সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কি দরকারি?
প্রফেসর ড. শাহ জে মিয়া
প্রকাশ: রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:০৩ পিএম আপডেট: ২৮.০৯.২০২৫ ১০:১৫ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

গত সপ্তাহে আমার লেখায় আমি সমাজব্যবস্থা ৫.০ (Society 5.0) এর ধারণাটা কি এ নিয়ে বিশদভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করেছিলাম। আমি এখানে বলেছিলাম যে, এটি একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার ধারণা যেটি, আধুনিক বিশ্বের পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গতিশীলতার সাথে প্রতিযোগিতা করে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমাজকাঠামোকে বোঝায়। ডিজিটাল সমাজব্যবস্থা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমাজব্যবস্থায় জনগণ সুশিক্ষিত হয় এবং সমাজ তার অর্থনীতির উদ্ভাবন, উদ্যোগ এবং কাজের গতিশীলতা বাড়াতে আধুনিক জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে। সমাজব্যবস্থা ৫.০ হলো ধারাবাহিকভাবে সামাজিক বিবর্তনের সবচেয়ে আধুনিক পর্যায়, যেখানে  সমাজব্যবস্থা ১.০ ছিল পশু শিকার নির্ভর; সমাজব্যবস্থা ২.০ ছিল কৃষিনির্ভর; সমাজব্যবস্থা ৩.০ ছিল শিল্পনির্ভর; এবং সমাজব্যবস্থা ৪.০ হলো তথ্যপ্রযুক্তি বা ইন্টারনেট নির্ভর। অনেক গবেষক বর্তমানে সমাজব্যবস্থা ৫.০ কে 'সুপার-স্মার্ট সোসাইটি'-ও বলছেন। যাইহোক, সমাজব্যবস্থা ৫.০-এ রূপান্তরকে আমরা ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের’ সাথে তুলনা করতে পারি, কারণ উভয় ধারণাই আমাদের অর্থনৈতিক বিশ্বে একটি নতুন ধরনের মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তবে সমাজব্যবস্থা ৫.০ মূলত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের থেকেও আরও বিস্তৃত একটি ধারণা, যেটা কিনা পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের ধারণার সাথে সম্পর্কিত, কারণ এটি আমাদের এই সময়ের ডিজিটাল জীবনযাত্রায় সম্পূর্ণরূপে প্রভাব ফেলেছে। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, যা 4IR (4th Industrial Revolution) বা শিল্প ৪.০ নামেও পরিচিত, এবং এটি একবিংশ শতাব্দীতে প্রবাহমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করছে। শিল্প বিপ্লব একটি ধারাবাহিক অগ্রগতির পরিচয় বহন করে। আধুনিক সমাজব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয় ১৭৬০ সালের দিকে প্রথম শিল্পবিপ্লবের হাত ধরে। মূলত ব্রিটেনে স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার এবং ইঞ্জিন চালিত মেশিন এবং টুলস পৃথিবীর বুকে শিল্প বিপ্লবের ধারণার জন্ম দেয়। প্রায় ১০০ বছর ধরে প্রথম শিল্প বিপ্লবের ধারণা চলতে থাকে। ১৮৭০ সালের দিকে বিদ্যুৎচালিত মেশিন একটি নতুন শিল্পবিপ্লব পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসে। সেটাই হলো দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের গোড়াপত্তন। এই শিল্প বিপ্লবকে টেকনোলোজিক্যাল বিপ্লবও বলা হয়ে ছিল। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবও প্রায় ১০০ বছর স্থায়ী হয়। ১৯৭০ সালের দিকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ধারণা আমাদের সামনে আসে। এই শিল্পবিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি ছিল বেশ কয়েকটি আবিষ্কার। তার মধ্যে ট্রানজিস্টর এবং ইন্টারনেট (ARPANET নামে পরিচিত ছিল) অন্যতম। ট্রানজিস্টর চালিত মেশিন এবং ইলেকট্রনিক্স টুলস শিল্পে এনে দেয় গতি এবং সহজলভ্যতা। সেই সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট পুরো পৃথিবীকে আরও সংযুক্ত করে। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবকে ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবও বলা হয়ে ছিল। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ধারণা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০১০ সাল নাগাদ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণার আবির্ভাবের সাথে সাথে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ইতি হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পৃথিবীর বুকে একটি বৈপ্লবিক ধারণার জন্ম দেয়, যেখানে সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম (Cyber-physical system), ইন্টারনেট-অফ-থিংস (Internet-of-Things), তারই সাথে ক্লাউড কম্পিউটিং ভৌত পৃথিবীর সাথে ভার্চুয়াল জগৎকে এমনভাবে সংযুক্ত করেছে যেখানে মানুষ, যন্ত্র এবং ইন্টারনেট একটি অসাধারণ মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। 

