সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ঢাকার ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসা
খোলা কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

ঢাকার ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে- যা তাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ও শারীরিক সুস্থতায় মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০০ শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি, বিশেষ করে সিসা নির্ভর শিল্প কারখানার আশপাশের শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা দূরের এলাকায় বসবাসকারীদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিষাক্ত ধাতু শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ও শেখার দক্ষতাকে কমিয়ে দেয় এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। এ অবস্থায় শিশুদের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ খুবই জরুরি বলেও মনে করছেন তারা। 

গতকাল বুধবার দুপুরে আইসিডিডিআর,বি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধ অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সিসা দূষণের ব্যাপকতা ও এর ভয়াবহতা তুলে ধরা এবং এর থেকে মুক্তির উপায়গুলো আলোচনা করা। 

সভায় জানানো হয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পরিচালিত গবেষণায় ২ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে প্রতিটি শিশুর রক্তেই রয়েছে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। 

গবেষণা ফলাফল প্রসঙ্গে আইসিডিডিআর,বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা জানান, গবেষণায় রক্তে সিসার মধ্যম মাত্রা ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটার পাওয়া গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) নির্ধারিত উদ্বেগজনক মাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রাম/লিটারের দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা উদ্বেগজনক স্তরের ওপরে ছিল। 

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সিসা নির্ভর শিল্প স্থাপনার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা ছিল ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে থাকা শিশুদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। অন্য সিসার উৎস হিসেবে ঘরের ভেতরে ধূমপান, দূষিত ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী এবং রান্নার পাত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

আইসিডিডিআর,বির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সারাহ স্যালওয়ে বলেন, সিসা দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রায়ই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। বিশেষ করে দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানার আশপাশের শিশুরা এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। 
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইসিডিডিআর,বির সাবেক পরিচালক প্রফেসর স্টিভ লুবি বলেন, সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে, যার ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা (আইকিউ) ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে। 

আইসিডিডিআর,বির প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান গত দশকের সিসা সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানান, সিসা ও ব্যাটারি-সম্পর্কিত শিল্পকারখানা, সিসাযুক্ত রং ও প্রসাধনী, রান্নার পাত্রের মাধ্যমে সিসার সংস্পর্শ হচ্ছে, যা দেশের শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তবে রান্নায় ব্যবহৃত হলুদে সিসার মাত্রা কমাতে সচেতনতা ও আইন প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসেছে। 

আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, সিসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে এবং দেহে পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথকে পিছিয়ে দেয়। তাই আমাদের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে সিসা নিঃসরণকারী উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে বেড়ে ওঠে। 

আলোচনা সভায় উপস্থিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দ্রুত সিসা-নির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া এবং দূষণ কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিশেষ করে লেড-এসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানার আশপাশের এলাকায় বসবাসকারীদের সুরক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়। 

দেশের শিশুদের জন্য এক সুস্থ, দূষণমুক্ত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সিসা দূষণ রোধে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এ বিশেষ আলোচনা সভা শেষ হয়।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close