রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
তিস্তা সমস্যা সমাধানে ভারতকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে
এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৫ এএম আপডেট: ১০.১০.২০২৫ ১০:১৮ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদের পানি বেড়ে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় আমন ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই; দ্রুত পানি নেমে যাবে। কিন্তু, সমস্যটা জটিল হচ্ছে, প্রতিবেশী ভারত কোনো রকম আগাম তথ্য না দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রিত গজলডোবা ব্যারাজের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে ইতোমধ্যে। 

ফলে তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পূর্বে থেকে কোনো কিছুই জানা ছিল না তাদের। ভারতের এ রকম আচরণ তিস্তাপাড়ের মানুষগুলোকে আতংকিত করে তুলছে। তারা মনে করছে পানি আগ্রাসী ভারত বরাবরই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে থাকে। বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও সরকারের মেরুদণ্ডহীনতার কারণেই ভারত প্রতি বছরই এই ধরনের অমানবিক কাজ করে থাকে।

ভারত ভাটির প্রতিবেশী বাংলাদেশকে শুষ্ক মৌসুমে পানি থেকে বঞ্চিত করে শুকিয়ে মারে। আর নদ-নদী প্লাবিত হলে নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে অকাতরে পানি ছেড়ে ভাসিয়ে দেয় তিস্তাপাড়ের লাখ লাখ মানুষকে। রোববার সন্ধ্যায় ভারত কোনোরকম আলোচনা ছাড়া বা বিনা নোটিসে উজানে গজলডোবা বাঁধের সবকটি গেট খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। উজানে সিকিম, দার্জিলিং, জলপাইগুড়িসহ ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা ব্যারেজের ৮৫ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় হঠাৎ এই ঢল নামে তিস্তায়। ফলে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, শ্রীরামপুর, পাটগ্রাম পৌরসভা, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গীমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জের কাকিনা, তুষভান্ডার, চন্দ্রপুর, আদিতমারীর মহিষখোচা, দুর্গাপুর, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, মোঘলহাট, কুলাঘাট ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি নিচে ডুবে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে সবজি ও মরিচ খেত। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কয়েক হাজার পুকুরের মাছ।

ভারত বিনা নোটিসে পানি ছেড়ে দেওয়ায় উজানের ঢলে হঠাৎ আবারো ক্ষেপেছে পাগলা নদীখ্যাত তিস্তা। পানি আগ্রাসী ভারত বরাবরই তার ধূর্ততা ও অপকৌশলে স্বাভাবিক সময়ে অভিন্ন প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানে বাঁধ-ব্যারেজ-বিদ্যুৎপ্রকল্পের মাধ্যমে আটকে রাখে পানি। শুকিয়ে মারে ভাটির প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে। আর, নদ-নদী প্লাবিত হলে নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে অকাতরে পানি ছেড়ে দেয়। গতকাল রোববার পর্যন্ত গত ক’দিনের টানা ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভারত বিনা নোটিসে উজানে গজলডোবা বাঁধের সবকটি গেট (স্পিলওয়ে) খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। 

ভারতের এই অমানবিক আচরণের ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছে।  তীব্র স্রোতের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তিস্তাপাড়ের মানুষরা চরম আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এবং নিজেদের ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। পানির অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা বুদ্ধিজীবীরা কী ভাবছেন বা বলছেন এটি কোনো বিষয় নয়। জনগণকেই লড়াই চালাতে হবে। তিস্তা সদস্যার সমাধানে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর এই আন্দোলনে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। বিশ্ব জনমত গঠনে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে জানাতে হবে, কোনো একটি দেশ কি চাইলেই বন্যা সৃষ্টি করে তার প্রতিবেশী দেশকে ডুবিয়ে মারতে পারে? অথবা উজানের দেশ কি এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যাতে ভাটির দেশের মানুষেরা শুকনো মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার করবে; আর বর্ষায় সেই পানিতেই তলিয়ে যাবে? এসব প্রশ্ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট হাজির হলে অবশ্যই উত্তর আসবে, না একটি দেশ চাইলেই তা পারে না।

