রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উপলক্ষে পাখির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাইকেল র্যালি ও পথসভা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের সিমলা পার্ক এলাকায় এই কর্মসূচি পালিত হয়।
পাখির প্রতি ভালোবাসা শীর্ষক এই আয়োজন করে রাজশাহীর কয়েকটি পরিবেশবাদী ও যুব সংগঠন।
ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস), বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম, বারসিক, সবুজ সংহতি, ০.৬ গ্রাভিটি রাইডার্স ও সেভ ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচার যৌথভাবে এই সাইকেল র্যালি ও পথসভার আয়োজন করে।
পথসভায় বক্তারা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পরিযায়ী পাখির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তারা বলেন, ‘পরাগায়ন, বীজ বিস্তার ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে পরিযায়ী পাখিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা কৃষি ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই উপকারী।’
বক্তারা জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে জানান, বিশ্বের প্রতি পাঁচটি পরিযায়ী প্রজাতির মধ্যে একটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে এবং অর্ধেকেরও বেশি প্রজাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা আবাসস্থল ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, জলাভূমি ধ্বংস, আলোক দূষণ, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেন।
রাজশাহীর সিমলা পার্কের জীববৈচিত্র্য নিয়েও আলোচনা হয়। এখন পর্যন্ত এই পার্কে ২০০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৪ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৩ প্রজাতির উভচর প্রাণী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিছু প্রজাতি শুধু সিমলা এলাকাতেই পাওয়া যায় এবং কয়েকটি প্রজাতি বিপন্ন বা অতি বিপন্ন।
পথসভায় পরিবেশকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশে আইন থাকা সত্ত্বেও তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।’
মানুষ হত্যার বিচার হলেও গাছ, পুকুর ও পরিবেশ হত্যাকারীদের বিচার কেন হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
পথসভায় উত্থাপিত ৬ দফা দাবি:
রাজশাহীর সিমলা পার্কসহ সমগ্র পদ্মাপাড় ও চরকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে হবে এবং এসব এলাকায় সাউন্ড বক্স, আলোর ব্যবহার ও প্লাস্টক পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে; পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল, যেমন খাল, বিল, নদী, পুকুর ও জলাশয় দখলমুক্ত রাখতে হবে এবং পাখির শিকার বন্ধ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; কারেন্ট জালের ব্যবহার ও উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে; রাজশাহীতে চলমান বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে এবং শহরের অবশিষ্ট গাছগুলোকে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখির আবাসস্থল হিসেবে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণা করতে হবে; নগরীর পুকুর হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং যারা একই পুকুর বারবার ভরাটের চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং রাজশাহী বিভাগের পুকুর, খাল, বিল ও নদ-নদীর পাড়ে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে এবং সেগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ইয়্যাস’-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন, বারসিকের বরেন্দ্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ওয়ালিউর রহমান বাবু, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) ভলান্টিয়ার জারিফা জান্নাত, সেভ ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচারের সভাপতি মো. ইমরুল কায়েস।
কেকে/ এমএ