শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫,
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র      জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন      গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে      গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট      ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ : তথ্য উপদেষ্টা      যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি      শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনা আবারো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা থেকে বরগুনা পর্যন্ত, যেখানে নিহত সোহাগের পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড শুধু ‘এক ব্যক্তি’ হত্যার ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার চরম দুর্বলতা ও প্রশাসনিক অকার্যকারিতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ৯ জুলাই বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করলেও মূল পরিকল্পনাকারীরা এখনো অধরা। লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এটাকে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, নিহত সোহাগ ও অভিযুক্তরা পূর্বে একসঙ্গে ব্যবসা করতেন। পরে অংশীদারিত্ব ভেঙে যাওয়ার পর লেনদেনের বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। চাঁদাবাজির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
 
তবে নিহতের পরিবার এবং স্বজনেরা বলছেন, হত্যার পেছনে চাঁদার জোর দাবি এবং হুমকির দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে, যার যথাযথ তদন্ত হয়নি। মামলার প্রধান আসামিদের বাদ দেওয়া এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও পুলিশ তা এড়িয়ে গেছে।

ঘটনার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল অভিযুক্তদের অনেকে এখনো গ্রেফতার হয়নি। মামলার এজাহার থেকে মূল খুনিদের বাদ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যুবদলের এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ভিডিও ফুটেজে হত্যাকারীদের দেখা গেলেও পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন পুলিশ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না? কীসের চাপ, কার স্বার্থ?

অপরাধ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে জনসমক্ষে হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেখানে ‘ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব’ বলেই দায় সারলে চলবে না। এ ধরনের অপরাধের পেছনে যদি রাজনৈতিক ছত্রছায়া বা প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা থাকে, তবে তা একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাঠামোর বড় ধরনের ফাঁকফোকরকে তুলে ধরে। প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা তখনই থাকে, যখন সে অপরাধীকে দল-মত নির্বিশেষে বিচারের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু যদি ভিডিও প্রমাণ সত্ত্বেও মূল আসামিরা বাদ পড়ে, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই পেছনে কে আছে?

তারা আরো বলছেন, যে সংস্কৃতি মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করতে সাহস দেয়, সেটি রাষ্ট্রের নৈতিক ও আইনি শাসনের পরাজয়। দীর্ঘদিনের বিচারহীনতা মানুষকে বার্তা দেয় অপরাধ করে পার পাওয়া যায়।

আইজিপি বাহারুল আলম স্বীকার করেছেন, ‘আমারা ফোর্সটাকে শতভাগ কার্যকর করতে পারিনি। আমরা হয়তো ৫০ ভাগও সফল হইনি।’ অর্থাৎ সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর পুলিশের মনোবল ও কার্যকারিতা এখনো পুনঃস্থাপিত হয়নি। এমন স্বীকারোক্তি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামোর ভয়াবহ দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অপরাধ বিশ্লেষক বলেন, পুরান ঢাকার মতো কেন্দ্রীয় এলাকায় দিনের আলোয় প্রকাশ্যে একজনকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়া শুধুই অপরাধীদের সাহস নয়, এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তাদের অবজ্ঞার প্রতিফলন। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জাতিকে স্থিতিশীলতা দেওয়া, কিন্তু তারা রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দুই ক্ষেত্রেই ব্যর্থ।’

এ ঘটনার পরই দেখা যায়, বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন পাঁচজন সংশ্লিষ্ট নেতাকে বহিষ্কার করেছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপরাধের তদন্তে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়, তথাপি দলীয় পরিচয়ের কারণে তদন্তে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি একে ‘সংগঠিত সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির’ অংশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, ‘ধর্ম, গুজব ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব একত্রে সমাজকে আতঙ্ক ও দমননীতির পথে ঠেলে দিচ্ছে।’

লাল চাঁদের স্ত্রী লাকি বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারালাম। কে দেবে আমাদের নিরাপত্তা?’ ১০ ও ১৪ বছর বয়সি দুই সন্তান এখন ভয়, অনিশ্চয়তা আর শোকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। স্বজনদের অভিযোগ, হত্যাকারীদের অনুসারীরা এখনো ফোনে হুমকি দিচ্ছে। বরগুনার ইসলামপুর গ্রামে তার দাফনের সময় বাড়িতে চলছিল শোক আর শঙ্কার ছায়া। 

এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে রাজনীতিতে দুই মেরুর প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট। একদিকে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি দাবি করছে, এটি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং সংগঠিত সহিংস রাজনীতির ফল। কমিটির মতে, রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। তারা অভিযোগ করছে, প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রিয় থেকে দেশে ‘অরাজকতা জিইয়ে’ রাখছে। যদিও যুবদল এ ঘটনায় পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে, তবুও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দায় স্বীকারের সংস্কৃতি কতটা কার্যকর?

এদিকে রাজধানীর শ্যামলীতে ঘটে গেছে এক চরম নৃশংস ও চমকে দেওয়ার মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারীরা শুধু টাকা-পয়সা বা ব্যাগই নয়, ভুক্তভোগীর গায়ের জামা ও পায়ের জুতাও ছিনিয়ে নিয়েছে। পুরো ঘটনা ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায় এবং সেই ভিডিও ফুটেজ এখন ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে শ্যামলী ২ নম্বর রোডে। তিন ছিনতাইকারী একটি মোটরসাইকেলে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটায়। শনিবার শেরে বাংলা নগর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক জানান, ভুক্তভোগী যুবকের নাম শিমিয়ন (২৭)। তিনি একমি ল্যাবরেটরিতে কেমিস্ট হিসেবে চাকরি করেন। শ্যামলী দুই নম্বর রোডে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। শুক্রবার সকালে অফিসে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন।

এ ঘটনা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে- রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় এভাবে একজন মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া, এমনকি জামা-জুতা পর্যন্ত ছিনিয়ে নেওয়ার সাহস কোথা থেকে পায় দুর্বৃত্তরা? এটি রাজধানীর আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির চিত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি দাবি করলেও ছিনতাইকারীরা যেন দিনে-দুপুরেও বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  আইনশৃঙ্খলা   রক্ষা   ব্যর্থ   অন্তর্বর্তী সরকার  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন
ডিএনএ’র মাধ্যমে সনাক্ত হবে মরদেহ, পরিবার চাইলে নিতে পারবেন গ্রামে
যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া, সাগরের তলদেশের শক্তিতে কে এগিয়ে?
আশুলিয়ায় আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার
চাটমোহরে ভাঙা রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন

সর্বাধিক পঠিত

‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি’
‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
একমণ চালের দামেও মিলছে না এক কেজি ইলিশ
শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল
সালথায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন গ্রেফতার

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close