রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারো সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মৌসুমের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছেন না। কেউ দিনের পর দিন ডিলারের দোকানে ঘুরেও খালি হাতে ফিরছেন, আবার কেউ ১০০-৩০০ টাকা বেশি দিয়ে বস্তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ সরকার ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপির দাম যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫০, ১ হাজার ৩৫০, ১ হাজার ৫০ এবং ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। কাগজে-কলমে এই দাম থাকলেও মাঠে কৃষকের হাতে সেই দামে সার পৌঁছাচ্ছে না।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে রংপুরে ইউরিয়া ৫ হাজার ৫৬৫ টন, টিএসপি ৯৩২ টন, ডিএপি ৩ হাজার ৭২৪ টন ও এমওপি ২ হাজার ৬১৪ টন বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কৃষকরা বলছেন, ডিলাররা চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না। ডিলাররা আবার অভিযোগ করছেন, কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে গোডাউন থেকে মাঠে আসার পথে সার কোথায় আটকে যাচ্ছে, সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না। এ সংকট নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই প্রায় একই সময়ে সারের সংকট দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের আমন মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে অনুরূপ সংকট তৈরি হয়েছিল। ২০২৪ সালেও অভিযোগ উঠেছিল, সরকারি বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকের হাতে যথাসময়ে সার পৌঁছায়নি। ফলে ফলন কমে যায় এবং ধানের দাম বেড়ে যায়। গত বছর খাদ্যশস্য আমদানি করতে সরকারকে অতিরিক্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছিল। এ বছরের সংকট যদি সময়মতো সমাধান না হয়, তবে একই পরিস্থিতি আবারো তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা মূলত ধান ও গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। রংপুর অঞ্চলকে দেশের খাদ্যভাণ্ডার বলা হয়। সেখানে যদি ধান ও সবজি চাষ সারের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সারা দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। শুধু কৃষকের লোকসান নয়, সাধারণ মানুষকে চড়া দামে খাদ্য কিনতে হবে, সরকারকে বাড়তি আমদানি করতে হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়বে।
এখন প্রশ্ন, এই সংকটের দায় কার? সরকার বলছে বরাদ্দ যথেষ্ট, ডিলাররা বলছেন সরবরাহ কম, আর কৃষকরা বলছেন চড়া দাম না দিলে সার মিলছে না। ফলে স্পষ্ট বোঝা যায়, সরবরাহ ব্যবস্থার কোথাও গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। যদি ডিলার পর্যায়ে কালোবাজারি বা মজুদদারি থাকে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি সরকারি সংস্থা থেকে সরবরাহ কমানো হয়ে থাকে, তবে সেটি কেন হচ্ছে তার স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দিতে হবে।
কৃষির একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সময়মতো সার না দিলে পরে দিলেও কাক্সিক্ষত ফলন মেলে না। তাই শুধু আশ্বাস দিয়ে সময় পার করলে হবে না। বরং এখনই মাঠপর্যায়ে বিশেষ নজরদারি, সরবরাহ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়তি বরাদ্দ ও জরুরি সরবরাহ চালু করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। তাই সার সংকটকে শুধু কৃষকের সমস্যা ভেবে অবহেলা করা যাবে না। যদি এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে উৎপাদন কমে গিয়ে আগামী দিনে চালের বাজার অস্থির হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। সরকারকে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ।
কেকে/ এমএস