আইবিএমের মতে, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ মূলত স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং সম্পর্কে কথা বলে, যা কিনা শিল্পব্যবস্থাকে ডিজিটাল রূপান্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলিকে তাদের পণ্য উৎপাদন, উন্নতি এবং বিতরণের জন্য রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কোম্পানিগুলি তাদের উৎপাদন সুবিধা এবং কার্যক্রম জুড়ে ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), ক্লাউড কম্পিউটিং বিশ্লেষণ, এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা মেশিন লার্নিং সহ নতুন প্রযুক্তিগুলিকে একীভূত করছে।

এখানে আমাদের বলতে হবে যে, স্মার্ট শিল্পকারখানাগুলি উন্নত সেন্সর, এমবেডেড সফ্টওয়্যার (Embedded Software) এবং রোবোটিক্স দিয়ে সজ্জিত, যা কিনা ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে উন্নত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সাহায্য করে। এই ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলি শিল্পব্যবস্থায় অটোমেশন থেকে শুরু করে, ভবিষ্যদ্বাণীমূলক রক্ষণাবেক্ষণ, মেশিনগুলোর  নিজে থেকেই অপ্টিমাইজেশন এবং সর্বোপরি, গ্রাহকদের আরো উন্নত সেবা প্রদানের জন্য একটি নতুন স্তর তৈরি করে, যা আগে সম্ভব ছিল না। আইবিএম ইনস্টিটিউট ফর বিজনেস ভ্যালুসের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং উৎপাদন যন্ত্রের ত্রুটি সনাক্তকরণে ৫০ শতাংশ উন্নতি এবং উৎপাদনে ২০ শতাংশ পর্যন্ত  উন্নতি সাধন করতে পারে।

স্মার্ট কারখানা তৈরির মাধ্যমে কারখানার মেঝেতে এবং বিভিন্ন মেশিনে স্থাপিত সেন্সর থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণে বিগ ডেটা বিশ্লেষণ করে কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্যের রিয়েল-টাইম ত্রুটি নির্ণয় এবং উৎপাদনের ডাটাগুলো দৃশ্যমান প্রক্রিয়ায় মানুষের সামনে আনা যায়, এবং সরঞ্জামের ডাউনটাইম কমানোর জন্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। স্মার্ট কারখানাগুলিতে উচ্চ-প্রযুক্তির আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং উন্নত মানের দিকে পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থায় ন্যূনতম বিনিয়োগের মাধ্যমে, মান নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা যেকোনো জায়গা থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার জন্য ক্লাউডের সাথে সংযুক্ত একটি স্মার্টফোন সেট আপ করতে পারেন। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে, নির্মাতারা তাৎক্ষণিকভাবে ত্রুটি সনাক্ত করতে পারে, পরবর্তী পর্যায়ে মেরামতের কাজ যেন বেশি ব্যয়বহুল না হয় এবং সেই সাথে সর্বোচ্চ মনিটরিং করা যেখানে গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৫ সালে টেকনোলজিক্যাল ফোরকাস্টিং অ্যান্ড সোশ্যাল চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে, আবেল ডুয়ার্তে আলোনসো এবং তাদের দল নয়টি ভিন্ন শিল্পের সাথে জড়িত ভিয়েতনামের উদীয়মান অর্থনীতিতে কাজ করছে এমন অনুশীলনকারীদের দ্বারা উপলব্ধি করা মূল্য সংযোজনের প্রেক্ষাপটে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর গুরুত্বের ধারণা নিয়ে কাজ করেছেন। এই অনুসন্ধানের ধারাটি মোকাবেলা করার জন্য, গবেষণাটি কোম্পানির নেতাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-এর সাথে যুক্ত থাকার মাধ্যমে কোম্পানিগুলি মূল্য সংযোজন এর বিভিন্ন প্রেক্ষাপট পরীক্ষা করেছেন। এই গবেষণার প্রধান অংশগ্রহণকারী দলটি পরিষেবা শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন সেক্টর (যেমন, শিক্ষা, চিকিৎসা পরিষেবা, আতিথেয়তা এবং রিয়েল এস্টেট) নিয়ে কাজ করেছে। অনুসন্ধানের নির্দিষ্ট লাইনগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ কীভাবে মূল্য সংযোজনে অবদান রাখে, এটি করার জন্য কোন সংস্থানগুলির প্রয়োজন হয় এবং কোম্পানিগুলি তাদের কার্যকলাপ/কার্যক্রমগুলিতে মূল্য সংযোজনে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।

