রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা      নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল      ইতালির পথে প্রধান উপদেষ্টা      যুদ্ধবিরতির পর গাজায় একদিনে ফিরেছেন ৫ লাখ ফিলিস্তিনি      ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে যোগ দিতে আজ ইতালি যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
বিতর্কের জালে সরকার
প্রণব আচার্য্য
প্রকাশ: রোববার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:০৯ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর না যেতেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে বিতর্ক তত প্রকট হচ্ছে। এমনকি সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এদিকে খোদ প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে, তিনি স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই ব্যাপক জনসমর্থন পেয়ে আসছে। কিন্তু তারা সেই সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে দেশকে স্থিতিশীল ও সংহত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পাশাপাশি কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্বাসের জায়গাটি নষ্ট হয়ে পড়ছে। মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে হতাশা। 

এর মধ্যে সরকারকে নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলামের বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করেছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেছেন, অনেক উপদেষ্টা অভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকই সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন।’ 

এরপরই বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশের রাজনীতি। এর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, কোনো কোনো উপদেষ্টা ও প্রশাসনের কেউ কেউ ‘একটি দলকে’ নির্বাচনে জেতানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে। 

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা বাড়ছে। দু-একজন উপদেষ্টা এবং প্রশাসন গোপনে গোপনে ষড়যন্ত্র করে একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা কেমন যেন একটা চাপের মধ্যে আছে।’ গতকাল শনিবার সকালে খুলনা জেলার পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ঐতিহাসিক ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।  

এর আগে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান আরো গুরুতর অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে পাঁচজন উপদেষ্টা হাত মিলিয়েছেন এবং তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এমন অভিযোগ করেন। রাশেদ খান বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বলেছি, শেখ হাসিনার সঙ্গে পাঁচজন উপদেষ্টা হাত মিলিয়েছে এবং তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।’ 

টক অব দ্য কান্ট্রি ‘সেফ এক্সিট’ : কয়েকজন উপদেষ্টা সেফ এক্সিটের চিন্তা করছেন নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যের পর রাজনীতিতে নতুন ঝড় ওঠে। যদিও কারা সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন, তা খোলাসা করেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নাহিদের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কারা সেফ এক্সিট নিতে চান, নাহিদ ইসলামকে তার প্রমাণ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
 
গতকাল এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আরো দুই উপদেষ্টা। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা জানেন এখন সেফ এক্সিট নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি, আমাদের কারো কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। আমরা গত ৫৫ বছর যে দুঃশাসন দেখলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখলাম, আমরা দেখলাম ব্যাংক লুট করে সাধারণ মানুষের আমানত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ভয়াবহ অসুস্থ আত্মবিধ্বংসী রাষ্ট্র কাঠামো থেকে আমাদের সেফ এক্সিট প্রয়োজন।

এদিকে নির্বাচিত সরকারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক এক্সিট চান বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। গতকাল দুপুরে রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদ আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা নিজেরা সেইফ এক্সিট চাচ্ছি না, স্বাভাবিক এক্সিট চাচ্ছি। দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি আমার ঘরে থাকব; বিদেশে পালিয়ে যাবো না। কারণ, আমার তো দ্বিতীয় কোনো ঘর নেই।’

ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো ইসলামিক রাষ্ট্র নয়; এটি সেক্যুলার রাষ্ট্র এবং আমার সংবিধানও সেক্যুলার। তাই আমাকে সব ধর্মীয় স্থানে যেতে হবে, এটা আমার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। আমি একক কোন ধর্মের উপদেষ্টা নই। এগুলো নিয়ে যারা কথা বলছেন, তাদের অপপ্রচারে কান দেবেন না।’
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের দীর্ঘ সময়ের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যেতে চান। উপদেষ্টাদের পলায়নপর মানিসকতায় সেফ এক্সিট নিয়ে তারা শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর করে বেঁচে যাবে বিষয়টি এমন নয়। শুধু যেনতেন ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে উপদেষ্টাদের দায়মুক্তি সম্ভব নয়। অবশ্যই তাদের জনগণের পক্ষে গণঅভ্যুত্থানে পাওয়া দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উপদেষ্টারা সেফ এক্সিট পেতে পারেন।’ 

বিতর্কে প্রধান উপদেষ্টা : দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রধান উপদেষ্টর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারে আসার  দেড় মাসের মাথায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া ৬৬৬ কোটি টাকা কর পরিশোধের রায় তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শুনানি ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি, যেটি সম্পূর্ণভাবে স্বার্থের সংঘাত। এ ছাড়া ড. ইউনূস ক্ষমতায় বসার পর এখন পর্যন্ত একমাত্র অনুমোদন দেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো, গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য হিসেবে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছোটো ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ। লামিয়া মোর্শেদ আবার ইউনূস সেন্টারেরও পরিচালক।

পিএসপি লাইসেন্স পেয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠান। যেখানে রবি, বাংলালিংকের মতো একাধিক প্রতিষ্ঠানের পিএসপি লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন দীর্ঘদিন ফাইলবন্দি হয়ে আছে।  গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস নামে জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স পেয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নূরজাহান বেগমকে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যক্তিমালিকানা থেকে সরিয়ে সরকারের কাছে জবাবদিহির একটা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আবারও সরকারের মালিকানা ২৫% থেকে কমে ১০%- এ নিয়ে আসা হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে গ্রামীণ ব্যাংকের যাবতীয় আয়ের কর অব্যাহতি দেয় সরকার। এর ফলে হাজার কোটি টাকার বেশি কর মওকুফ পাবে গ্রামীণ ব্যাংক।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  বিতর্ক   সরকার   উপদেষ্টা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আমরা একটি পরিবর্তিত গণমাধ্যম দেখতে চাই : ভূমি সচিব
মুজিবনগরে মেম্বারের ঘুষিতে মেম্বার জখম
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ রাজধানীতে গ্রেফতার
প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ
কুমিল্লা সীমান্তে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মাদক জব্দ

সর্বাধিক পঠিত

ইলিয়াস দুর্গে হঠাৎ হুমায়ুন, সুযোগ সন্ধানে জামায়াত
জাতির খলনায়ক আসিফ
রাজশাহীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে সিনিয়র সচিব মমতাজ
শনিবারের প্রধান প্রধান সংবাদ
নারায়ণগঞ্জে টাইফয়েড টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close