# জরিপদলের সদস্যকে হুমকি
# বহাল তবিয়তে ডিসিএফ কায়চার
# নিজের পরিচয় অস্বীকার
বন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কুমিরা রেঞ্জে বিগত ২০২৩-২০২৪ আর্থিক সনে সুফল প্রকল্পে বনায়ন কার্যক্রমে ব্যাপক দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ১৭ অক্টোবর দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকায় ‘চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ, তিন কর্মকর্তার পকেটে সুফল প্রকল্পের টাকা’ এবং গত ৪ নভেম্বর ‘সুফল প্রকল্পের টাকা আত্নাসাৎ, বাগান জরিপ প্রতিবেদন দিতে টালবাহানা’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন দুটি প্রকাশের পর প্রতিবেদক তথ্য আইনে চট্টগ্রাম বন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের কাছে বাগান পুনঃজরিপ প্রতিবেদন চান। তথ্য আইনে তথ্য চাওয়ার পর পরই বাগান পুনঃজরিপ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করে ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগ। গত ২৫ নভেম্বর তথ্য আইনে চাওয়া জরিপ প্রতিবেদন প্রতিবেদকের কাছে প্রেরণ করে ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগ।
এদিকে, জরিপ প্রতিবেদনে বনায়নে দুর্নীতির বিষয়টি সুষ্পষ্ট উঠে আসায় জরিপ দলের এক কর্মকর্তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বন বিভাগের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা। অভিযুক্ত কর্মকর্তা এসএম কায়চার চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক পদে কর্মরত। তিনি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা থাকাকালীন কুমিরা রেঞ্জের ১৮০ হেক্টর বাগান সৃজনের নামে দেড় কোটি টাকার বেশী আত্নসাতের ঘটনা ঘটে। এই আত্নসাতের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন এসএম কায়চার। ওই বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালীন দুর্নীতি করে চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে দুটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি।
এছাড়া নামে বেনামে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। সুফল প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ব্যাপক দুর্নীতির পর চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা পদ থেকে তদবির করে দুর্নীতি আড়াল করতে সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক পদে বদলী হয়ে যান।
এ ব্যাপারে জানতে এসএম কায়চারের মোবাইল ফোন নাম্বারে কল করলে তিনি প্রতিবেদকের নাম শুনে নিজের পরিচয় অস্বীকার করে বলেন, ‘তিনি এসএম কায়চার নন।’
বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কনক বড়ুয়া জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে এসএম কায়চার তার মুুঠোফোন নাম্বারে কল করে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাগানের জরিপ প্রতিবেদন কেন তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হলো এ ব্যাপারে জবাব চান।
কনক বড়ুয়া আরো বলেন, “একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত নিম্নপদস্থ একজন সরকারি কর্মকর্তাকে এভাবে গালিগালাজ করতে পারেন না। ১৮০ হেক্টর বনে শতভাগ চারাগাছ রোপন করার কথা থাকলেও চারাগাছ নেই।” যেটা সত্য তিনি জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া জরিপ দলের সদস্য তিনি একা নন। জরিপ প্রতিবেদনে তিনি ছাড়াও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাসহ আরো সাতজন স্বাক্ষর করেছেন বলেও তিনি জানান।
বাগানের পুনঃজরিপ প্রতিবেদন বলছে, ১৮০ হেক্টর বনে তিন খন্ডে দুই মিটার দূরত্বে শতভাগ চারাগাছ রোপন করার কথা থাকলেও ৭০ হেক্টর বনে জীবিত চারাগাছ মাত্র ৩১.৬৫ শতাংশ। ১০ হেক্টর বনে মাত্র ২১.৬০ শতাংশ। অবশিষ্ট ১০০ হেক্টর বনে শতভাগ চারাগাছ থাকার কথা থাকলেও আছে ৮১ শতাংশ। অধিকাংশ চারাগাছ সদ্য রোপিত বা ছোট, ‘এই শুষ্ক মৌসুমে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’ সুফল প্রকল্পের বিধি ভঙ্গ করে জবরদখল হওয়া বনে খেয়াল খুশি মতো নামমাত্র বনায়নের চিত্র উঠে আসে জরিপ প্রতিবেদনে। এছাড়া ১৮০ হেক্টর বনে বনায়নে অনিয়ম চিহ্নিত করে গত ২২ এপ্রিল বন অধিদফতরের পরিদর্শন ও মূল্যায়ন ইউনিটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা চিঠি দেন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে।
অনুসন্ধান বলছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে কুমিরা রেঞ্জে ১৮০ হেক্টর বনে নামমাত্র চারাগাছ রোপন করে ব্যয় দেখানো হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ৮৮২ টাকা। নার্সারিতে চারা উত্তোলন না করেই ব্যয় দেখানো হয় ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৮০৬ টাকা। ১৮০ হেক্টর বনে শতভাগ বাগান সৃজন না করেও রক্ষণাবেক্ষণের নামে ব্যয় দেখানো হয় ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।
কেকে/এজে