর দুর্গাপূজো আয়োজন করেন। বাংলাদেশের মানুষ এই উৎসবের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ভোর থেকেই মণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়। দশমীর সকালে মণ্ডপে পূজার অন্যতম প্রধান আচারে অংশ নেন নারীরা। দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করে তারা দেবীর শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর একে অপরের গায়ে সিঁদুর মেখে জীবনের সমৃদ্ধি কামনা করেন। পরে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।
বাংলাদেশ মিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর আশীষ কুমার সরকার বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতির বড় যে উৎসব আমাদের রয়েছে, তার মধ্যে শারদীয় দুর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রবাসে যারা সনাতন ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, ইউএইতে সব চেয়ে বড় আয়োজন আজমানের এ পূজা মণ্ডপ।
তিনি আয়োজকদের প্রশংসা করে বলেন, ‘প্রবাস জীবনে ব্যস্তার মধ্যেও এত বড় আয়োজনে অনেক পরিশ্রম জড়িয়ে রয়েছে।’
তাই, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান আশীষ কুমার।
প্রবাসী সনাতনী ঐক্য পরিষদের সভাপতি অজিত কুমার রায় বলেন, ‘মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।’
প্রবাসী সনাতনী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘মা দুর্গা আমাদের মাঝে ছিলেন, তাই আনন্দে ভরে উঠেছিল চারপাশ। কিন্তু আজ মা চলে যাচ্ছেন, সেই কষ্টে বুকটা ভরে উঠছে। আবারও এক বছরের অপেক্ষা। প্রার্থনা করি, যেন প্রবাস ও দেশের সব মানুষ শান্তিময় হয়, সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নেমে আসে।’
প্রবাসী সনাতনী ঐক্য পরিষদের প্রেস সম্পাদক স্নিগ্ধা সরকার তিথী বলেন, ‘মা আমাদের ধরাধামে এসেছিলেন আমাদের মঙ্গলের জন্য, অসুর বধ করার জন্য। আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি, যাতে অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির উদয় হয়।’
সনাতন ধর্মাবলীরদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে দেবী দুর্গা স্বামীর বাড়ি কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে পিতৃগৃহে আগমন করেন। পক্ষকাল পর তিনি ফিরে যান স্বামীগৃহে। এ পাঁচ দিন ভক্তরা দেবীর বন্দনা, পূজা ও উৎসবে মেতে ওঠেন। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানালেও অন্তরে থেকে যায় আগামী বছরে তার পুনরাগমনের প্রত্যাশা।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) টানা পাঁচ দিনের পূজা-অর্চনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হলো।
কেকে/ এমএ