সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরো পাঁচ জনের। একই সময় সারা দেশে ৬৬৮ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি ক্রমশই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন।’ এর একটি কারণ অনেক রোগীই দেরিতে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে চলতি চলতি বছর ডেঙ্গু সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় ৮১ শতাংশ বেড়েছে। একইসঙ্গে মৃত্যু বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে ৬০ দশমিক তিন শতাংশ পুরুষ ও ৩৯ দশমিক সাত শতাংশ নারী রয়েছেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৫ জনের। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ডেঙ্গু চিকনগুনিয়া লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় অনেক রোগীই বুঝতে পারছেন না তারা কোন ভাইরাসে আক্রন্ত হয়েছে। এ বিষয়টিডও এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের সংকটকে আরো জটিল করে তুলছে।
এসব তথ্য আগের পরিসংখ্যানগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, শুধু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে না, মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। শহর ও বিভাগভিত্তিক তথ্য বলছে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা প্রভৃতি এলাকায় মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি। স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো যদি দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক শূন্যতার কারণে মশক নিয়ন্ত্রণের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ বছর তাদের কার্যক্রমে অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে মশার বংশবৃদ্ধি আরো সহজ হচ্ছে, যা এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। মশার বিস্তার নিয়ে রয়েছে সচেতনতার অভাব, আক্রান্ত হওয়ার পরে চিকিৎসা না নেওয়ার প্রবনতা মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনি প্রয়োজন রোগ নির্ধারণ ও চিকিৎসায় দ্রুততার নিশ্চয়তা, নালা-ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার এবং পানি জমে থাকাকে প্রতিরোধ, জনসচেতনতা বাড়ানো, যাতে আক্রান্ত রোগী সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে, নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষভাবে সুরক্ষা ও সেবার ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সবাকে সচেষ্ট হতে হবে, নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ।
কেকে/ এমএস