রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল      ইতালির পথে প্রধান উপদেষ্টা      যুদ্ধবিরতির পর গাজায় একদিনে ফিরেছেন ৫ লাখ ফিলিস্তিনি      ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে যোগ দিতে আজ ইতালি যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা      ইলিয়াস দুর্গে হঠাৎ হুমায়ুন, সুযোগ সন্ধানে জামায়াত      জাতির খলনায়ক আসিফ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
বাংলাদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বাস্তবসম্মত নয়
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:২৮ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

# সংসদীয় ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে
# গণতন্ত্রের চর্চা না হলে উচ্চকক্ষ-নিম্নকক্ষ করে লাভ হবে না: বদিউল আলম
# দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে : আখতার হোসেন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন বাস্তবসম্মত নয় বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি মনে করে, কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ছাড়া শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যকর জবাবদিহি আনতে পারবে না। তাই বিদ্যমান এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থাকেই আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করা জরুরি। এ ছাড়া গণতন্ত্র, আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও আইনবিষয়ক সংসদীয় কমিশন গঠনের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা যেতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে এ আহ্বান জানান সিপিডির গবেষকরা। ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই গবেষণার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। গবেষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালনক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর নিজাম আহমেদ। বিভিন্ন দেশের সংসদীয় চর্চা ও জবাবদিহিতার কাঠামো বিশ্লেষণ করে সিপিডি তাদের সুপারিশমালা প্রকাশ করেছে। 

ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণের সময় জনগণের মূল প্রত্যাশা ছিল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তার মতে, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ বা ভারসাম্য রক্ষার কাঠামো কার্যকর করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘গত ৫০ বছরে দেশে ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতি কার্যকরভাবে কাজ করেনি। বাস্তবে এই সিস্টেমটি আমাদের প্রেক্ষাপটে সঠিকভাবে কার্যকর হয় না।’

উদাহরণ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছেÑকমিটি গঠন করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী দলের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারও আনা হয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগের পরও কাক্সিক্ষত ফল আসেনি।’

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘১৮৬২ সালের বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল থেকে শুরু করে ১৯৭২ সালের সংবিধান পর্যন্ত এই ভূখণ্ডকে একটি ভাষা ও সংস্কৃতিগতভাবে একক ও সমজাতীয় সমাজ হিসেবে দেখা হয়েছে। তাই ঐতিহাসিকভাবে একক সংসদ ব্যবস্থা এখানেই বেশি প্রাসঙ্গিক।’

সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বেশ কিছু সংস্কার ধারণা যেমন, বাইক্যামেরালিজম, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বা নিয়োগ কমিটি গঠনÑএগুলো নীতিগতভাবে আকর্ষণীয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসব কার্যকর নয়। এতে বরং জবাবদিহি বা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বদলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা, প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ছাড়া শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যকর জবাবদিহি আনতে পারবে না বলে মনে করে সিপিডি। তাই উপরের কক্ষ গঠন না করে বিদ্যমান সংসদকেই কার্যকর করার ওপর জোর দিতে হবে।

সংসদীয় ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কয়েকটি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। এর মধ্যে রয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতে বিরোধীদলীয় এমপিদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ, রাজনৈতিক দলের তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকারকে আর্থিকভাবে আরও স্বনির্ভর করা, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং দলত্যাগ রোধে আইনি সংস্কার।
সিপিডির গবেষণায় আরও বলা হয়, সংসদের আগে-পরে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় পরামর্শ ও মূল্যায়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে আইনবিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনের’ আদলে এই কমিশনের নাম হতে পারে ‘গণতন্ত্র, আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও আইনবিষয়ক সংসদীয় কমিশন’।

এই কমিশন সংবিধান, আইন ও প্রশাসনিক নীতিমালা শক্তিশালী করা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং স্থানীয় সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে বিকশিত করার কাজ করবে বলে সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়।

ঐক্যমত কমিশনার সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলে উচ্চকক্ষ-নিম্নকক্ষ বাস্তবায়ন করেও খুব লাভ হবে না। ঐক্যমত মানেই সবার একমত হওয়া। আর সেটা কোনভাবেই সম্ভব না। বিভিন্ন মত থাকবে এর মধ্যেই ঐক্য খুঁজতে হবে।  
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছিলেন কিন্তু স্বৈরাচারী ব্যবস্থা তাকে দানবে পরিণত করেছে। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য যদি তৈরি করতে পারি দানবীয় ব্যবস্থা রোধ করতে পারি তাহলে আর ভবিষ্যতে কাউকে ফ্যাসিস্ট হতে হবে না।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্য আরো বলেন, ‘উচ্চকক্ষ থাকলে শেখ হাসিনার পক্ষে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী সম্ভব হতো না। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা দানব হয়ে উঠেছিল। সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে কোনো একক দল যাতে আর একক সিদ্ধান্ত নিতে না পারে জন্য উচ্চকক্ষ করা। ফলে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলে ক্ষমতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেছেন, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চায় না। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হতে চায় না, কেউ মেম্বার হতে চায় না। সবাই এমপি হতে চায়। এখন এমপিদের ক্ষমতার কতটুকু থাকবে সেটাও কিন্তু আমাদের ভেবে দেখার দরকার।’

শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আপনি এমপিদের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে নেন, কেউ আর এমপি হতে চাইবে না। আপনি এখন রাস্তা দিয়ে যান, শুধু দেখবেন আমি এমপি হতে চাই, পাঁচ-ছয়টা ছবি পোস্টারে। সবাই শুধু এমপি হতে চায়।’

সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘১৭ বছর ধরে যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে গেছে, তারা মনে করেছে তাদের রাইট তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। পার্লামেন্টে এমপিদের কেন গাড়ি আনতে হবে, তারা কেন গাড়ি বিদেশ থেকে পাবে, তাদের কথায় কেন তাদের লোকাল প্রশাসনের কর্মকর্তারা চলবে?’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সংবিধান সংশোধন দেশের মানুষকে ভুগিয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হয় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তে। বাংলাদেশে স্বৈরশাসন চলে আসা এবং ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হয়েছে এ শাসন পদ্ধতিতে। পিআর পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে এর অবসান সম্ভব।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘কোনো দল যদি নিম্ন কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়ও, সংবিধান সংশোধন করতে চাইলেই উচ্চকক্ষের ওপর নির্ভর করতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।’

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  বাংলাদেশ   দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ   সিপিডি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে জামায়াতের জনসংযোগ শুরু
নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় ২ জেলের কারাদণ্ড
জিরানী বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৭ দোকান ভস্মীভূত
ফরিদপুরে ‌শুরু হয়েছে মাসব্যাপী টাইফয়েড ও টিকা দান ক্যাম্পেইন

সর্বাধিক পঠিত

ইলিয়াস দুর্গে হঠাৎ হুমায়ুন, সুযোগ সন্ধানে জামায়াত
জাতির খলনায়ক আসিফ
কুমিল্লায় নোয়াখালীর বাস আটকে দিল জনতা
‘শিশু নোবেল’-এর জন্য মনোনয়ন পেল জামালপুরের দুই বোন
টেকনাফে আফসি হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close