আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনে শিকার দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিগত সময়ে বিএনপি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঠিক দিকনির্দেশনায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি ধরে রেখেছেন।
বিশেষ করে তারেক রহমানের কৌশলী নেতৃত্ব ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি সবসময় চাঙ্গা ছিল। বিদেশে অবস্থান করেও তিনি দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। দল পুনর্গঠন, আন্দোলন, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং নতুন রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি এক অনন্য মাত্রা দিয়েছেন।
তারেক রহমানের কৌশল ও নেতৃত্ব : তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করলেও বিএনপির প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মূল দিকনির্দেশনা তিনি নিজেই দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে দলীয় পুনর্গঠন, নয়া নেতৃত্ব গড়ে তোলা এবং রাজপথের আন্দোলনে গতিশীলতা আনতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বিশেষ করে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তার দৃষ্টি রয়েছে। তিনি জেলা, মহানগর ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের স্থান দিচ্ছেন।
ভার্চুয়াল নেতৃত্ব ও কর্মীদের উজ্জীবিত রাখা : প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারেক রহমান লন্ডন থেকে বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তিনি নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্স, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় দলীয় নেতাদের দিকনির্দেশনা দিতে ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করা হয়, যা দলীয় কর্মীদের অনুপ্রাণিত করছে।
সংগঠনে নতুন উদ্দীপনা ও তরুণদের সম্পৃক্ততা : বিএনপির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তরুণদের দলে সম্পৃক্ত করা। তারেক রহমান এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন। তরুণদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তিনি বিএনপির মিডিয়া সেলকে শক্তিশালী করেছেন, যার ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির প্রচার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে নতুন রাজনৈতিক বার্তা এবং আধুনিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার করছেন তিনি। এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রদল ও যুবদলের কার্যক্রমেও গতি এসেছে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলে তাদের অবস্থান সুসংহত করতে কাজ করছে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বিএনপি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরছে। বিশ্লেষকদের মতে, ‘তারেক রহমান কেবল বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য নয় বরং ভবিষ্যতের জন্যও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। তিনি বিএনপিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি দলে পরিণত করতে চান। দলের কাঠামো মজবুত করা, দলকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা এবং তরুণ নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসাই তার মূল লক্ষ্য।’ তারা মনে করেন তারেক রহমানের সুপরিকল্পিত নেতৃত্বে বিএনপি বর্তমানে নতুন গতি পাচ্ছে। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনে দলটি সক্রিয় ছিল। অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন, কৌশলী আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা বাড়ছে।
নেতাকর্মীদের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা : দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা নেতাকর্মীদের তিনি ভুলে যাননি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। এরমধ্যে বিএনপির প্রয়াত নেতাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, কারাবন্দি নেতাদের সহায়তা করা, ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এবং তাদের বাড়ি-ঘর তৈরি করে দেওয়ার মতো কার্যক্রমের মাধ্যমে একজন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে তারেক রহমান হচ্ছেন প্রশংসিত। এসব কার্যক্রম তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করেছে।
পরিপক্ব বক্তব্য ও রাজনৈতিক উপলব্ধি : তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণগুলোতে এক ধরনের পরিপক্বতা ও স্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি যুক্তি-তর্ক দিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করছেন এবং ভবিষ্যৎ কৌশল তুলে ধরছেন। তার সাবলীল উপস্থাপনা ও তীক্ষè বিশ্লেষণ বিএনপির ভবিষ্যৎ পথচলায় দলীয় কর্মীদের অনুপ্রাণিত করছে এবং তাদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করছে।
দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা রক্ষা : বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতে তারেক রহমান সরাসরি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দলীয় নেতাদের মতানৈক্য নিরসন করে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করছেন। পাশাপাশি, বিএনপির শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তিনি অত্যন্ত কঠোর। যে কোনো ধরনের দলীয় শৃঙ্খলাভঙের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে দলীয় কাঠামোকে শক্তিশালী রাখার চেষ্টা করছেন। এতে দলের ভেতর নিয়মানুবর্তিতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আস্থা বেড়েছে।
অতিসম্প্রতি তারেক রহমান তার এক বক্তব্যে বলেছেন ‘আমরা যখন দলের কারও অন্যায়ের খবর পাচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা অস্বীকার করছি না বা এড়িয়ে যাচ্ছি না। এটাই অন্যদের থেকে বিএনপির পার্থক্য।’ তার এ বক্তব্যটি সোশ্যাল মিডিয়াসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত হয়েছে। তিনি প্রশংসা কুড়াচ্ছেন জনমনে। অনেকেই মনে করছেন এমন স্পষ্টভাষী বক্তব্য মধ্য দিয়েই পরিচ্ছন্ন রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
কেকে/এআর