পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে মারাক্তক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। উপজেলার ৪ লাখ লোকের জন্য বর্তমানে ডাক্তার রয়েছে মাত্র ৪ জন, ২১টি পদ শূণ্য।
জানা যায়, বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু ১৫ বছরেও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাই ধুকে ধুকে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২জন। ৮টি পদই শূন্য। মেডিকেল অফিসার এবং সহকারী সার্জনসহ ২৫ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৪ জন। হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকার কথা ৫ জন তবে বর্তমানে আছেন মাত্র একজন। ২ জন আয়া থাকার কথা থাকলেও ২ টি পদ এখনো শূন্য। নিরাপত্তা প্রহরী দুজন থাকার কথা থাকলেও এ পদও শূন্য। বাবুর্চি দুজনের বিপরীতে আছে একজন। ওর্য়াড বয় ৩ জনের মধ্যে আছে মাত্র একজন। স্টোর কিপারের পথটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। মালির পদ শূন্য। এছাড়া মাঠপর্যায় টিকা দানের জন্য স্বাস্থ্য সহকারী ৮৫ জনের মধ্যে আছে ৬৪ জন। ২১ পদ এখনো শূন্য।
শুধু তাই নয়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আলাদা চিকিৎসক না থাকায় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি ওয়ার্ড বয়রাও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় ব্যান্ডেজ সেলাইসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপাচার পিয়ন ও ওয়ার্ডবয়রা করে থাকেন। ফলে সব সময় রোগীরা মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন। পাশাপাশি ৫০ শয্যা হাসপাতাল হিসাবে খাদ্য বরাদ্দ পাওয়া গেলেও চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্রসহ চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল সংকট রয়েছে।
এদিকে হাসপাতালটিতে অধিকাংশ সময় ইনডোরে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী সেবা নিতে আসে। শয্যার তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে মেঝে বা বারান্দায় থাকতে হয়।
অপরদিকে হাসপাতালের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটটি ১০ বছর ধরে অচলাবস্থায় রয়েছে। সচল করার কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে পুরো হাসপাতালটি অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে পরে। সরকার এ হাসপাতালে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে মা ও শিশু বিভাগ চালু করলেও বর্তমানে তা মুখ থুবরে পড়েছে। এছাড়া গাইনী সার্জন না থাকায় সিজার করা যাচ্ছেনা। ফলে অপারেশন থিয়েটারটি ১০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। মাঝে মাঝে প্রসূতির নরমাল ডেলিভারী করানো হয়।
উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের ৩ ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩টি ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ১১ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোতে নানা সংকট বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে অনেকটা হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালের শূণ্য পদ পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার আবেদন করা হয়েছে। কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি দ্রুত শূণ্য পদগুলো পূরণ করে উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
কেকে/ আরআই