ভারত বছরের পর বছর ধরে তাদের দেশের ভেতরে অনেক অভিন্ন নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ দিয়েছে, যাতে সে শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নদীগুলো সচল রেখে মানুষের জীবন-জীবিকা ও ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে। আবার অতি বৃষ্টি বা বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে ওই বাঁধের গেট খুলে দিয়ে নিজের দেশে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। উজানের দেশ হিসেবে এটি তার সুবিধা। কিন্তু ভাটির দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বারবারই ভারতের এই পানি প্রত্যাহার এবং পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোয় প্রবাহ কমে গিয়ে সেখানের জীবন-জীবিকায় কী ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে নতুন করে বলতে হবে না। ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের চুক্তি আছে। কিন্তু সেই চুক্তির অনেক শর্তই যে বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থি এবং বাংলাদেশ যে তার সময়মতো চুক্তিতে উল্লিখিত পানিও পায় না, সেটা দিবালোকের মত স্পষ্ট। অন্যদিকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের অব্যাহত নানা নাটক দেখতে দেখতে বাংলাদেশের মানুষ ক্লান্ত হয়ে গেছে।

এদিকে তিস্তা সমস্যা সমাধাণ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও তা বাস্তবায়িত হয় নাই। ফলে তিস্তা নিয়ে যে কোনো প্রতিশ্রুতির ওপর তিস্তাপাড়ের মানুষের এখন আর তেমন আস্থা নাই। আমরা যখন তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ-কষ্টের আলাপ করতে যাই, তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘তিস্তা নদীর কাম কি হইবে বাহে? মনে হয় হওয়ার নয়।’ অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তিস্তাপাড়ের গণশুনানি সমাবেশে গিয়েছিলেন। সেই দিনও একজন কৃষক দুই উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘এবার হামাক ঠকান না বাহে!’ এ কথাটি বেশ সাড়া ফেলেছে। এটিই তিস্তাপারের মানুষের মনের গভীরে লুকায়িত সত্য কথা। ফলে দুজন উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কার্যপরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দিলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনে তৈরি হওয়া অবিশ্বাস আর অনাস্থা দূর হয়নি।

তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয় নাই সরকারের সদিচ্ছা ও রংপুর অঞ্চলের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণের কারণেই। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সারাদেশে ৩ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প যখন হাতে নিয়েছিল, তখন রংপুর বিভাগের জন্য কোনো মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেনি। তিস্তা নদীতে প্রতিবছর ভাঙন ও বন্যার ক্ষতি অর্থমূল্যে পরিমাপ করা অসম্ভব। এক তিস্তা মহাপরিকল্পনায় তার চেয়ে বেশি আর্থিক লাভ করা সম্ভব। আসলে কোনো সময়ই কোনো সরকার রংপুর অঞ্চলের সমস্যা দূরীকরণে সদিচ্ছা পোষণ করেনি সরকারগুলো।

