রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭ নম্বর ইউনিয়ন ইমাদপুরে বিএনপির ৩২ নেতাকর্মী জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে ইমাদপুরের ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ভোটার সমাবেশে তারা সদস্য ফরম পূরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন।
ভোটার সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়ন আমির আব্দুল মোত্তালিবের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলা আমির ও মিঠাপুকুর-৫ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানি, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, মিঠাপুকুর উপজেলা আমির আসাদুজ্জামান শিমুল, উপজেলা সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম।
এসময় জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগের মিঠাপুকুর উপজেলা সেক্রেটারি মেহেদী হাসানসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ইমাদপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করেছি দলটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্ত করছে। এছাড়া ৫ তারিখের পর থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও চোখে পড়ে, যা আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী সংগঠনের আদর্শ, শৃঙ্খলা ও কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি একজন মুসলিম হিসেবে চাই, বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। এই বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমি ৩২ জন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছি। আমার এই সিদ্ধান্তে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন সাবেক শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি কে. এম. এরশাদুল হক খন্দকার।
ইমাদপুর ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাবু বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সঙ্গে কাজ করেছি। দুর্দিনে লোক না পেয়ে একা কাজ করেছি ইউনিয়নে। ৫ আগস্টের পর থেকে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম রব্বানির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কাজ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছি দ্বীন কায়েমের আন্দোলনে শরিক হতে। এ দলে আমার কোনো পদ-পদবির দরকার নেই। জামায়াত তাদের কর্মীদের সুখ-দুঃখে সবসময় পাশে থাকে। তাদের আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে, তাই তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
ইমাদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জুয়েল বলেন, গত রাতে জামায়াতে যারা যোগ দিয়েছেন, তারা সবাই বিএনপির কোনো পদে ছিলেন না। তারা সমর্থক হতে পারেন, তবে ২ জন ওয়ার্ড কমিটিতে ছিলেন। বিগত সময়ে তারা পরিচয় গোপন করে বিএনপিতে যুক্ত হয়েছিলেন। পদ-পদবি না পেয়ে এখন মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে আমি গত রাতে ফেসবুক লাইভে একটি বিবৃতিও দিয়েছি।
মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন (পাইকার) বলেন, বিষয়টি জেনেছি, তবে ৩২ জন বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ইউনিয়ন বিএনপিকে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সবই মিথ্যা।
জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলা আমির ও মিঠাপুকুর-৫ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে থেকে যারা সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে এবং ইসলামী আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন আমরা তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। তারা দ্বীন কায়েমের আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। তারা জামায়াতে ইসলামীর শৃঙ্খলা, কর্মপদ্ধতি ও নীতির আলোকে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের এই সিদ্ধান্ত কবুল করেন, ঈমানের পথে দৃঢ় রাখেন এবং ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যের পথে তাদেরকে সহায়তা করেন আমিন।
উপজেলা জামায়াতের আমির আসাদুজ্জামান শিমুল বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির ৩২ জন নেতাকর্মী জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ও নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এ দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত ও সাধুবাদ জানাই। আল্লাহ তায়ালা তাদের এই সৎ সিদ্ধান্ত কবুল করুন এবং ইসলামের পথে দৃঢ়ভাবে অটল থাকার তাওফিক দিন আমিন।
ইমাদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সাবু, ইমাদপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন, যুগ্ম সম্পাদক মিজু আহমেদসহ ৩২ জন হলেন-
লিটল জুয়েল কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক মো. হযরত আলী, লিটল জুয়েল কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক মো. রতন মিয়া, সুমন মিয়া, চান মিয়া, আ. হালিম মিয়া, রোফ মিয়া, মুনছুর আলী, রাকিব মিয়া, হামেদ আলী, আ. রহমান, কৃষ্ণ চন্দ্র, নুর নবী, নয়ন মিয়া, নাজিম উদ্দিন, আনারুল ইসলাম, আল আমিন, পূর্বপাড়ার ইয়াছিন, দক্ষিণপাড়ার মো. জিয়া, ফরহাদ শেখ, হবিবর, মশিউর রহমান, মাসুদ, মশিউর রহমান দুদু, আবু সোলায়মান, আরিফ, সিয়াম, জুলহক, ফারুক, ইমরান এবং সাইফুল ইসলাম।
কেকে/ আরআই