# রাজধানীতে দুর্ধর্ষ চুরি, খোয়া গেছে ৫০০ ভরি স্বর্ণ# জুয়েলারি দোকানের নিরাপত্তায় পুলিশকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে : আনোয়ার হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলারি উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতিআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির মধ্যেই দেশে বেড়েছে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা। বিশেষ করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া সারা দেশেই বিক্ষিপ্তভাবে চলছে চুরি ও ডাকাতি। সম্প্রতি রাজধানীর মৌচাকের একটি শপিংমলে এবং মাদারীপুরের শিবচরে একটি বাড়িতে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ জুয়েলারি উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা সত্যিই শঙ্কিত। এটা বারবার আমরা বলি, যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও বলি, নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করেত।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্বর্ণ এমন একটা জিনিস, যার মূল্য পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। ফলে এর প্রতি সবসময়ই চোখ দুর্বৃত্তদের। তারা সব সময় স্বর্ণ লুণ্ঠনের চেষ্টায় থাকে। তাই যেসব মার্কেটগুলোতে জুয়েলারি দোকান আছে, সেসব মার্কেটের নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া বাইরের কোনো লোক যেন সিকিউরিটির অগোচরে বা তাদের যোগসাজশে কোনো কিছু করতে না পারে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে কঠোর নির্দেশনা থাকতে হবে। না হলে শুধু ডাকাতি নয়, প্রাণহানির মতো মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’
গত বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর মৌচাক মোড়ের ফরচুন শপিংমল থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার চুরি হওয়ার অভিযোগ তুলেছে সেখানকার শম্পা জুয়েলার্স। দোকান মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসের ভাষ্য, দোকান থেকে মোট ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়েছে চোর চক্রের সদস্যরা।
ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই চুরির ঘটনা। সেখানে দেখা যায় দুজনই কালো রঙের বোরকা পরা। মুখ ঢাকা দুজনেরই। তাদের সঙ্গে আছে নানা সরঞ্জাম, যা দিয়ে তালা ভাঙা যায়। দুজনের কারো পায়ে জুতা নেই। তারা সতর্কতার সঙ্গে গুটিগুটি পায়ে করিডর ধরে এগিয়ে আসেন শম্পা জুয়েলার্সের দিকে। শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেট দেখিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে কিছু বলেন। ঘড়িতে তখন সময় রাত ৩টা ৭ মিনিট। ৯ অক্টোবর ২০২৫। মার্কেটের করিডরে আলো জ্বলছে। সব দোকান বন্ধ। শম্পা জুয়েলার্সের একপাশের কোনায় জায়গাটিতে এসে বোরকা পরা দুজনের সামনের জন থেমে যান। উঁকি দিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখেন, কেউ আছে কি না। একপর্যায়ে তারা করিডরের যেদিকে আলো কিছুটা কম, সেদিকে গিয়ে শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের তালা ভাঙার কাজে লেগে পরেন। মাঝে একজন সেখানে থাকা ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন।
শম্পা জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘গত বুধবার রাত নয়টার দিকে তিনি ও তার কর্মচারীরা দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান। আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দোকানে যান। গিয়ে দেখেন, তার সবকিছু শেষ। দোকানের তালা ভাঙা। দোকানে থাকা ৪০০ ভরি নিজস্ব স্বর্ণালংকার এবং ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা নেই। এ ছাড়া দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকাও নেই। সব চুরি হয়ে গেছে।’
ঘটনার সঙ্গে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস।’
বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার বেশি। সে হিসাবে অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসের দোকানের ৪০০ ভরি নিজস্ব স্বর্ণালংকারের দাম ৮ কোটি টাকার বেশি বলে জানালেন তিনি। এ ছাড়া ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা চুরি হওয়ার আর্থিক ক্ষতি তো আছেই।
চুরির খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, চুরি হওয়া সোনার পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। তবে তারা শপিং মলের সব কটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা করছে।’
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, শপিং মলের পেছনের তৃতীয় তলার জানালার গ্রিল ভাঙা। ধারণা করা হচ্ছে, এখান দিয়েই চোর শপিং মলের ভেতরে ঢোকে। পরে তারা দ্বিতীয়তলার শম্পা জুয়েলার্সের ফটক ভাঙে। দোকানের ভেতরে ঢুকে শোকেসে রাখা স্বর্ণালংকার তারা চুরি করে নিয়ে যায়।’
শপিং মলের সব কটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান গোলাম ফারুক।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি জুয়েলারি দোকানের দেওয়া কেটে প্রায় ১২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ পৌনে ৩ লাখ টাকা চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে এক সংবাদকর্মীর বাসায় তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসময় তার পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলামের বাসায়ও চুরি হয়। ঘটনায় মোট ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ২৫ হাজার টাকা খোয়া গেছে।
ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী অপূর্ব দাস অপু মাইটিভির শিবচর উপজেলার সাবেক প্রতিনিধি। বর্তমানে তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত। অপর ভুক্তভোগী মঞ্জুরুল ইসলাম শিবচর বাজারে হার্ডওয়্যার ব্যবসায় করেন।
ভুক্তোভোগী অপূর্ব দাস অপু জানান, তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ গত ১৫ দিন ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। সকালে প্রতিবেশী মঞ্জুরুল ইসলাম তাকে ফোন করে দুইটি ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভাঙা এবং ঘরের মালামাল এলোমেলো থাকার বিষয়টি জানান। এরপর তিনি তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিরবকে বাসায় পাঠান। নিরব গিয়ে দেখে, বাসার দরজার লক ভাঙা এবং ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো। পরে খোঁজ করে দেখা যায়, ঘরে রাখা প্রায় ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়ে গেছে।
অপর ভুক্তভোগী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাই। আজ দুপুরে বাসায় এসে দেখি ঘরের দরজার তালা ভাঙা। পরে ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখি আলমারি ও ওয়ারড্রব ভাঙা। চোর চক্র আলমারির মধ্যে থাকা আমাদের ৫ ভরি স্বর্ণ ও ২৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।’
শিবচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কাশেম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।