২০২০ সালে চীনের পাওয়ার চায়না তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি কারিগরি প্রস্তাব দেয়, যার মাধ্যমে নদীর পাড়ে নৌ ও সড়ক যোগাযোগ উন্নতি এবং কৃষি শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। তবে চীনের সম্পৃক্ততা ভারতকে উদ্বেগে ফেলেছে, কারণ ভারতের দৃষ্টিতে এটি কৌশলগতভাবে উত্তরের অববাহিকায় চীনের প্রভাব বিস্তার করবে। বাংলাদেশ সরকারের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি সংবেদনশীল ইস্যু। ভারত ও চীনের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ও ভারতের আপত্তি মেনে চলা বা না চলার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে প্রভাবিত করবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন এখন জরুরি। তিস্তা সমস্যার মূলে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয়, চীনের সম্পৃক্ততাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীনের আগ্রহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এ প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ঘনিষ্ঠ হতে পারে, যা কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর বিপরীতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেশী ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের আগ্রাসী নীতির কারণে কেবল শুষ্ক মৌসুমে নয়, বর্ষা মৌসুমেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তিস্তাপাড়ের মানুষগুলো। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আন্তরিকভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে চেয়েছিল বলে এদেশের মানুষ মনে করে না। ফলে সুযোগ পেয়ে ভারতও ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন লঙ্ঘন করে একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে গেছে।  শুধু নদীর প্রশ্নে নয়; তিস্তার পানি প্রত্যাহার করার কারণে বাংলাদেশ পরিবেশ-প্রতিবেশসহ আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের এত বড় ক্ষতি ভারত করতে পারে না। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ভারতও যেমন করতে চায়নি, তেমনি বাংলাদেশের পক্ষেও জোরালোভাবে এ দাবি কখনোই উত্থাপন করা হয়নি।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আলোচনা হলেও প্রকৃত অর্থে তা ছিল আভ্যন্তরীণ ও ভারতীয় রাজনীতির নাটকেরই অংশ। সে সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশে আসলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও আসার কথা থাকলেও আসেন নাই। ফলে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন হলো না। আসলে তা ছিল প্রকৃত অর্থে তিস্তা চুক্তি না করার অভিনব কৌশল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি চাননি। পশ্চিমবঙ্গ এবং কেন্দ্রের মধ্যে সাজানো খেলার অংশ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বাংলাদেশে আসেননি।

নিজেদের স্বার্থে ভারত বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে দ্বিধা করে না। তারা ৫০ বছর ধরে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেছে। ৫০ বছরের বেশি সময় ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। তাদের এ অবৈধ বাঁধ ভেঙে ফেলতে হবে। এগুলো নিয়ে আগে কথা বলা যায়নি। কারণ, বাংলাদেশ আয়নাঘরে বন্দি ছিল। প্রতিবাদ করলে নির্যাতন নেমে আসত। সেই দিন আর নেই। এখন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অনেক সংগ্রাম আর ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি। জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানের ফলে কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ ব্যবহার করে বাংলাদেশের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

একসময় প্রাচুর্যে ভরা এ নদী ছিল কৃষি, মৎস্য ও পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু আজ এ নদী সংকটে- জলবণ্টন চুক্তির অভাব, নদীভাঙন, শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট এবং বর্ষায় নিয়ন্ত্রিত বন্যার কারণে। এ সংকটের পেছনে রয়েছে একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক জটিলতা এবং নদীর রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। নানা আলোচনার পরও কার্যকর সমাধান না হওয়ায় তিস্তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে, ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চিত। তিস্তা তীরবর্তী গ্রামগুলোতে খাদ্য উৎপাদন কমে যায়, জীবিকার সুযোগ সংকুচিত হয় এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসে। অন্যদিকে বর্ষার সময় গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়, যা মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল এবং জীবিকা ধ্বংস করে। তিস্তা সমস্যার টেকসই সমাধান ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আন্তঃরাজনৈতিক সমঝোতাই এ সংকট সমাধানের একমাত্র কার্যকর পথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের অভ্যন্তরে যত নদী রয়েছে, সব নদী পরিকল্পিতভাবে খনন করতে হবে। তাহলে কেউ ষড়যন্ত্র করলেও লাভ হবে না। 

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসংখ্য নদীর সংযোগ আছে। তারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে না জানিয়ে এসব নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। ভারত যত বাঁধ নির্মাণ করেছে, তা ভেঙে ফেলতে হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশ এককভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না। বাংলাদেশ অভিমুখে সব বাঁধ উচ্ছেদের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে দাবি তুলতে হবে, জাতিসংঘের পানিপ্রবাহ কনভেনশন ৯৭-এ অতিসত্বর অনুস্বাক্ষর করতে হবে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেখক : রাজনীতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক 

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  তিস্তা সমস্যা   ভারত  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ
ইমপোর্টার-এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

সর্বাধিক পঠিত

সাপ্টিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম
রাজশাহীতে চার পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ
চলনবিলে পাখি শিকারের ফাঁদ ধ্বংস, বক ও ঘুঘু উদ্ধার
আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close