ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মহিলা ইউপি সদস্য ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন এক ইজিবাইক চালক দুলাভাই মো. মাসুদ মিয়া। তিনি উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের বড়-ডাংড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, উচাখিলা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মোসা. ইয়াসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে তার দুলাভাই মাসুদ মিয়া দ্বিতীয় দফায় গত ১২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগেও তিনি থানাসহ জেলা প্রশাসকের কাছেও অভিযোগ করেন। ইজিবাইক চালক দুলাভাই মাসুদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি গরিব বলে তার প্রভাবশালী শ্যালিকার বিচার কেউ করতে পারছেন না।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে মাসুদ মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমার আপন শ্যালিকা ইয়াসমিন আক্তার বিগত প্রায় ৪ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় আমার স্ত্রী কল্পনা আক্তারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নেয়। কিন্তু নির্বাচনে জয় লাভের পর টাকা দেওয়ার কথা বললে নানা ছলে কৌশলে টাকা নিয়ে ঘুরাতে থাকে ইয়াসমিন। আজ নয়তো কাল এইভাবে কেটে গেছে ৪ বছর। আমি এবং আমার স্ত্রী কষ্ট করে এই টাকা উপার্জন করেছিলাম। পাওনা টাকা চাওয়ায় গত ৬-৭ মাস আগে ইয়াসমিনের স্বামী কাদির আমাকে মারধরও করেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ নিয়ে শালিস-দরবার করলেও ইয়াসমিনের সাথে চেয়ারম্যানের সুসম্পর্ক থাকায় আমি ন্যায়বিচার পাইনি। এমনকি আমার টাকা মেরে দিতে ইয়াসমিন নানা কৌশলে আমার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে অজানা জায়গায় লুকিয়ে রেখেছে। স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে আমি থানায় একটি অভিযোগও করেছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর ইয়াসমিন হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। তার নামে-বেনামে অনেক ধন-সম্পদও রয়েছে বলে জেনেছি। আর এসব হয়েছে সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ, গরীব মানুষের ভাতা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বণ্টনে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ ও স্বজনপ্রীতি করে। এখন সে অনেক টাকা-পয়সা এবং ঘরবাড়ির মালিক। আমি গরিব মানুষ, তার সাথে লেগে আমি পারবো না। আমার স্ত্রী কল্পনা আক্তারের সন্ধান চাই এবং আমাদের কষ্টে উপার্জিত পাওনা টাকা ফেরতসহ শ্যালিকার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ইয়াসমিন আক্তার বলেন, মাসুদ মিয়া আমার বড় বোন জামাই। দুলাভাইয়ের কাছ থেকে আমি টাকা এনেছি তার কোন প্রমাণ সে দেখাতে পারবে কি? আর আমার বোনকে দুলাভাইয়ের বাড়ি থেকে এনে আমি কীভাবে নিখোঁজ করবো? মাসুদ মিয়ার স্ত্রী কল্পনা আক্তার এখন কোথায় আছেন জানতে চাইলে ইয়াসমিন বলেন, তিনি কোথায় আছেন আমি কি করে বলবো?
উচাখিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাসান খান সেলিম বলেন, মাসুদ একদিন আমার কাছে এসেছিল। তখন ইউপি সদস্য ইয়াসমিনও উপস্থিত ছিল। এ সময় মাসুদ ইয়াসমিনের ওপর আক্রমণাত্মক হয়ে নানা ধরনের কথা বলতে থাকে। সে তখন যেসব কথাবার্তা বলেছে, আমার কাছে মনে হয়েছে তার মানসিক সমস্যা আছে। পরে আমি তাকে বিদায় করে দিয়েছি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একজন অফিসারকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেকে/ আরআই