বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের সাতটি পথে অবৈধ অস্ত্রের চালান ঢুকছে দেশে। এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক একটি সংবাদ। অস্ত্রের সঙ্গে মাদক ও মানবপাচারের মতো ঘটনাও ঘটছে। এই চোরাচালান রোধে প্রশাসনের সুস্পষ্ট ভূমিকা চোখে পড়েনি যা আরো উদ্বেগের। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে বহুমুখী অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কিছুদিন আগের খাগড়াছড়ির ঘটনা, সর্বশেষ গতকাল আরাকান আর্মি, আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই সীমান্তে বসবাসরত জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। হুমকিতে পড়েছে সাধারণ মানুষের প্রাণ ও সম্পদ। এই অস্থিরতার মধ্যেই বেড়ে গেছে অস্ত্র, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচারের মতো ঘটনা। আর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এসব অপরাধকর্মের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পগুলো আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবির নয়- অস্ত্র, মাদক আর মানবপাচারের ঘাঁটিতে রূপ নিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও মাদক তারই প্রমাণ। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি-রোহিঙ্গা ক্যাম্প সীমান্তের খুব কাছাকাছি হওয়ায় মিয়ানমার থেকে এসব অস্ত্র পাচার সহজ হয়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অন্তত পাঁচটি চক্র, যার মধ্যে চারটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র দল।
মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতে যখন বিজেপি ও সেনারা পিছু হটছে, তখন তাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র হাতবদল হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। খাদ্য ও পণ্যের বিনিময়ে এসব অস্ত্র পাচারের খবর শুধু উদ্বেগজনক নয়, এটি সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ভয়াবহ দুর্বলতাকেও প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে কক্সবাজার থেকে তিন পার্বত্য জেলার অরণ্য পর্যন্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব বাড়বে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
সীমান্তে বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর পরেও অস্ত্র ও চোরাচালান কেন রোধ করা যাচ্ছে না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। সীমান্তের এই অস্থিরতা, চোরাচালান গোটা অঞ্চলের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীলতা, কাজের অভাব ও হতাশা অনেককেই অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এই বাস্তবতা কখনোই অপরাধকে ন্যায্যতা দেয় না।
সীমান্ত নিরাপত্তাকে কেবল সামরিক বা আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন হিসেবে দেখলে চলবে না। নিতে হবে সমন্বিত নীতি ও পদক্ষেপ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, মাদক ও অস্ত্রবিরোধী যৌথ অভিযান এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ সীমান্ত এখন কেবল ভৌগোলিক নিকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, দেশের নিরাপত্তা ও সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। সীমান্তে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে- বিশেষ করে অপরাধপ্রবণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে।
কেকে/ এমএস