বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ      হংকংয়ে একাধিক আবাসিক ভবনে ভয়াবহ আগুন, নিহত ৪      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
ফুটবলের মহানায়ক ম্যারাডোনা
মো. কায়ছার আলী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ৬:৫৯ পিএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

“এটা ভয়ানক সংবাদ, এই সংবাদ সহ্য করা কঠিন। আপনি আমাদেরকে বিশ্বের শীর্ষে নিয়ে গেছেন। অসীম আনন্দ দিয়েছেন। আমরা আপনার কাছে ঋণী। রাজ্যের সব দুয়ার আপনার জন্য খোলা। আপনি সর্বকালের সেরা ছিলেন। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাকে ভীষণ মিস করব”। কথাগুলো এভাবেই বলেছিলেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফান্দাদেস। “দেখা হবে বন্ধু স্বর্গে। হয়তো একসাথে ফুটবলও খেলবো”- পেলে। এমনি অনেক হৃদয়স্পর্শী শোকবাণী টুইট করেছেন সাধারণ ও অসাধারণ সব মানুষই। যাঁর জন্য, আর তিনি হলেন ডিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা (১৯৬০-২০২০)। 

তিনি এখন অতীত। আর কখনো তাঁকে নীল আকাশী ১০ নম্বর জার্সি পরিহিত অবস্থায় এ পৃথিবীর কোন প্রান্তেই দেখা যাবে না। ঘুমের মধ্যেই হার্ট-এ্যাটাক করে তিনি ২৫ শে নভেম্বর চিরঘুমে চলে গেছেন। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে ফুটবল ঈশ্বর আজ চিরকালীন ঈশ্বরের কাছে। তবে তাঁর এ অকাল মৃত্যু প্রমাণ করে তিনি ছিলেন সবার। ইতিহাসের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট শৈশবে যে ফুটবল আঁকড়ে ধরে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই ফুটবল তাঁকে অমরত্বের পাশাপাশি জগৎ জুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। দর্শকেরা সেই সময় তাঁর খেলা দেখে বলত “ফিওরিতো” মানে ফুলের মত সুন্দর। স্বপ্নের ফুটবল, সৃষ্টিশীল মাঠ, অনন্য অসাধারণ ফুটবল শৈলী তাঁকে ফুটবলের রাজপুত্র বানিয়ে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখলেন। 


মাঠের রাজার সৃষ্টিশীলতায় মাতোয়ারা হয়েছে ফুটবল প্রেমীরা, জাদুকরী নান্দনিকতায়, ঐন্দ্রজালিক ফুটবলে গোটা বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা ছিল তাঁর। সবাই তারকা হয় না, মহাতারকা কদাচিৎ জন্মায়। তারকারা অনুপ্রেরণা জোগায়, মহাতারকারা প্রেরণাশক্তি অনেক বেশি। তিনি ফুটবল খেলতেন পা, হাত আর মাথা দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে। ছোট ছোট পা দিয়ে খুব দ্রুত দোঁড়াতে পারতেন। খুব অল্প জায়গায় (একটি রুমালের আঁকারের সমান) তিনি ঘুরে যেতে পারতেন। ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে অভীষ্ট গোল আদায়ে তিনি ছিলেন পটু। বল তাঁর পায়ের সঙ্গে চুম্বকের মত লেগে থাকত। প্রতিপক্ষের দুইচারজন ফুটবলারকে পাশ কাটিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন। একবার তাঁর সতীর্থ ক্যানিজিয়াকে বল তৈরী করে দিয়ে গোল করিয়েছিলেন, যা বিশ্ববাসী দেখেছে। জাদুকরী নৈপূন্যে মনে হত পায়ের পিছনের অংশ সামনের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে চারদিকে তাঁর নাম। তাঁর নেতৃত্বেই সেই বিশ্বকাপে তাঁর জন্মভূমি শিরোপা জিতেছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খুব সুচতুরভাবে তা দিয়ে গোল দিয়ে তিনি নিন্দিত হয়েও বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন সেটা ছিল “হ্যান্ড অব গড”। খানিক নিন্দিত হলেও নন্দিত হতে বেশি সময় তাঁর লাগেনি। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে পূনরায় আরেকটি গোল করেন যেটি ছিল অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয়। পাঁচজন ইংলিশ খেলোয়াড়কে পাশ কাটিয়ে গোলরক্ষকে বোকা বানিয়ে তাঁর সেই গোলটি ছিল শতাব্দীর সেরা গোল। যা ফিফা ২০০২ সালে জরিপ করে। 


