ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে ভারত। দেশকে অস্থিতিশীল করতে গত এক বছর ধরে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশটি। তবে তাদের প্রতিটি অপতৎপরতাই ব্যর্থ হয়েছে। তাতে অবশ্য দমে যায়নি হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া দেশটি। এবার বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতেছে ভারত। হাসিনাকে দিয়ে ‘প্রবাসী সরকার’ গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি হুমকি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রবাসী সরকার গঠন করবে। আর এ পুরো বিষয়টা তদারকি করছে দেশটির তিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা। জানা গেছে, সেই তিন সেনা কর্মকর্তা এরই মধ্যে তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। হাসিনাকে দিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করা ও তাকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও তারা ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন।
এ ছাড়া হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে বিষয়ে ভারতের রাজনীতিকরাও ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের এক বিজেপি নেত্রীর একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, আগামী ২০ তারিখ (অক্টোবর) বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ওই দিন শেষ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরবেন এবং ড. ইউনূসের সরকার বড় বিপদে পড়বে। ওই নেত্রী বলেন, ‘আমরা কুড়ি তারিখের জন্য অপেক্ষা করছি। ওইদিন অনেক বড় কিছু ঘটবে।’ পাশাপাশি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্টরাও প্রচার করছেন, দ্রুতই হাসিনা দেশে ফিরবেন। এর জন্য নাকি প্রস্তুতিও চলছে। আওয়ামী লীগপন্থি একক্টিভিস্টরা গেরিলা যুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে ভিডিও ছাড়ছেন। সেখানে তারা সমর্থকদের অস্ত্র হাতে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দিল্লিতে একটি নিরাপত্তা কনফারেন্স চলছে। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি রিচার্স পেপার (গবেষণাপত্র) জমা দেন। তাতে একটি প্রবাসী সরকার গঠনের পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। ওই কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকেও নাকি একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এসব তথ্যকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়টি অতিরঞ্জিত হলেও, ভারত ও আওয়ামী লীগ যে বড় পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, আওয়ামী লীগককে সিয়ে প্রবাসী সরকার গঠনের মধ্যে দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানতে চায় ভারত। এ ছাড়া গেরিলা যুদ্ধের আহ্বান আসলে গৃহযুদ্ধের উসকানি। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব পরিকল্পনা করছে ফ্যাসিস্টরা।
তাদের অভিযোগ, সরকারের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে পতিত শক্তি। সরকার ফ্যাসিস্টের প্রশ্নে যথেষ্ঠ কঠোর অবস্থান নিচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে সম্প্রতি ইতিবাচক কথাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের বক্তব্যে পতিত শক্তি উৎসাহ পাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের অভিমত, ঝটিকা মিছিলের মতো রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশে ভীতির রাজত্ব কায়েশ করছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া স্যাবোটেজের মাধ্যমে নানাভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হচ্ছে। এসবই ভারতের পরিকল্পনার অংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনাকে যারা ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন, সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের যারা দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করেছেন, তারা কিন্তু দেশের অভ্যন্তরেই আছে। হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লির ষড়যন্ত্রে দেশের ভেতর থেকে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। ফলে দেশের ভেতর-বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থায় ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহব্বার জানিয়েছেন তারা।
কেকে/এআর