মূলত ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ধারণা এবং প্রযুক্তিগুলি সকল ধরণের শিল্প কোম্পানিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছিন্ন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ, সেইসাথে তেল ও গ্যাস, খনি এবং অন্যান্য শিল্প বিভাগ। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ একটি ভবিষ্যতের প্রকল্পকে বোঝায়, যা দুটি উন্নয়ন পথ দ্বারা ধারণা করা হয়। প্রথমত, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক ট্রিগারগুলির ফলে একটি বিশাল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি প্রয়োজন যা একটি অপারেটিভ কাঠামোর শর্ত পরিবর্তনের ফলস্বরূপ। ট্রিগারগুলি স্বল্প উন্নয়ন সময়কাল, নমনীয়তা, বিকেন্দ্রীকরণ বা সম্পদ দক্ষতার সাথে যুক্ত। দ্বিতীয় পথে, শিল্পক্ষেত্রে একটি অসাধারণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ঘটে, যা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার, অ্যাপ্লিকেশন এবং স্মার্টফোন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৈনন্দিন রুটিনকে প্রভাবিত করে। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর প্রেক্ষাপটে, মূল্য তৈরি হয়  (১) পৃথকভাবে সংযুক্ত পণ্য এবং (২) সংশ্লিষ্ট পণ্যের সাথে সংযোগের মাধ্যমে একটি পণ্যের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং একটি পণ্য ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর নির্দিষ্ট টেকনোলজির উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)। 

আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সমসাময়িক একাডেমিক অবদানগুলি ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এবং মূল্য সংযোজনের মধ্যে সংযোগগুলিকে তুলে ধরে; তবে, এই ক্ষেত্রের বিভিন্ন শিল্পগুলির ক্ষেত্রে সীমিত জ্ঞান রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া হলেও, পরিষেবা শিল্পকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই ব্যবধানের সাথে যুক্ত, একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, পরিষেবা ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রযুক্তির রূপান্তরিত প্রকৃতি সত্ত্বেও, একাডেমিক দিক থেকে এই বিষয়টিকে সীমিত মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তদুপরি, শিল্প কর্মক্ষমতার ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি কীভাবে শিল্পগুলি উপলব্ধি করে তা খুব কমই জানা যায়। বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে। সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ছাড়াও, ভিয়েতনামে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর সাথে সম্পর্কিত খুব কম গভীর গবেষণা পরিচালিত হয়েছে, যার মধ্যে বিভিন্ন শিল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

