সরকারি ভাষ্যে প্রায়ই শোনা যায়- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কিন্তু দেশের যে সার্বিক চিত্র আমরা দেখতে পাই সেটি একেবারেই ভিন্ন। সাধারণ মানুষকে এক অনিরাপদ প্রতিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে সম্প্রতি চুরি ও ডাকাতির ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ধারাবাহিকভাবে যে চুরির ঘটনা ঘটছে, তা কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাই- এটি নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সম্প্রতি রাজধানীর মৌচাকের ফরচুন শপিংমলে ‘শম্পা জুয়েলার্স’ থেকে ৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরির ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মধ্যরাতে বোরকা পরে দুজন দুর্বৃত্ত নিখুঁত পরিকল্পনায় দোকানের তালা ভেঙে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার নিয়ে চলে যায়। একই সময়ে যাত্রাবাড়ী ও মাদারীপুরের শিবচরেও জুয়েলারি দোকান ও বাড়িঘরে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এই ধারাবাহিকতা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে- চোরচক্র এখন আরো সাহসী, সংগঠিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ জুয়েলারি উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয় স্বর্ণ এমন এক পণ্য যার প্রতি দুর্বৃত্তদের চিরকালই লোভ থাকে। ফলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু তাদের ব্যক্তির দায় নয়, এটি রাষ্ট্রেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কারণ এসব অপরাধ যদি লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে, তবে কেবল ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনীতিরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। কিছুদিন আগে রাজধানীতে ব্যাপক আকারে ছিনতাই বেড়ে গিয়েছিল, সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কিছুটা কমলেও বেড়ে গেছে অভিনব পদ্ধতিতে চুরি-ডাকাতি।
প্রশ্ন হচ্ছে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছে? প্রতিটি ঘটনায় তারা ‘তদন্ত চলছে’, ‘সিসিটিভি দেখা হচ্ছে’- এমন আশ্বাসমূলক বাক্য বললেও, বাস্তবে গ্রেফতার বা উদ্ধার খুব কমই হচ্ছে। ফলে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। বড় বড় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা, মার্কেট কিংবা আবাসিক পল্লিতে নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে শপিংমল ও জুয়েলারি দোকানগুলোতেও প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা- যেমন আধুনিক অ্যালার্ম সিস্টেম, স্মার্ট ক্যামেরা ও জরুরি রেসপন্স ইফনিট- নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে, এসব ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তাকর্মী বা অভ্যন্তরীণ যোগসাজশ থাকলে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সুনাম তখনই টিকবে, যখন অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দৃষ্টান্ত সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা যাবে।
দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় স্বর্ণ ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এই খাতে আস্থা হারালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাজার, রপ্তানি ও বিনিয়োগের পরিবেশ। তাই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এখনই কঠোর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে এই চুরি-ডাকাতির ঢেউ একসময় বড় সামাজিক অস্থিরতায় রূপ নেবে, যার দায় কেবল দুর্বৃত্তদের নয়- সমাজ ও রাষ্ট্রকেও বইতে হবে।
কেকে/ এমএস