গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অবৈধ কয়লা উৎপাদনের চুল্লি। স্থানীয় বন থেকে নির্বিচারে গাছ কেটে মাটির তৈরি বিশাল চুল্লিতে দিনরাত কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করছে একটি অসাধু চক্র। এতে কালো ধোঁয়া, তীব্র তাপমাত্রা ও বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবেশ—ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজ ফসল ও জনস্বাস্থ্য।
উপজেলার নরোত্তমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় জহিরুল ইসলামের এক বিঘা জমিতে আটটি মাটির চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে একটানা কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। ওই জমিটি মাসিক চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী এলাকার কয়লা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন (৪৭)।
আবুল হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, “আমি কাঠ কিনে এই ব্যবসায় করি। পরিবেশের ক্ষতি হয় কি না জানি না। অনুমতি নাই।’
দেখা গেছে, প্রতিটি চুল্লিতে ২০০-৩০০ মণ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করা হয়, যা পরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় আশপাশের বনের মূল্যবান গাছ কেটে এনে পোড়ানো হচ্ছে। প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একাধিকবার জরিমানা ও উচ্ছেদ করলেও কিছু দিন পরই আবার চালু হয়ে যায় এসব চুল্লি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, অনেক বার বন্ধ করেছে প্রশাসন, কিন্তু আবার রাতের আঁধারে শুরু হয়। ভয়ভীতির কারণে কেউ মুখ খুলতে পারে না।
চুল্লিতে কর্মরত এক শ্রমিক জানান, মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়ো দিয়ে বানানো চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো হয়। এতে প্রচুর কালো ধোঁয়া বের হয়ে আশেপাশের ঘরবাড়ি, ফসল ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে।
নরোত্তমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, “ধোঁয়ায় ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারি না। গলা ব্যথা হয়, নাক-মুখ বন্ধ হয়ে আসে। দ্রুত চুল্লিগুলো বন্ধ করা দরকার।”
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “ধারণা ছিল না ক্ষতি এত ভয়াবহ হবে। এখন পুরো গ্রাম ধোঁয়ার চাপে নাজেহাল। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
অভিযুক্ত কাঠ সরবরাহকারী কাজল বলেন, “চুল্লি চালাতে অনুমতি লাগে কি না জানি না। পরিবেশের ক্ষতি হয় বলেও মনে করি না।”
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না তাসনিম খোলা কাগজকে বলেন, “আমি শিগগিরই যাব। অবৈধ চুল্লিগুলো বন্ধ করে দেব।’
রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোলা কাগজকে বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাটির চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কারণে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে গ্রামীণ পরিবেশ।’’
গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল খোলা কাগজকে বলেন, “অবৈধ কয়লা উৎপাদনের এসব চুল্লি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। খুব শিগগিরই অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ করা হবে।”
কেকে/এমএ