বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড      শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
একান্নবর্তী ভাঙছে, কৃষি জমি কমছে
কাজী বনফুল
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৭ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

একান্নবর্তী পরিবারের গল্প আমরা সবাই কম বেশি জানি। কারণ আমাদের সবার পূর্ব ইতিহাস এই একান্নবর্তীরই ইতিহাস বিভাজনের ইতিহাস তো এই সাময়িক আধুনিকতা নামক একাকিত্মের প্রবেশের সঙ্গেই ঘটেছে। একান্নবর্তী বাংলার এক চিরচেনা ঐতিহ্যের অংশ। যেখানে পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে একত্রে বসবাস ও এক চুলোয় রান্না চড়িয়ে এক সঙ্গে খাওয়ার ঐতিহ্যকেই বোঝায়। বাংলার বঙ্গীয় সংস্কৃতির এ এক বিরাট সমৃদ্ধির ঐতিহ্য; যা কালচক্রে হারিয়ে যাচ্ছে। 

প্রযুক্তি ও আধুনিকতার প্রবেশ- পরিসরের সঙ্গে সঙ্গে একান্নবর্তী পরিবারগুলোও ভেঙে পৃথক পৃথক পরিবার হয়ে গড়ে উঠছে। 

মানুষ একটি পরিবার হয়ে কখনোই এক সঙ্গে থাকতে পারে না তাকে সময়ের পরিক্রমায় পৃথক হতেই হয় সে পরিবার থেকে সম্পর্কের শাখা-প্রশাখা গজিয়ে আবার একান্নবর্তী পরিবার হয়ে ওঠে এভাবেই চলছে মানব সভ্যতার আদি যাত্রা। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে খুব দ্রুতই একান্নবর্তী পরিবার গুলো ভেঙে একক পরিবারে রূপান্তরিত হচ্ছে যেটা আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই ভাবনার বিষয়। 

আমাদের দেশের যে আয়তন সে আয়তনের তুলনায় আমাদের কৃষি জমি অত্যন্ত সীমিত ও অল্প। ক্রমাগত এই একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি জমির উপরেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাড়ি যেসব বাড়িতে সদস্য সংখ্যা মাত্র দুই থেকে চারজন কিন্তু বাড়ির আয়তন কিন্তু বড়সড় কম নয় যেখানে বাস করতে পারে এক সঙ্গে আরো অনেক মানুষ কিন্তু সেটা আর এখন সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ এখন আর একত্রে একান্নবর্তী পরিবারে থাততে চাচ্ছে না অল্প স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মনোমালিন্যের কারণেই ভেঙে যাচ্ছে পরিবারগুলো। স্বার্থ, ইগো, ও একে- অপরকে বোঝার কেমিস্ট্রিতে ধরেছে মরিচা। অতি অল্প কারণে মানুষ মানুষের থেকে বিভাজিত হয়ে বেছে নিচ্ছে একা মরুর জীবন।

আত্মস্বার্থ মানুষের সাব-কনশাস মাইন্ডের ফার্স্ট সার্ভাইভাল জ্ঞান যা মানুষ নিজের অজান্তেই সৃষ্টির শুরু থেকে ধারণ করে এ পর্যন্ত যাত্রা সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এই আত্মস্বার্থ যখন কোনো প্রকার বিশেষ জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই সমাজের সর্বত্রকে মহামারির মতো গ্রাস করে তখন সে সমাজ একটি স্বার্থপর ও দূষিত সমাজে প্রবর্তিত হয়। মানুষের একাত্মভাবে বাঁচার ইতিহাসই মানুষকে আজকের এই সভ্যতা বা আধুনিক বিশ্বের এখানে এনে পৌঁছেছে কিন্তু মানুষ আজ তার সবচেয়ে নিকটবর্তী মানুষের সঙ্গেই দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে একে অপরের কাছ থেকে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি জমির ওপর। ক্রমাগত হারে কমছে কৃষি জমি বাড়ছে একক বিচ্ছিন্ন পরিবার ও ঘরবাড়ির সংখ্যা যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য রেড সিগন্যাল স্বরূপ।

