ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন ছিল সোমাবার। এ দিন সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছে ক্যাম্পাসের সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে প্রার্থীদের ভিড় করতে দেখা গেছে। শেষ মুহূর্তে আরো ইনক্লুসিভ প্যানেল তৈরি করতেই অনেকে শেষ দিনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ বলছেন এটা নির্বাচনি কৌশল। আবার অনেকে এখনো পুরোপুরিভাবে প্যানেল গুছিয়ে আনতে পারেননি।
ভিপি পদে ফরম কিনলেন ছাত্রদলের ৩ নেতা :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ((ডাকসু) নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার শেষ দিনেও প্যানেল চূড়ান্ত করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল; কেবল ভিপি পদে ফরম নিয়েছেন তিন নেতা। বিএনপির সহযোগী সংগঠনটি বলছে, আলাদা করে ফরম নিলেও তাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই প্যানেল ঠিক করে দেবেন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ১৯ আগস্ট। সে হিসেবে মঙ্গলবারের মধ্যে প্যানেল ঠিক করে ফরম জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে ছাত্রদলের।
ভিপি বা সহ-সভাপতি পদে ফরম তুলেছেন- ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বি এম কাউসার ও আবিদুল ইসলাম খান। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ফরম নিয়েছেন কবি জসীমউদ্দিন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর বারী হামীম। এজিএস বা সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ফরম নিয়েছেন বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জারিফ রহমানও ফরম নিয়েছেন, তবে পদের নাম জানা যায়নি।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সদস্যরা। গতকাল সোমবার ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তারা। তারা অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একদল শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
শিবিরের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনের ঘোষিত প্যানেলে ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) পদে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ। আর এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান। গতকাল সোমবার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক পদে এস এম ফরহাদ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন মহিউদ্দিন খান। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ইনকিলাব মঞ্চ থেকে যুক্ত হয়েছেন ফাতিমা তাসনীম জুমা।
ছাত্র অধিকারের প্যানেল ঘোষণা :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সংগঠনটি ভিপি হিসেবে কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিন মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে ঢাবি শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলামের। গতকাল দুপুরে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তাদের প্যানেলের নাম ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ এবং স্লোগান হলো- ‘ভোট ফর চেঞ্জ’।
এছাড়া প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মো. শাকিল খান, সমাজসেবা পদে আরিফুর রহমান মজুমদার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মুক্তার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন পদে আশিক হৃদয় আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রাকিব হোসেন গাজী, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে ইশতিয়াক আহমেদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম ফেরদৌস ইমন স্থান পেয়েছেন। ঘোষিত প্যানেলে সদস্য হিসেবে আছেন, রাহাত, রেজোয়ান, মো. মুহিউদ্দীন আহমেদ, কৌফিক আবির, আব্দুল্লাহ আল নোমান, রাকিবুল আলম রুদ্র, মোফাচ্ছেল হক, মাহতাপ ইসলাম।
স্বতন্ত্র প্যানেলে জুবায়ের-মুসাদ্দেকরা :
এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গঠিত হচ্ছে এক ভিন্নধারার প্যানেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত মুখ এবি জুবায়ের, মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ, আব্দুর রহমান আল ফাহাদ ও আশিক খানসহ কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে আংশিক প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাদের প্যানেলে ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ভিপি) বা জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) পদ রাখা হয়নি; তারা শুধু বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের ডাকসু নির্বাচন অফিস থেকে বের হয়ে তারা এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এদিন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নেন মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নেন এবি জুবায়ের।
মনোনয়ন নেওয়ার পর মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, এই ডাকসু নির্বাচনের জন্য আমাদের অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। অবশেষে প্রায় ৭ বছর পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সমর্থন নিয়ে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছি। সাহিত্য নিয়ে আমার শিক্ষা জীবনে অনেক কাজ করেছি। সেই জায়গা থেকে আমি এই পদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন সতর্কতার সঙ্গে প্রার্থী বেছে নেন, যাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পরবর্তীতে জুলুম-নির্যাতন না চালাতে পারে। কারণ ডাকসু নির্বাচিত প্রার্থীরাই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। এই প্যানেলে ১২-১৩ জন প্রার্থী থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নেওয়া এবি জুবায়ের।
কেকে/ এমএস