১৯৮৬ সালেই তিনি সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল পান এবং ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ফুটবলের জাদুর মায়ায় তিনি দুনিয়ার মানুষকে একসুতোয় বেঁধেছিলেন। লাতিন আমেরিকা থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ থেকে এশিয়া। পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ টিভির সামনে তাঁর খেলা দেখে অভিভুত হয়েছিলেন। তাঁর খেলায় উতঙ্গ আবেগের ঢেউ দর্শককে ভাসিয়ে নিয়ে যেতো। যতদূর মনে পড়ছে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো ১৯৯০ সালে পশ্চিম জার্মানীর বিপক্ষে ছিল আর্জেন্টিনা। তখন সারা দেশবাসী কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছিল আর্জেন্টিনার বিজয়ের জন্য যতটা নয় বরং তার চেয়েও বেশি ম্যারাডোনার জন্য। সেই খেলায় বাজে রেফারিং বা রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পশ্চিম জার্মানী একটি পেনাল্টি পায়। আর তাতেই নির্ধারিত হয়ে যায় জয় পরাজয়। সে পরাজয়ের জন্য ম্যারাডোনার চোখের পানি মানুষের হৃদয়ের সিংহাসনে তাঁকে চির আসীন করে। হেরে গিয়েও মনে হয় যেন তিনি জিতে যান। সব পরাজয় পরাজয় নয়, আবার সব জয় বিজয় নয়। কারবালায় সীমারের বিজয় মোমিন মুসলমানদের কে আজও কাঁদায়। আর পলাশীর পরাজয়ের জন্য এ অঞ্চলের মানুষ মীরজাফরকে ঘৃণা করে। 

ম্যারাডোনার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আনন্দ বেদনার বহু স্মৃতি। ফুটবল নৈপূন্যে তিনি ছিলেন সেরাদের সেরা। ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্কিত হলেও বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের উম্মাদনা তাঁর প্রতি এতটুকু কমেনি। ভক্তরা কখনো চাঁদের কলঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামায় না। ১৯৯৭ সালে তিনি জাতীয় দলকে বিদায় জানালেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাতীয় দলের কোচ। 


২০ বছরের ক্যারিয়ারে ৯১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তিনি গোল করেছেন ৩৪টি। বিশ্বকাপে একুশ ম্যাচে তার গোল ছিল ৮টি। ফুটবল মানে আবেগ এবং স্পন্দনের নাম। মানুষের বুকে কান পাতলে শোনা যায় ফুটবলের শব্দ। পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে গান রচিত হয়েছে। পেলে অথবা ম্যরাডোনা কে সেরা? এই বিতর্কের চির অবসান হয়েছে ২০০০ সালের ফিফার অনলাইন জরিপে। শতাব্দির সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন বিপুল ভোটে ম্যারাডোনা। 

যতদিন বিনোদনের জন্য ফুটবল থাকবে, ফুটবল থাকলে গোল থাকবে, আর গোল থাকলে ততদিন ম্যারাডোনার নাম থাকবে। তিনি বিশ্বজয়ী, মহাতারকা এবং কিংবদন্তী হলেও যমদূতের কাছে পরাজিত। জীবন মানেই পরাজিত। যেই বাবা মায়ের মাধ্যমে এই ধরণীতে তাঁর আগমন, কোলে পিঠে বড় হওয়া সেই তাঁদের পাশেই আজ তিনি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে “বেইয়া ভিস্তা” সমাধিস্থলে চিরনিদ্রায় সমাহিত। সারা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের মতো একজন ফ্যান হিসেবে ম্যারাডোনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর একটি উক্তি লিখে শেষ করছি- “মরে গেলে আবারও জন্ম নিতে চাই এবং একজন ফুটবলার হতে চাই”। 

লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট 

কেকে/ এমএস

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

একান্নবর্তী ভাঙছে, কৃষি জমি কমছে
কাপাসিয়ায় অবৈধ কয়লা চুল্লি পুনরায় চালু, পরিবেশ বিপর্যস্ত
শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড
গোয়ালন্দে ফেরি থেকে জুয়ারি চক্র আটক
দারিদ্র্য বৃদ্ধির আশঙ্কা, নীতি সংস্কারে জোর দিন

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির মহাসমাবেশে লাখো মানুষের ঢল
চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বিএনপি'র প্রার্থী পরিবর্তনের দাবীতে ফটিকছড়িতে মশাল মিছিল
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
বেনাপোলে বিজিবি'র অভিযান, চোরাচালান পণ্যসহ আটক ২

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close