বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ      হংকংয়ে একাধিক আবাসিক ভবনে ভয়াবহ আগুন, নিহত ৪      
খোলাকাগজ স্পেশাল
দেশের ৬ কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য ঝুঁকিতে
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০৭ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বছরের পর বছর অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনো প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ-অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ-অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য যেকোনো ধাক্কায় আবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন-২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২২ এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করেছে ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং আরো ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাদের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশনের মত জরুরি সেবাগুলো পাওয়াটাও সহজ হয়েছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কম অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে। 

২০১০ থেকে ২০২২ সময়ে চরম দারিদ্র্য ১২.২ শতাংশ থেকে কমে ৫.৬ শতাংশ এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭.১ শতাংশ থেকে কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারো দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়ে গেছে। 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৬ সালের পর থেকে তুলনামূলকভাবে কম অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ বদলে গেছে। দেখা গেছে, প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছেন ধনী মানুষেরা, ফলে আয় বৈষম্য বেড়ে গেছে। কৃষির ওপর ভর করে গ্রামীণ এলাকাগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে নেতৃত্বের ভূমিকায় চলে গিয়েছে। একই সময়ে শহরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন বাংলাদেশি শহরে বাস করতে শুরু করেছে। 

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন ‘বহু বছর ধরে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্যের জন্য পরিচিত। কিন্তু পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, জলবায়ু ঝুঁকি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় শ্রম আয়ও কমেছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘প্রথাগতভাবে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি বাড়ানো যাবে না। দারিদ্র্য কমানো এবং মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করার সবচে কার্যকর উপায় হল কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে যুবক, নারী এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের ব্যবস্থা করা। অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চাইলে সবচে জরুরি হবে দারিদ্র্য-বান্ধব, জলবায়ু সহিষ্ণু এবং কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ।’ 

উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি স্থবির, এর বদলে কম উৎপাদনশীল খাতে-কর্মসংস্থান হচ্ছে, এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী এবং তরুণেরা। প্রতি ৫ জন নারীর মধ্যে একজন বেকার, আর প্রতি ৪ জন শিক্ষিত নারীর মধ্যে একজনের কর্মসংস্থান নাই। শহরে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে, কর্মসংস্থান তৈরি একেবারে স্থবির হয়ে গেছে, ফলে শ্রমশক্তির অংশগ্রণ বিশেষ করে নারীদের মাঝে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ অনেক কমে গেছে। ১৫-২৯ বছর বয়সী সব তরুণ-তরুণীদের প্রায় অর্ধেক কম মজুরিতে কাজ করছেন যা শ্রমবাজারে চাহিদা ও দক্ষতার মধ্যে অসঙ্গতির ইঙ্গিত দেয়। 

লাখ লাখ বাংলাদেশির জন্য দরিদ্র অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটি মাধ্যম হচ্ছে অভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন। প্রবাস আয় দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করেছে, তুলনামূলকভাবে গরীব পরিবারগুলো এটা থেকে সবচে বেশি উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু দেশের মধ্যে অভিবাসী হওয়া কর্মীরা শহরের ঘিঞ্জি এলাকাতে জীবন-যাপন করেন যেখানে জীবন যাত্রার মান নিম্ন। আর স্বচ্ছল পরিবার ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসনের সুযোগ নেওয়া যায়না কেননা বিদেশ যাওয়ার খরচ খুবই বেশি। 

যদিও বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বেড়েছে তবে সেখানে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং উপকারভোগী নির্বাচন লক্ষ্যভিত্তিক নয়। দেখা গেছে, ২০২২ সালে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পাওয়াদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই ধনী পরিবার যেখানে অতি দরিদ্র পরিবারের অর্ধেকও এই সুবিধা পায় নাই। তাছাড়া, ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বেশিরভাগ সময়েই লক্ষ্যভিত্তিক হয় না, এমনকি বিদ্যুৎ,জ্বালানী এবং সারে সরকার যে ভর্তুকি দেয় তার সিংহভাগ অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারগুলো পায়। 

দারিদ্র্য এবং বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে এমন ৪টি প্রধান নীতিগত করণীয় চিহ্নিত করেছে এই প্রতিবেদন- উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থানের ভিত্তি মজবুত করা, দরিদ্র এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বেশি করে শোভন কাজের ব্যবস্থা করা, আধুনিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা সহায়ক বিধিবিধান তৈরি করে দরিদ্র-বান্ধব বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং শক্তিশালী রাজস্ব নীতি এবং কার্যকর ও লক্ষভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা শক্তিশালী করা। 
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ এবং প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক সার্জিও অলিভিয়েরি বলেন, ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক বৈষম্য বিশেষ করে পূর্ব-পশ্চিমের বৈষম্য বেশ কমিয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আঞ্চলিক বৈষম্য বিশেষ করে শহর ও গ্রামের বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দারিদ্র্য মূল্যায়ন দেখিয়েছে যে উদ্ভাবনী নীতি গ্রহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, শহরে গুণগত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিতে দরিদ্র-বান্ধব মূল্য-শৃঙ্খল নিশ্চিত করা এবং কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসের গতি পুনরুদ্ধার ও ত্বরান্বিত করতে পারে এবং সমৃদ্ধিতে সবার অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে পারে।’

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

একান্নবর্তী ভাঙছে, কৃষি জমি কমছে
কাপাসিয়ায় অবৈধ কয়লা চুল্লি পুনরায় চালু, পরিবেশ বিপর্যস্ত
শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড
গোয়ালন্দে ফেরি থেকে জুয়ারি চক্র আটক
দারিদ্র্য বৃদ্ধির আশঙ্কা, নীতি সংস্কারে জোর দিন

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির মহাসমাবেশে লাখো মানুষের ঢল
চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বিএনপি'র প্রার্থী পরিবর্তনের দাবীতে ফটিকছড়িতে মশাল মিছিল
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
বেনাপোলে বিজিবি'র অভিযান, চোরাচালান পণ্যসহ আটক ২
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close