ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন তারিখ নিয়ে শঙ্কা, সংশয়, সন্দেহ, অনিশ্চয়তা যেন পিছু ছাড়াছে না। ঘুরেফিরে আলোচনায় নির্বাচন কবে হচ্ছে? ফেব্রুয়ারিতেই কি নির্বাচন হচ্ছে এমন প্রশ্ন আবারও সামনে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গত ১২ জুন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রশ্নে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনা থাকলেও আবার নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনিত হচ্ছে। এ অজুহাতে নিবাচন পেছানোর পাঁয়তারা চলছে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সুযোগে বলা হবে এখন তো নির্বাচনের পরিবেশ নেই। পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক হলে নির্বাচন দেওয়া হবে। তা ছাড়া হুট করেই আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সামনে আনা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো নজির নেই। এ ছাড়া সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এ পদ্ধতির সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত নয়।
সরকার এবং বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে যৌথ ঘোষণার পর প্রায় এক মাস হতে চলছে। এ সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে ফেব্রুয়ারি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দিন দিন শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে অনিশ্চয়তাও।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রতিক্রিয়া বিএনপি এবং দলটির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেবে এ নিয়ে এখানো আলোচনার টেবিলে ওঠেনি। দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, তাদের মধ্যে ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই। দলগত নাকি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা এ নিয়েও আলাপ করেননি। তারা বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি। বিএনপির পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, সরকারবিরোধী সরকার রাজনৈতিক দলকে নিয়ে তারা নির্বাচন এবং সরকার গঠন করতে চায়। তবে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ দলের ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সম্ভব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন নিজ নিজ নির্বাচনি আসনে।’
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যমত নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে যেহেতু কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই, সেহেতু শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার প্রশ্ন তো আসবেই। তিনি বলেন, অপ্রসাঙ্গিকভাবেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন সামনে আনা হচ্ছে। উদ্ভট বিষয় কোনো অন্তবর্তী সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে নাকি। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। সেই সুযোগ নিয়ে যদি বলা হয় এমন অবস্থায় নির্বাচন করা যাবে না। এতে করে কোনো লাভ হবে না নৈরাজ্য আরো বাড়বে। রাজনৈতিতে আরো জটিল পরিস্তিতির তৈরি হতে পারে।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষ এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নয়। তারা আসনভিত্তিক প্রতিনিধিদের অভ্যস্ত। কারণ তারা তাদের জনপ্রতিনিধির সঙ্গে দেন দরবার করতে পারবে। ফলে এটাই চায় তারা। এজন্যই উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির কথা বলছি। তাও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করতে বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের ঐক্য অটুট আছে। দলগত নাকি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেব এ নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করেনি।
বিএনপিকে একটি মহল সংস্কারবিরোধী বলে প্রচার করছে দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে জনমনে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থাবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে আমরা একমত হয়েছি এবং ১৪টিতে আংশিকভাবে একমত হয়েছি। ৬৪টিতে আমরা ভিন্নমতসহ একমত হয়েছি। অর্থাৎ এসব বিষয়ে পরিবর্তনে একমত হয়ে বিভিন্ন আইনে ও বিধিতে সংশোধনী অধিকতর কার্যকর হবে তা প্রস্তাব করেছি। ২৪টি বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক অন্যান্য সংস্কারগুলো বেশিরভাগ ইস্যুতেই বিএনপি একমত পোষণ করেছে।’
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোট ইস্যুতে কোনো তোড়জোর নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইলেকশনের তারিখ নিয়ে সকালে একবার বলেছি। ইলেকশনের তারিখ তো আমিও জানি না। ভোটের দুই মাস আগে একদম পুরা ডিটেলস জানিয়ে দেব কোন দিন ভোট হবে, কোন দিন নমিনেশন হবে। সুতরাং, একটু ধৈর্য ধরেন। প্লিজ ওয়েট অ্যান্ড সি। যথাসময়ে আপনারা জানতে পারবেন।’
কেকে/ এমএস