সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

দেশে চলমান গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় বিপাকে পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না তারা। শিল্পমালিকরা বলছেন, গ্যাসের স্বল্পতা কেবল উৎপাদন ব্যাহত করছে না বরং নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থানকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ তার অন্যতম প্রধান রফতানি খাতের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান হারাতে পারে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও আশপাশের শিল্পাঞ্চলে শতাধিক কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চালু রাখা যাচ্ছে না। গ্যাসে চাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় কারখানার বয়লার সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে সেলাই থেকে শুরু করে রং, প্রিন্টিং, ওয়াশিংসহ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট শুধু বর্তমান শিল্প উৎপাদন ব্যাহত করছে না, বরং নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন।
 
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারী দলের সঙ্গে বৈঠকে বারবার একই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ কি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ দিতে পারবে? বিনিয়োগকারীদের দাবি, উৎপাদনশীল খাতে অর্থ বিনিয়োগ করছেন কেবল তখনই, যখন তারা নিশ্চিত হবেন যে, জ্বালানি সংকটের কারণে তাদের কারখানা অচল হয়ে পড়বে না।

অন্যদিকে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বহুজাতিক অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীন থেকে উৎপাদন স্থানান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছে। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া ইতোমধ্যেই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন কারখানা আকৃষ্ট করছে। কিন্তু বাংলাদেশ, পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় সেই সম্ভাব্য বিনিয়োগের বড় অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এছাড়া গ্যাস সংকটে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন লাখো শ্রমিকও। পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের মূল বেতনের পাশাপাশি একটি বড় অংশ আসে অতিরিক্ত কাজ বা ওভারটাইম থেকে। নির্ধারিত অর্ডার পূরণের চাপ থাকায় বছরের অধিকাংশ সময়ই শ্রমিকরা প্রতিদিন নিয়মিত সময়ের বাইরে অতিরিক্ত কয়েক ঘণ্টা কাজ করে থাকেন। এতে তাদের মাসিক আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়।

কিন্তু সাম্প্রতিক গ্যাস সংকটে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাওয়ায় অনেক কারখানায় ওভারটাইম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কোথাও তা সীমিত করা হয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, এই কারণে তাদের মাসিক আয় গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ফলে জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে তাদের চরম সংকটে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে ভাড়া, নিত্যপণ্য ও চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে একজন শ্রমিকের গড় মূল বেতন ১২,৫০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু ওভারটাইমসহ তাদের আয় দাঁড়ায় ১৮-২২ হাজার টাকায়। গ্যাস সংকটের কারণে ওভারটাইম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আয় কমে মূল বেতনের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এতে শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। শ্রমিক নেতাদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়তে পারে, যা উৎপাদন আরো বিঘ্নিত করবে।
 
রফতানিকারকরা বলছেন, পোশাক খাতে টিকে থাকার জন্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ রফতানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। গ্যাস সংকট দীর্ঘায়িত হলে নতুন অর্ডার বাংলাদেশ থেকে সরে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য দেশে চলে যেতে পারে।

ফলে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে চলমান গ্যাস সংকট নিরসন এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। বুধবার সচিবালয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এ অনুরোধ জানান।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ না পাওয়ার কারণে অনেক কারখানা তাদের পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না, যা রফতানি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ সভাপতি পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেছেন

পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে অগ্রাধিকার : দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সুরক্ষার জন্য গ্যাসের নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রমঘন পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দ্রুত করা : তিতাস গ্যাসের নতুন সংযোগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই-বাছাই কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান, যাতে করে কারখানাগুলো সময়মতো উৎপাদন শুরু করতে পারে।

আবেদনের তালিকা পৃথককরণ : লোড বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, শুধু সরঞ্জাম পরিবর্তন, পরিমার্জন বা স্থানান্তরের জন্য আবেদনকারীদের একটি আলাদা তালিকা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান করার অনুরোধ জানানো হয়।

কম লোড বৃদ্ধি আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার : কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়, যা ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে যেতে সাহায্য করবে।

গ্যাস রেগুলেশন : ধামরাই ও মানিকগঞ্জের মতো যেসব এলাকার গ্যাস পাইপলাইনের শেষ প্রান্তে অবস্থিত কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যায়, সেখানে অন্তত ৩-৪ পিএসআই চাপ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি আরো বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে পোশাকশিল্পের পথ সুগম করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে  সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত, পোশাকশিল্পকে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক রয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে বলে বিজিএমইএ সভাপতিকে তিনি আশ্বস্ত করেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এ প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে শুধু পোশাকশিল্প নয়, বৈচিত্র্যময় নতুন খাতেও বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হলে শিল্পায়নের গতি কমে যাবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনাও বাধাগ্রস্ত হবে। দ্রুত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে ‘নেক্সট ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ হওয়ার স্বপ্ন বাংলাদেশ হারাতে পারে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  গ্যাস সংকট   ঝুঁকি   বিনিয়োগ   রফতানি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close