শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫,
৮ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: সরকারের উদাসীনতায় থামছে না মব সন্ত্রাস      ‘মৌলবাদ’ নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি      শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলেই আইনি ব্যবস্থা      কুমিল্লায় লরির নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের ৪ জন নিহত      ড. ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের সাক্ষাৎ      ইসরাইলি হামলায় গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরো ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত      ফের পিএস বিতর্কে আসিফ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
সরকারের উদাসীনতায় থামছে না মব সন্ত্রাস
রোকন উদ্দিন
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এরপর ৭ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। বরং দেশজুড়ে শুরু হয় ‘মব’ সৃষ্টি করে হত্যা ও হেনস্তার এক ভায়বহ অবস্থা। যা এক সময় মহামারির আকার ধারণ করে। তবে ধীরে ধীরে সেই প্রবণতা কমতে থাকলেও একেবারে থামানো যায়নি। প্রায়শই দেশের বিভিন্ন স্থানে মব সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে চোর সন্দেহে মব সৃষ্টি করে তিন কিশোরকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ মারধরের ঘটনায় মো. রিহান নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর হাতিয়ায় চোর সন্দেকে প্রকাশ্য পিডিবির ঠিকাদারের দুই কর্মীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হন। একইদিন কুমিল্লায় চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে এক তরুণকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে মব সৃষ্টি করে রূপলাল দাস ও প্রদীপ লাল নামের দুই ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পরে সরে পড়ে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের মবের ঘটনা কমে এলেও তা একেবারে নির্মূল হয়নি। বরং পরিকল্পিতাভাবে একদল মানুষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর এর কারণ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। মব সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে, এমনকি পুলিশের সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও তারা থাকছেন নির্লিপ্ত। অন্যদিকে অপরাধীদের গ্রেফতারেও দেখা যায় গড়িমসি। মামলা নিতেও পুলিশ টালবাহানা করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর সরকারও এসব ঘটনায় শুধু বিবৃতি দিয়ে সায় সারে। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। 

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে তিন কিশোরকে চোর সন্দেহে বেঁধে পেটানোর ঘটনায় ঘটনাস্থলেই এক কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চেইঙ্গার সেতু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, পূর্বের বিরোধ থেকে চোর সন্দেহের নাটক সাজিয়ে পেটানো হয়েছে। 

নিহত কিশোরের নাম মো. রিহান মহিন (১৫)। সে একই গ্রামের সাগর আলী তালুকদার বাড়ির মুদিদোকানি মুহাম্মদ লোকমানের ছেলে। পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই কিশোর তিন বন্ধুসহ এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। পরে পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ করে পেটানো হয়েছে। এ ঘটনায় রিহানের দুই সমবয়সি বন্ধু মুহাম্মদ মানিক ও মুহাম্মদ রাহাত গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, নিহত রিহান বাবার মুদিদোকানে সহযোগী হিসেবে কাজ করত। গতকাল তারা চট্টগ্রাম নগরে বেড়াতে যায়। রাতে তারা বাড়ি ফিরছিল। তিনটার দিকে বাড়ির কাছে এলে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা সাত থেকে আটজন যুবক তাদের চোর আখ্যা দিয়ে ধাওয়া দেন। এরপর এ তিনজন দৌড়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে যুবকেরা ধরে এনে সেতুর ওপর আনেন। এরপর তিন কিশোরকে রশি দিয়ে বেঁধে ‘মব’ করে বেধড়ক মারধর করেন। এতে ঘটনাস্থলেই রিহানের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা গুরুতর আহত মানিক ও রাহাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমদ বলেন, ওই তিন কিশোর নগরে বেড়াতে গিয়ে মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছিল। কেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। পরিবারকে মামলা করতে বলা হয়েছে। পুলিশ মূল হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। ওসি নুর আহমদ বলেন, ‘একই গ্রামের যুবকেরা হামলা করায় এটিকে গণপিটুনি বা চোর সন্দেহ মনে হচ্ছে না। তাদের মধ্যে হয়তো কোনো বিরোধ বা শত্রুতা থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে।’
 
এদিকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চোর সন্দেহে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ঠিকাদারের দুই কর্মীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। মারধরের সময় ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার জাহাজমারা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. লোকমান (৩৫)। আহত হয়েছেন পিডিবির ঠিকাদারের আরেক কর্মী মো. মোস্তাফিজ।

আহত মো. মোস্তাফিজ গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের ঠিকাদার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের কাজ শেষ করার পর অপ্রয়োজনীয় কিছু মালামাল এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ও লোকমান ওই মালামাল নিয়ে ভাঙারির দোকানে যান। এ সময় তারেক আজিজ নামের ওই ব্যক্তি এসব মালামাল চুরির বলে অভিযোগ করেন। তারা প্রকৃত ঘটনা জানানোর পরও তাদের দুজনকে বেঁধে মারধর করা হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মারধর করার সময় প্রায় ২০০ লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপরও তারেক আজিজ আমাদের চোর আখ্যা দিয়ে বেঁধে রাখেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। এর পরপর লোকমানের মৃত্যু হয়।’

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম  আজমল হুদা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার কিছুক্ষণ পর লোকমান ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। প্রাথমিক তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী লোকমানকে মারধরের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত তারেক আজিজকে আটক করা হয়েছে। 
এদিকে কুমিল্লার নগরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের অশোকতলা বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তরুণের নাম মো. সায়েম (২৪)। পুলিশের ভাষ্য, ওই যুবক পেশাদার ‘ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ’।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিসিক শিল্পনগরীর জান্নাত ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি কারখানায় উৎপাদিত শনপাপড়ি খেতে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন সায়েম। এ সময় সেখানে হাত-পা বেঁধে তাকে আটকে মারধর করেন স্থানীয় একদল লোক। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সায়েমকে মৃত ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অন্তত তিন বাসিন্দা গণমাধ্যমকে বলেন, ওই যুবক আরো কয়েকজনসহ এলাকায় চুরি ও ছিনতাই করতেন। এ জন্য মানুষ তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। কিন্তু এভাবে পিটিয়ে হত্যা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। তাকে চাঁদা দাবির সময় আটকের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া যেত।
এর আগে গত ৯ আগস্ট চোর সন্দেহে তারাগঞ্জে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস নামের দুইজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় পুলিশ ঘটনস্থলে থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এনে চলে যায়। প্রদীপ দাস সম্পর্কে রূপলাল দাসের ভাগনির স্বামী ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রূপলাল দাস জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। আর প্রদীপ দাস ভ্যান চালাতেন। 

এ হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারের সঙ্গে ঘটনার মিল নেই বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বাজনরা। পুলিশ নিজের মতো করে মামলা লিখে রূপলালের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে সই নিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। 

রূপলালের ছেলে জয়দাস বলেন, তার বাবাকে যখন মারা হয়, তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। কিন্তু সে কথা মামলায় লেখেনি। মামলায় লেখেছে, পুলিশ নাকি তাকে হাসপাতালে দেখছে! তার অভিযোগ, ‘এই মামলা ওরা (পুলিশ) নিজে নিজে থানায় মনমতো লেখে আমার মার সাইন নিছে। আমার বাবার গায়ে দোষ দিয়া মামলা লেখছে। পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  সরকার   উদাসীনতা   মব সন্ত্রাস   প্রশাসন  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারের উদাসীনতায় থামছে না মব সন্ত্রাস
‘মৌলবাদ’ নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি
গাছ কাটার প্রতিবাদে বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
মাগুরার মহম্মদপুরে বিএনপির পথসভা
ফেন্সিডিলকাণ্ডে অভিযুক্ত এসআই কামালকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত

সর্বাধিক পঠিত

মেঘনা নদী থেকে সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ উদ্ধার
নালিতাবাড়ীতে ভারতীয় মদসহ গ্রেফতার ২
কুমিল্লায় লরির নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের ৪ জন নিহত
ফেন্সিডিলকাণ্ডে অভিযুক্ত এসআই কামালকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত
সবজির দাম গরিবের নাগালের বাইরে, ডিমের ডজন ১৫৫
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close