যেভাবে পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে তাতে সম্মুখ সময়ে কৃষি জমি আরো ব্যাপক হারে কমে গিয়ে বসতভিটায় পরিণত হবে এতে সন্দেহ নেই যার সামগ্রিক প্রভাব দেশের অর্থনীতির স্তম্ভে ব্যাপক আকারে আঘাত করবে কারণ কৃষি জমির পরিমাণ যত কমবে দ্রব্যের দাম বা সংকট তত বেশি বাড়বে। 

এ বেশি দিন আগের কথা নয় যখন একটি ডিম ভেজে পরিবারের সবাই সেই ডিমকে একটু একটু করে ভাগ নিয়ে ভাতের সঙ্গে ঘ্রাণ মেখে খেয়েছে তবও রেষারেষি বা সম্পর্কের অবনতি বিভাজনের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়নি কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে অতি নিকটজনের সঙ্গে অতিনিকট জনের সামান্য একটু কথার কারণে একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে একা থাকতে চাচ্ছে। কিন্তু বাংলার যে চিরাচরিত রূপ সেখানে আমরা যদি ফিরে তাকাই তাহলে দেখব আগের সময়ে কথা-কাটাকাটি, মনোমালিন্য, অভাব অনটন আরো বেশি পরিমাণে ছিল কিন্তু সহজে কেউ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। এক পাতিলের ভাতের ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে কেউ সহজে বিভাজনের চিন্তা করেনি কিন্তু এখন অতি অল্প কারণেই ভেঙে যাচ্ছে পরিবার ভেঙে যাচ্ছে পরিবার নামক বন্ধনের ক্ষেত্রভূমি। 
আমাদের অঞ্চলেই দেখেছি যেখানে এক সময় দেখতাম ধান, গম, পাটের সবুজাভ-হলুদের সংমিশ্রণের সৌন্দর্য সেসব স্থানে এখন গজিয়ে উঠেছে অজস্র উইয়ের ঢিবির মত বসতভিটা। ধানি ও ফসলি জমিগুলোতে গড়ে উঠছে বাড়ির পর বাড়ি। মানুষ বাড়ছে, বাড়ি বাড়ছে কিন্তু জমি কিন্তু বাড়ছে না বরং কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমছে যা আমাদেরকে ভাবিত করছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে। 

মানুষের এক সঙ্গে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সেক্রিফাইস মাইন্ড। যা মানুষকে একতাবদ্ধ হয়ে বাঁচার পথ বাতলে দেয়। মানুষের সম্পর্ক ও পরিবারের এই ভাঙন যদি রোধ করা না যায় তাহলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের অঞ্চলের কৃষি জমিগুলো বাড়িভূমি হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তাই সবার সম্মিলিত সমর্থিত বোধ জাগরণের মধ্যে দিয়েই কেবল এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যত তাড়াতাড়ি এ সমস্যার সমাধান হবে ততই আমাদের জন্য মঙ্গলকর হবে।

লেখক : কলামিস্ট

কেকে/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  একান্নবর্তী পরিবার   ভাঙন   কৃষি জমি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দ্বিতীয় বারের মতো ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-মার্কিন দ্বৈরথ
বয়ান শিল্পাঙ্গনের তৃতীয় নাট্য কর্মশালা ৩০ নভেম্বর থেকে
অস্থিতিশীল বিদ্যুৎ খাত : উত্তরণের উপায়
প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড

সর্বাধিক পঠিত

চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
ধামরাইয়ে সাত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ১৫ লাখ জরিমানা
বিএনপি যে কথা দেয় সে কথা রাখে : নাসিরুল ইসলাম
বুধবারের আলোচিত ছয় সংবাদ

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close