ঘনিয়ে আসছে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনের তফসিল। ফলে ভোটের মাঠে লড়তে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৭৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে- দেশে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে- বাকি আসনগুলো জোটসঙ্গী ও সমমনাদের ছেড়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে ছাড় দিতে পারে শরিকদের বাইরে থাকা ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে। কিছু আসনে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে।
অনেকের মতে- নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত- ইসলামী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তি এনসিপির সঙ্গে বিএনপির কিছুটা দূরত্ব দেখা গেলেও দলগুলোর ভেতরে ভেতরে এক ধরনের বোঝাপড়া চলছে। বিভিন্ন দলের নেতারা বৈঠক করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির একাধিক নেতা জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছেন। সম্ভাব্য সমঝোতা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন। জামায়াতের একটি দায়িত্বশীল সূত্রও জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের যোগাযোগ রয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য ভাঙতে দিতে চান না। রাজনৈতিক মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে হবে। তাই আসন্ন নির্বাচন ঘিরে যেন বিভোদ না বাড়ে তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভেতরগত তৎপরতা রয়েছে। এ জন্য আসন সমঝোতাও হতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক জোট না হলেও আসন সমঝোতার মাধ্যমে বেশ কিছু দলকে ছাড় দিতে পারে বিএনপি। যদিও বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- সমমনা এই ৮ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলগুলোর নেতারা বলছে- তারা আদর্শিকভাবে জোটবদ্ধ না হলেও করবেন নির্বাচনকেন্দ্রিক আসন সমঝোতা।
তথ্য বলছে ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ৭টিতে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। নেতৃত্ব পর্যায়ে বিবেচনায় রয়েছে জোটসঙ্গী, যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদার ও সমমনা দলগুলোর প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হককে ঢাকা-৭ আসনে ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। যদিও তার সম্মতি এখনো পাওয়া যায়নি। খেলাফত মজলিস বর্তমানে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ পাঁচদফা দাবির আন্দোলনে থাকলেও, বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে ঢাকা-১৭ আসনে ছাড় দিচ্ছে বিএনপি। তিনি ইতোমধ্যে এলাকায় পোস্টারও দিয়েছে। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে ঢাকা-১৩ আসনে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। তার নির্বাচনি প্রচারণা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
ঢাকা-৯ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এ আসনে মনোনয়ন চান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তবে এক পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী করার নীতির কারণে তিনি বাদ পড়তে পারেন- দলে এমন আলোচনা আছে। একই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী এনসিপির তাসনিম জারাও আলোচনায় রয়েছেন।
ঢাকা-১০ আসনে আলোচনায় আছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, শেখ রবিউল আলম (রবি) ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। আসিফ মাহমুদ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চাইলেও বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
ঢাকা-২০ আসনে চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে বেশি আলোচনায় রয়েছেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন ও যুবদলের নেতা ইয়াসিন ফেরদৌস (মুরাদ)। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এখন পর্যন্ত ৬৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকার ৭টিসহ সারা দেশের সম্ভাব্য সমঝোতাপূর্ণ আসনগুলো অন্তর্ভুক্ত।
ফলে রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ- নির্বাচনকে ঘিরে সমঝোতা ও ছাড় দেওয়ার কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। বড় দল হিসেবে বহু শক্তিকে মাঠে রাখার লক্ষ্যেই মূলত এমন অবস্থান, যা শেষ সময়ে রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে।
কেকে/এআর