বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: সাগর-রুনির পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজউকের প্লট      মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা       নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জরুরি      ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু      ‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস      আবারো সংঘর্ষে ঢাকা-সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা      রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ আফজালুল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণ
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ১:২৮ পিএম আপডেট: ০৫.০৮.২০২৫ ২:০৫ পিএম
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন বারবার জাতির চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার সংগ্রাম, সর্বশেষ ২০২৫ সালের কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অভ্যুত্থান। এটি কেবল একটি নিয়োগনীতি সংশোধনের আন্দোলন ছিল না; বরং এটি রূপ নিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের ফ্যাসিবাদী দমননীতি, রাজনৈতিক অপব্যবহার ও শ্রেণিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক জনজাগরণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলন একপ্রকার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে ফেলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা ক্ষোভ, অন্যায়, দমন-পীড়ন এবং মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে বাঙালি যুবসমাজের এই বিস্ফোরণ ইতিহাসের পৃষ্ঠায় রক্তাক্ষরে লেখা থাকবে। 

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তোলে, মেধাভিত্তিক নিয়োগের পক্ষ্যে যুক্তি দেয়। আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি উপেক্ষা করতে না পেরে সরকার শেষ পর্যন্ত ৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে এক পরিপত্রের মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে।

২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল সংক্রান্ত অংশটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা এটিকে মেধার প্রতি অবিচার এবং আন্দোলনের অর্জন নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন। এর প্রতিবাদে ৬ জুন ২০২৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে, এবং কোটা বহালের রায় বাতিলের দাবি তোলে। এই ঘটনায় আবারো কোটা ইস্যুতে দেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

৬ জুন ২০২৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। ৯ জুন ২০২৪ তারা আবারো বৃহৎ আকারে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে। মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে আন্দোলনকারীরা সরকারের প্রতি কড়া বার্তা দেন এবং ৩০ জুনের মধ্যে দাবি মানার সময়সীমা বেঁধে দেন। বিক্ষোভ শেষে একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে, যাতে হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করে। আদালত ৪ জুলাই ২০২৪ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।

১ জুলাই ২০২৪ : কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তৃতায় শিক্ষার্থীরা রায়কে মেধাভিত্তিক নিয়োগনীতির পরিপন্থি ও প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করেন। তারা সরকারের উদ্দেশে ৪ জুলাই ২০২৪ তারিখের মধ্যে বিষয়টির চূড়ান্ত সুরাহা না হলে তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। সমাবেশে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টা অবরোধ করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন।

৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করেন। ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ মামলাটি ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন।
এরপর ৫ ও ৬ জুলাই চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ছাত্র ধর্মঘট পালন শুরু হয়।

৭ জুলাই দেশজুড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ পালিত হয়। সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

৮ জুলাই ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ ও ৬টি মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। সেদিনই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে ৬৫ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় টিম গঠন করা হয়।
৯ জুলাই হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় চার ঘণ্টা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হয়। পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেডের ঘোষণা দেওয়া হয়।

১০ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ চার সপ্তাহের জন্য কোটাবিষয়ক স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন এবং ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। প্রধান বিচারপতি একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কিছু ‘ভুল হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন।
১১ জুলাই পুলিশের বাধা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যান।

১২ জুলাই (শুক্রবার) ছুটির দিনেও আন্দোলন থেমে থাকেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন।

১৪ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। একইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতি-নাতনি’ বলে অবজ্ঞা করেন। এই মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে স্লোগান ওঠে ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!’, ‘কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!’

১৫ জুলাই এইদিন ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকায় ২৯৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন। সমাবেশ ব্যর্থ করতে ছাত্রলীগও একই সময়ে পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও নীরবতা ভাঙেন; তারা পথে নেমে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান।
১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহিদ হন। একই দিনে চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক এবং ঢাকায় সবুজ আলী ও শাহজাহান পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

১৭ জুলাই সাধারণ ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিতাড়িত করে ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস’ ঘোষণা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ‘কফিন মিছিল’ পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে পণ্ড হয়ে যায়। দেশজুড়ে কফিন মিছিল, গায়েবানা জানাজা, সড়ক অবরোধ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।

১৮ জুলাই সরকারি দমন-পীড়নের মুখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন বিপর্যস্ত, তখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের হাল ধরেন। সারা দেশে বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে মোট ৪০ জন শহিদ হন। উত্তেজনা ও সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

১৯ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে ১১৯ জন প্রাণ হারান। আন্দোলন পরিণত হয় গণআন্দোলনে। নারীরা, শিশুরাও রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যাত্রাবাড়ী, সায়েন্সল্যাব, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, সাভার, রামপুরা, মহাখালীসহ সারা  দেশে। সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে রাতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়।

২০ জুলাই কারফিউ জারি থাকে, সেনা মোতায়েন অব্যাহত থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও গুলিতে আরো ৭১ জন শহিদ হন। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ককে গ্রেফতার করা হয়, অপর একজন সমন্বয়ক তিন মন্ত্রীর কাছে আট দফা দাবি পেশ করেন।

২১ জুলাই আদালত ৭ শতাংশ সংরক্ষণ রেখে কোটা সংস্কারের রায় ঘোষণা করে। যদিও এই দিনও আন্দোলন অব্যাহত থাকে রাজধানীসহ সারা দেশে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান আরো ৩১ জন। আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন, ইন্টারনেট সংযোগ পুনরায় চালু, শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়া, সমন্বয়কারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও কারফিউ প্রত্যাহার। কিন্তু একইদিন পুলিশ হেফাজতে আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ওপর চলে ব্যাপক নির্যাতন।

