সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ভারী বর্ষণ-বন্যায় মেক্সিকোতে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭      ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
নির্বাচন ইস্যুতে ফের ইউটার্ন জামায়াতের
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামী। দ্বিতীয় বৃহৎ দল বললেও ভুল হবে না। সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে এ দলটির বিভিন্ন সময় সাংঘর্ষিক বক্তব্যে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না তারা আসলে কী চায়!

পট পরিবর্তনের পর থেকে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে সোচ্চার ছিল দলটির নেতারা। তবে মাঝখানে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির শীর্ষ দুই নেতা। এরপর তাদের সুরে কিছুটা পরিবর্তন আসে, কণ্ঠে ওঠে দ্রুততম সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি। এরপর কেটে গেছে বেশখানিক সময়। তবে এবার আবার নির্বাচন ইস্যুতে অনেকটা ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে দলটি। এমন আভাস মিলেছে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে।

শুক্রবার রংপুরের সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবতরণের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কিসের? কী নির্বাচন হবে? এ জন্য আগে অবশ্যই নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’ 
 
এসময় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্যই সংস্কারের প্রশ্নগুলো এসেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি, যদি মৌলিক বিষয়গুলোতে কার্যকর সংস্কার হয়, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ একটা ভালো নির্বাচন হবে। এবং যদিও -এর কোনো সুযোগ নেই। সংস্কার করতে হবে এবং ভালো নির্বাচনও করতে হবে।’

এ ছাড়া রংপুর জনসভায় যোগ দিয়ে সেখানেও একই সুরে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেজন্যই আমরা সংস্কারের কথা বলছি। মৌলিক সংস্কার ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন। আগে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, অবশ্যই রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে এবং সবার অংশগ্রহণে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আয়োজিত এ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

জামায়াত আমির বলেন, দেশে এখন মব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিকে কীসের নির্বাচন! এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা সব সময় মব পলিটিক্সের ঘোর বিরোধী। এটা ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা বলে আসছি। আমাদের চোখের সামনে, এখন দেশের এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই অবস্থায় কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। সেই মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। আমরা মৌলিক সংস্কার করে ছাড়বো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। আমরা সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। 
জামায়াত আমিরের এ বক্তব্যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও জন্ম দিয়েছে কৌতূহল। অনেকেই বলছেন, যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আলোচনা জোরালো হচ্ছে তখন হঠাৎ একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল জামায়াত? তবে কী নির্বাচন ইস্যুতে আবারো ইউটার্ন নিল দলটি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে অঘোষিত প্রস্তুতি। নির্বাচনের প্রস্তুতি কোন দল কীভাবে নিচ্ছে, ভোটের মাঠ নিয়ন্ত্রণে নানা কৌশল নিয়েও জনগণের মধ্যে জোরালো আলোচনা হচ্ছে। এরইমধ্যে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবিতে জোরালো অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল। তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করছে আরো কয়েকটি মধ্যপন্থি ছোট রাজনৈতিক দলও। যার প্রবল বিরোধিতা করছে বিএনপি এবং দলটির ঘনিষ্ঠ জোটভুক্ত অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি বিতর্কের মধ্যেই জামায়াতে আমিরের করা এ মন্তব্য সব বিতর্ককে ছাড়িয়ে গেছে। 

১৭ বছর পর রংপুরে বড় পরিসরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে ঢল নামে হাজারো মানুষের। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। আশপাশের দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে মানুষের অবস্থান। নানা বয়সি নারী-পুরুষ, ছাত্র, শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের পদচারণে জমে ওঠে জনসমাবেশ। তাদের কণ্ঠে ছিল পরিবর্তনের প্রত্যাশা, হাতের প্ল্যাকার্ডে ছিল দাবি ও প্রতিবাদের ভাষা। চার দফা দাবি সামনে রেখে আয়োজিত এ বিভাগীয় জনসভাকে কেন্দ্র করে রংপুর নগরীসহ আশপাশের জেলায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ ও আলোচনা।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদসহ নিহত ব্যক্তিদের হত্যার বিচার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও রাজনৈতিক সংস্কার, উত্তরাঞ্চলের বহু দিনের দাবি ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার।

এর আগে জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দূরদূরান্ত থেকে আসেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস, ট্রাকগুলো রংপুর মেডিকেল মাঠ, সিও বাজার, মডার্ন মোড়, মাহিগঞ্জ, কামাল কাছনায় রেখে হেঁটে জিলা স্কুল মাঠে যান মানুষ। এতে শহরে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

বেলা ৩টায় জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রধান বক্তা সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। 

মহানগর ও জেলা জামায়াতের যৌথ আয়োজনে জনসভাস্থলে নির্মাণ করা হয় বিশাল মঞ্চ। নারীদের জন্য ছিল আলাদা জায়গা ও পর্দার ব্যবস্থা। মাঠে প্রবেশের জন্য খোলা হয় নতুন দুটি পথ। জনসভাকে কেন্দ্র করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন এবং বড় বড় বিলবোর্ড লাগানো হয়। আয়োজকেরা জানান, জনসভা সফল করতে গঠন করা হয় ১৩টি উপকমিটি, ছিল মেডিকেল ইউনিট ও ভলান্টিয়ার টিম। সকাল থেকেই জনসভাস্থলে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে জমায়েত হতে দেখা যায় নানা বয়সি মানুষকে। তাদের দাবি, দীর্ঘ ১৭ বছর দেশে চলেছে দমন-পীড়ন, গুম ও খুনের রাজনীতি। সেই বাস্তবতা তুলে ধরে তারা বলছেন, ‘জুলাই গণ-আন্দোলনের’ চেতনায় দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করতে চায় জামায়াত। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ৩৩টি আসনে বিজয়ের লক্ষ্যে এই জনসভাকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছে দলটি। একইসঙ্গে রংপুরবাসীর কাছে জামায়াতের রাজনৈতিক রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বার্তাও পৌঁছে দিতে চান তারা।

সভায় কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। আজহারুল ইসলাম বলেন, যারা জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে৷যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  নির্বাচন ইস্যু   ইউটার্ন   জামায়াত  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নালিতাবাড়ীতে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত
বাগেরহাটে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উদযাপন
ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল বরখাস্ত
শীর্ষ মানবপাচার চক্রের মূল হোতা আটক
বিপর্যস্ত বাংলাদেশের সামনে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close