আধুনিক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে তার শক্তিগুলিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর ধারণাটি থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হতে প্রস্তুত। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নাল অফ ম্যানেজমেন্ট (খণ্ড ১৪, নং ১) অনুসারে, দেশের ৩৮.৫২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক শিল্প, এআই, সেন্সর, ইআরপি, এসএমভি, জিএসডি, বিগ ডেটা, ক্লাউড এবং এম২এম যোগাযোগের মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ধারণা প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার সুযোগ বৃদ্ধি করবে এবং প্রযুক্তি-চালিত উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়ই উপস্থাপন করে। আমাদের দেশটি ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ কৌশল ডিজাইন এবং চাহিদা পূরণের জন্য সরঞ্জাম সংগঠিত করার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হলেও, উৎপাদন ব্যবস্থাকে অপ্টিমাইজ করে এমন স্মার্ট কারখানা তৈরি করার সম্ভাবনাও এর রয়েছে। এই পরিবর্তনকে সহজতর করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অবগতি, সরঞ্জাম সহযোগিতা এবং প্রণোদনা প্রদানে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এজেন্ডার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার স্পষ্টতই কার্বনমুক্তকরণ এবং স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্পষ্ট হতে পারে। পণ্য-ভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেল গ্রহণ এবং খাত-নির্দিষ্ট উদ্যোগে বিনিয়োগের মাধ্যমে অটোমেশন এবং আসন্ন ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার লক্ষ্য নির্ধারণ খুবই জরুরি। এটি একটি ব্যাপক পদ্ধতি যার লক্ষ্য দেশের শিল্প সক্ষমতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা উন্নত করা এবং টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি করা। সর্বোপরি আমি বলতে পারি যে, যদি ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ধারণা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় তাহলে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণের মাধ্যমে, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী এই ক্ষেত্রে ভূদৃশ্যে নিজেকে একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ অন্তর্ভুক্তিমূলক জিডিপির নিরবচ্ছিন্ন বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পদ সর্বাধিক করার এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের মতো সামাজিক উন্নয়ন সূচকগুলিতে উন্নতির বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করবে। টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং মজুরি অর্জন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং মূল্য শৃঙ্খলে গতিশীলতা এবং উন্নয়নশীল দেশের সংস্থাগুলি এটি বাস্তবায়নে যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা ব্যাপকভাবে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে (১) নতুন (ঝুঁকিপূর্ণ) প্রযুক্তি কেনার জন্য তহবিল সংগ্রহ, (২) কর্মী ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং (৩) অনুভূমিক সম্প্রসারণের জন্য জমি প্রাপ্তি, বিশেষ করে অবস্থানগত ক্লাস্টারগুলিতে। এই সমস্যাগুলির পাশাপাশি অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, ইউটিলিটি সরবরাহ এবং নীতিমালার পূর্বাভাসযোগ্যতা রয়েছে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত সামগ্রিক সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার দরকার হবে। সুশাসনের মাধ্যমে নীতিগত প্রতিক্রিয়া গঠনের সময় এবং বিনিয়োগের অনুশীলন বৃদ্ধির মাধ্যমে এই দ্বিতীয় বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের আধুনিক রাজনৈতিক দোল হিসেবে বিএনপি দেশের শিল্প বিপ্লবকে শক্তিশালী করার জন্য এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রেরণাগুলিকে ৩১ দফায় একীভূত করতে পারে।  এই বিষয়টি এখন একটি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে কারণ উপযুক্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এখন প্রতিটি নাগরিকেরই প্রত্যাশা। 

সবশেষে বলতে চাই যে, পঞ্চম শিল্প বিপ্লব (৫আইআর), যা ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ নামেও পরিচিত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং নবায়নযোগ্য শক্তির মতো উন্নত প্রযুক্তি এবং মানুষের মধ্যে নতুন প্রযুক্তির সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টির উপর জোর দেয়। এর লক্ষ্যই হচ্ছে টেকসই, মানব-কেন্দ্রিক এবং স্থিতিস্থাপক শিল্প তৈরি করা। এই ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্সের মতো টেকনোলজিগুলির মধ্যে নতুন সুযোগ তৈরি করে চাকরির বাজারে নতুন নতুন পণ্য এবং পরিষেবা তৈরী করা, যা রূপান্তরিত ব্যবস্থাপনাকে সামনে নিয়ে আসে। এখানে আরও বলতে পারি যে, এই বিপ্লব কর্মক্ষেত্রের প্রক্রিয়াগুলিকে উন্নত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং নিশ্চিত করে যে প্রযুক্তি মানুষের ক্ষমতা প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে তাদের পরিপূরক হবে। আজকে নিবন্ধটি এখানেই শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।  আপনাদের জন্য ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ সম্পর্কে আরও একটি নিবন্ধ লেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

লেখক
প্রফেসর অফ বিজনেস এনালিটিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড এআই
উপপরিচালক, সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড অ্যান্ড রেস্পন্সিবল এআই
নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  বাংলাদেশ   চতুর্থ শিল্প বিপ্লব  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close