২২ জুলাই সরকার কোটা সংস্কার বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন প্রস্তুত করতে থাকে, তবে এর সমান্তরালে রাজপথে চলে জনগণের বিক্ষোভ। এদিন আরো ১০ জন প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন আগের গুলিবিদ্ধ।
২৩ জুলাই সরকার একদিকে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করে, অন্যদিকে দেশজুড়ে শুরু হয় গণগ্রেফতার ও হাজার হাজার মামলার হুমকি।

২৪ জুলাই নিখোঁজ থাকা ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা চোখ বাঁধা অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। একইসঙ্গে সারা দেশে ব্লক রেইড চলে, গ্রেফতার ও ভয়ভীতি ছড়ানো হয় ব্যাপকভাবে।
২৫ জুলাই আন্দোলনকারীরা বিবৃতি দিয়ে জানায়, আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন গ্রহণযোগ্য নয়। তারা স্বচ্ছ সংলাপ ও অংশগ্রহণমূলক নীতিনির্ধারণ চায়।

২৬ জুলাই এলাকাভিত্তিক ব্লক রেইড ও গণগ্রেফতার আরো তীব্র হয়। সারা দেশে হয় ৫৫৫টি মামলা, গ্রেফতার হয় ৬,২৬৪ জন। ছাত্রনেতাদের হাসপাতালে থেকেও তুলে নেয় পুলিশ।
২৮ জুলাই ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট সচল হয়। এদিন ডিবি হারুন গান পয়েন্টে ছাত্রনেতাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের মিথ্যা বিবৃতি আদায় করেন। কিন্তু আন্দোলনের অন্য সমন্বয়কারীরা অজ্ঞাতস্থান থেকে বিবৃতি প্রত্যাহার করে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

২৯ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও ছাত্ররা দাবি করে, তারা দলনিরপেক্ষ। ডিবি হারুনের মিথ্যা বিবৃতি আদায়ের প্রতিবাদে ফের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুলিশের হামলার মুখে শিক্ষক-ছাত্র একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

৩০ জুলাই জাতিসংঘ মহাসচিব হত্যার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান। সারা দেশের মানুষ মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করে, ফেসবুক প্রোফাইল লাল ফ্রেমে রাঙায়, প্রতীকী প্রতিবাদে দেশজুড়ে এক অদ্ভুত ঐক্য ও শোকের আবহ তৈরি হয়।
৩১ জুলাই ছাত্ররা ‘জবসবসনবৎরহম ঙঁৎ ঐবৎড়বং’ কর্মসূচি পালন করে শহিদদের স্মরণ করেন এবং ৯ দফার দাবির পক্ষে জনমত গঠনের কাজ শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের মুক্তির দাবিতে ডিবি অফিসে গেলে সেখানে পুলিশ তাদের হেনস্তা করে।

১ আগস্ট (৩২ জুলাই) সরকার জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে, আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ভূমিকাকে রাজনৈতিকভাবে কালিমালিপ্ত করতে। চাপের মুখে ডিবি অফিস থেকে ছয়জন ছাত্র সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হয়।
২ আগস্ট (৩৩ জুলাই) কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার ৩১টি সাংস্কৃতিক সংগঠন শাহবাগে প্রতিবাদী গান ও পথসভা করে। সারা দেশে ছাত্র-জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষ চলতে থাকে, পুলিশের গুলিতে নিহত হন ৩ জন। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ছাড়ায় ১৫,০০০।

৩ আগস্ট (৩৪ জুলাই) ৯ দফা উপেক্ষা করে দমন-পীড়ন চালু রাখার প্রতিবাদে শহিদ মিনারে বিশাল সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয়। ছাত্রনেতারা ১ দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘোষণা করেন। শেখ হাসিনা আলোচনার প্রস্তাব দেন ও কিছু মন্ত্রীর পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন, তবে ছাত্ররা তা প্রত্যাখ্যান করে। সেনাপ্রধান সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে জানান, বাহিনী আর গুলি চালাবে না। সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে ও দমনমূলক শক্তি কাজে লাগাতে চায়।

৪ আগস্ট (৩৫ জুলাই) ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে বহু আন্দোলনকারী নিহত হন। ছাত্র-জনতা প্রতিরোধে ইট-পাটকেল ছুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিছু স্থানে সেনাবাহিনীও গুলি চালায়। সারা দেশে প্রাণ হারান অন্তত ১৩০ জন। প্রতিশোধে ছাত্র-জনতা আওয়ামী নেতাদের অফিস ও বাসভবনে আগুন দেয়। পরদিন ঢাকামুখী লং-মার্চের ঘোষণা আসে।

৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) সকাল থেকে ঢাকায় খণ্ড খণ্ড ‘যুদ্ধ’ শুরু হয় ছাত্র-জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝে। কিন্তু দুপুরে জানা যায়, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সকাল সাড়ে ১০টায় শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেছেন। শাহবাগের ব্যারিকেড খুলে দিলে ঢাকার মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। দেশের নানা প্রান্তে মুজিব মুরাল ভেঙে ফেলা হয়, আওয়ামী ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে যায় বা নিহত হয়।

৬ আগস্ট এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের রক্তিম যাত্রা। আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা দেশকে নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, আর একটি জেনারেশন রাষ্ট্রের রূপান্তরের নায়কে পরিণত হয়। 

কেকে/এএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বিদ্যুতের তার যেন চড়ুই পাখির অভয়াশ্রম
রূপায়ণ সিটি ও বার্জার পেইন্টসের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
‘সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার’
নীলফামারীতে বালিকাদের ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত
সাগর-রুনির পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজউকের প্লট

সর্বাধিক পঠিত

মদনে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় সাবেক কমিশনার গ্রেফতার
জয়পুরহাটে বজ্রপাতে আলু ব্যবসায়ীর মৃত্যু
‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস
জামালপুরে পূবালী ব্যাংকের সহযোগিতায় আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষি সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তার অভিযাত্রা
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close