সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ভারী বর্ষণ-বন্যায় মেক্সিকোতে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭      ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
বাড়ছে লাশের মিছিল
খোলা কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:৪১ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের আক্রান্ত ও মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত মশাবাহিত রোগটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩১ জনে দাঁড়াল। 

এ ছাড়া গত একদিনে ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে ৯৫৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরের শুরু দিকে ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বছরের মাঝামাঝি থেকে ঢাকার বাইরে রোগী বাড়তে শুরু করে। 

অপরদিকে, ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয়ও বেড়েই চলছে। ডেঙ্গু চিকিৎসা-সহায়ক সব পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর পড়ছে ডেঙ্গু চিকিৎসার বাড়তি চাপ। দেশে চলমান থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকছে পানি। মশকনিধন কার্যক্রমে আশানুরূপ না হওয়ায় এ উদ্বেগ আরো বাড়ছে। 

গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২ জন মারা গেছেন। পাশাপাশি এ সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে ডেঙ্গুতে একজন করে মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে এই সময়ে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী (১৯৭ জন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৪৭ জন ছাড়াও বরিশাল বিভাগে ১৪১, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২২, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৭, খুলনা বিভাগে ৯৩, রাজশাহী বিভাগে ৬৯, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৬, রংপুর বিভাগে ২৩ এবং সিলেট বিভাগে ৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ২৩০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু (১১২ জন) হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। পাশাপাশি এই সময়ে বরিশাল বিভাগে ৩৩ জন ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১ জন, খুলনা বিভাগে ৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জন এবং ঢাকা বিভাগে ৩ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন।

এর আগে, জুলাই মাসে ১০ হাজার ৬৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১৭৭৩ জন, জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫১ জন এবং আগস্টে ১০ হাজার ৪৯৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে সাতজন, মে মাসে তিনজন, জুন মাসে ১৯ জন, আগস্ট মাসে ৩৯ জন মারা যান। মার্চ মাসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ২৬৯ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ১৯৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৭ জন, খুলনা বিভাগে ৯৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬৯ জন, রংপুর বিভাগে ২৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১৪১ জন এবং সিলেট বিভাগে আট জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ হাজার ৫৪৬ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৮৯ জন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৬৫৭ জন ভর্তি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর। 

দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ বছরে ঢাকার মশা নিধনের নানা পদক্ষেপের পেছনে খরচ হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। গত অর্থবছরে দুই সিটিতে মশা নিধনে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫৪ কোটি টাকা। ডিএসসিসি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশা নিধনে কীটনাশক কিনতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় রাখা হয়। অন্যদিকে উত্তরে প্রায় ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে মশা নিধনে কীটনাশক কিনতে রাখা হয় ৬৫ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন ও পরিবহন, ব্লিচিং পাউডার ও জীবাণুনাশক এবং মশা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি কিনতে বরাদ্দ রাখা হয়।
 
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরে এক কোটি টাকা বাড়িয়ে মশা নিধনে ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ডিএসসিসি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে মশা নিধনে ফগার, হুইল ও স্প্রে মেশিন বাবদ আরো দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে মশা নিয়ন্ত্রণ কাজের জন্য ১৮৭ কোটি টাকা টাকা, মোট বাজেটের ৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ আগের বছরে ছিল ১১০ কোটি টাকা। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন সকাল-বিকাল প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইডিং করা হয়। এ বছর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর জনসচেতনতার কাজে জোর দেওয়া হয়েছে। করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে ছোট ছোট টিম করে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করা হচ্ছে। ওয়ার্ড সচিবদের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আসলে যে যা-ই বলুক শুধু কীটনাশক ছিটিয়ে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যদি তাই হতো নিয়মিত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, লার্ভিসাইড বা কীটনাশক প্রয়োগ করা হলেও কেন মশা কমছে না। আসল সমস্যা এই শহরের কাঠামোতে। কারণ এ শহরে ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, বিল, ঝিল ও খালে পানির প্রবাহ নেই। এসব স্থানে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে পানির ঘনত্ব বেড়ে মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর সবাই সিটি করপোরেশনকেই দোষ দিচ্ছে। 

জানা গেছে, উত্তর সিটিতে মশা নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক সময়ের স্প্রে থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ ছাড়া অনেক ধরনের কমিটি করা হয়েছে। কারিগরি কমিটি, স্পেশাল টাস্কফোর্স কমিটি, ওয়ার্কিং কমিটি, ওয়ার্ড লেভেল কমিটি, এখন আবার নতুন কীটনাশকের গুণাগুণ যাচাইয়ের জন্য কমিটি। এসব কমিটিতে বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। কিন্তু এর পরও মশা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তবে উত্তরে এই মশককর্মীর কার্যক্রম তদারকির জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহযোগিতা নিলেও দক্ষিণ সেটি করেনি বলে জানা গেছে। ডিএনসিসি জলাশয়গুলোতে নোভালরুন ট্যাবলেট ছিটিয়েছে। দুই সিটিতেই জলাশয়গুলোর কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কারেও এবার গতি কম। 

এমন পরিস্থিতিতে মাঝেমধ্যেই ভারি বৃষ্টিতে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের আগে উন্মুক্ত ড্রেন, বক্স-কালভার্টের বর্জ্য যেভাবে অপসারণের প্রয়োজন ছিল, সেখানেও এবার ঘাটতি আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। উত্তরে মশক নিধনের জন্য কিছু হুইলব্যারো মেশিন সংগ্রহ করা হলেও সেগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টেকনিক্যাল কমিটি বুঝে না নিলে কিছু করা যাচ্ছে না। যে যা-ই বলুক বাসিন্দাদের ভোগান্তি আর কমছে না।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  ডেঙ্গু   হাসপাতাল   লাশের মিছিল  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভাইরাল গরুচোর সবুজসহ গ্রেফতার ৫
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস আজ
যখন জনগণ জানে না, তখন গণভোট অর্থহীন
২০ জিম্মিকে আজ মুক্তি দেবে হামাস
অবৈধ্য অস্ত্রের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জরুরি তৎপরতা চাই

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close