গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিচার্স অ্যান্ড উইং (র)। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের কারণে বাংলাদেশে কার্যক্রম পিছিয়ে নিতে বাধ্য হয় ভারতীয় এ সংস্থাটি। তবে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। অভ্যুত্থানের ১১ মাস পর ফের দেশে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে র’য়ের ষড়যন্ত্র।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি র’য়ের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গোপনে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বাংলাদেশ ছিল র’য়ের স্বর্গভূমি। দেশের রাজনীতি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণ। বাংলাদেশকে ব্যবহার করে র’য়ের মাধ্যমে ভারত তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করত। বাংলাদেশ গুম-খুনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে র’রেয় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গুম, হত্যায় র’য়ের রয়েছে সংশ্লিষ্টতা। আলোচিত ‘আয়না ঘর’কাণ্ডেও যোগ রয়েছে ভারতীয় এ গোয়েন্দা সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে র’য়ের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা। যার মধ্য দিয়ে তারা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে।
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, সম্প্রতি তাতে ভাটা পড়েছে। নানা ইস্যুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া দেশে হঠাৎ করে নৈরিাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে; বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণার পর দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি চেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, নাশকতার মতো ঘটনা বিশ্লেষকদের বিচলিত করছে। তারা বলছেন, এসব ঘটনার পেছনে পরাজিত শক্তির ইন্ধন রয়েছে।
এ ছাড়া সীমান্তে অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষে ভারত ধারাবাহিকভাবে পুশইন চালিয়ে যাচ্ছে। বন্ধ হচ্ছে না সীমান্ত হত্যাও। এ সবই করা হচ্ছে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও, র’য়ের অপতৎপরতা থেমে নেই। জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়, তাতে র’য়ের ভূমিকা রয়েছে। শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় তখন। কিন্তু ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভারত সরকার। হাসিনার পরাজয়কে তারা নিজেদের পরাজয় হিসেবে দেখছে।
ওই বিশ্লেষক আরো বলেন, নিজেদের পরাজয়ের শোধ নিতে ও বাংলাদেশে ফের নিজেদের পুতুল তরকার বসাতে মরিয়া ভারত র’কে সক্রিয় করেছে। সম্প্রতি র’য়ের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসেছেন বলে যে খবর জানা যাচ্ছে, তা বেশ আশঙ্কার। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রবেশ করে বিভাজন তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের মধ্যে নানাভাবে নাশকতা তৈরি করবে। যাতে সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কিছু লক্ষণ বর্তমানে দেখাও যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারা-রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে মতভেদ ভুলে ফের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। না হলে র’রেয় অপতৎপরতা ঠেকানো যাবে না।
কেকে/ এমএস