সাম্প্রতিক সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন এবং সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর মধ্যকার সম্পর্কে দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরো তীব্র হয় বিরোধ। এমনকি শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী অনুষ্ঠিত জাতীয় সমাবেশে এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দাওয়াত করলেও বিএনপিকে দাওয়াত করেনি জামায়াত। ফলে এ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সেই সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। আর এ অসুস্থতাকে ঘিরেই ভেঙেছে দলগুলোর দূরত্ব। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রকাশ পেয়েছে সৌহার্দের বার্তা।
জামায়াত আমিরের অসুস্থতার খবরে তাকে দেখতে এদিন রাতেই হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। জামায়াতের আমিরকে দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। ফখরুল জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জামায়াতের আমিরকে দেখতে এসেছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার হিসেবে দেখতে আসা আমাদের দায়িত্ব। রাজনৈতিক নেতারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি। সে হিসেবে আমরা দুজন ওনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আগের চেয়ে উনি অনেক ভালো আছেন। আশ্বস্ত হয়েছি। বাংলাদেশের রাজনীতির সংকটময় মুহূর্তে আমির সাহেবের সুস্থ হওয়াটা জরুরি বলে মনে করি।’
এ সময় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতের আমিরকে বিএনপি নেতারা দেখতে আসায় তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। জামায়াতের আমির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ম্যাডামকে সালাম জানিয়েছেন।’
টেলিফোনে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। তিনি শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শফিকুর রহমানকে সরাসরি ফোন করেন। আমিরের হঠাৎ অসুস্থতায় মজিবুর রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তার সুস্থতা চেয়ে দোয়া করেন।
জামায়াত আমিরের একান্ত সহকারী নজরুল ইসলাম জানান শফিকুর রহমান বর্তমানে সুস্থ আছেন। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তার চেক আপ করেছেন। তিনি বর্তমানে বিপদমুক্ত রয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাই তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় গিয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে শফিকুর রহমানের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে তার ঢাকার বাসায় যান অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। গতকাল দুপুরে তিনি জামায়াত আমিরের বাসভবনে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং দ্রুত সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির ফখরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর উত্তরের মেডিকেল থানা আমির ডা. খালিদুজ্জামান।
এ ছাড়া অসুস্থ জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধি দল ও খেলাফত মজলিসের মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের ও নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীসহ খেলাফত মজলিস নেতারা।
প্রসঙ্গত, এদিকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি নিজের সুস্থতার কথা জানান এবং যারা খোঁজখবর নিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। স্ট্যাটাসে ডা. শফিকুর রহমান লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি অনেকটাই সুস্থ। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশ্রামের জন্য বাসায় এসেছি।
তিনি বলেন, আমার এ সাময়িক অসুস্থতার কারণে সমাবেশে যে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি আমার ইচ্ছাকৃত নয়। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো কল্যাণ রেখেছেন।
স্ট্যাটাসে তিনি জানান, অসুস্থতার খবর পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশ-বিদেশের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি খোঁজখবর নিয়েছেন ও দোয়া করেছেন। হাসপাতালে স্বল্প সময় অবস্থানকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও সাক্ষাৎ করেন।
তিনি আরো জানান, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, খেলাফত মজলিসের আমির হযরত মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ, মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত আন্দোলন, এনসিপি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী ও জাতীয় নেতারা তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন।
সরকারের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিবর্গ, দেশ-বিদেশের অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী, সহকর্মী, সামাজিক-রাজনৈতিক নেতারা ও সাধারণ জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের এ ভালোবাসা ও আন্তরিকতার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন সবাইকে দান করেন।
স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি মহান আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা করে লেখেন, রাব্বুল আলামিন তার এ গোলামকে বাকি জিন্দেগি তার পছন্দমতো মানবতার জন্য কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এ ছাড়া রোববার সকালে অপর এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সভা মঞ্চে অসুস্থ হওয়ার পর মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং তার প্রেস সচিবকে হাসপাতালেও পাঠিয়েছেন। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তার এ সহমর্মিতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহ তাকে উত্তম জাযা দান করুন আমীন।’
কেকে/ এমএস