মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সে দেশের ১০টি জায়গায় ইরান হামলা করে, বেশি ক্ষতি হয়েছে তেল আবিব ও হাইফায়। আর এ হামলায় তারা চতুর্থ প্রজম্মের ক্ষেপণাস্ত্র ‘খাইবার’ ব্যবহার করেছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক আহত হওয়ার খবর দিলেও কারো মৃত্যুর খবর দেয়নি প্রচণ্ড সেন্সরশিপে থাকা ইসরায়েলের গণমাধ্যম।
বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হামলা :
রোববার ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।
এ ছাড়া অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে সাহায্যকারী ঘাঁটি, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র।
ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিভিশন জানায়, দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের ১০ স্থানে হামলা চালিয়েছে ইরান : ইসরায়েলের ১০টি স্থানে রকেট ও গোলা হামলা হয়েছে। কারমেল, হাইফা, তেল আবিব ও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে এসব হামলা হয়েছে। দেশটির বেশিরভাগ এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলজুড়ে বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুকে উদ্দেশ্য করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে দেশটি। ইরানের এ হামলার মধ্যে জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে।
এ ছাড়া তেল আবিব ও হাইফায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে দুটি দফায় মোট ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। প্রথম দফায় ২২টি এবং দ্বিতীয় দফায় ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
হামলার লক্ষ্যবস্তুও ছিল বেশ বিস্তৃত। সিরিয়ার দখলিকৃত গোলান হাইটস অঞ্চল থেকে শুরু করে আপার গ্যালিলি, আবার উত্তর ও মধ্য উপকূলীয় এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে হামলা চালানো হয়।
এ পর্যন্ত ১০টি ভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বা বড় আকারের শার্পনেলের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে তেল আবিব ও হাইফা শহরে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি। তবে ঠিক কোন ধরনের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, এমন সতর্কবার্তার পরই জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
‘খাইবার’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান :
ইসরায়েলের ওপর সাম্প্রতিক হামলায় ইরান খায়বার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছে। কিছুক্ষণ আগে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের জারি করা একটি বিবৃতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে প্রথমবারের মতো ‘খাইবার’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা জানানো হয়েছে।
খাইবার ক্ষেপণাস্ত্রটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারের সর্বশেষ মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি। আনুষ্ঠানিকভাবে খোররামশহর-৪ নামে পরিচিত। এটি দেশীয়ভাবে উৎপন্ন খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের ফোর্থ জেনারেশন।
২০০০ কিলোমিটার পাল্লার খায়বার ক্ষেপণাস্ত্র দেড় হাজার কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম, যা ইরানের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভারী ওয়ারহেডগুলোর একটি।
তরল জ্বালানিচালিত এ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে উড়ন্ত অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এর পাশাপাশি বায়ুমণ্ডলের বাইরে ওয়ারহেডের গতিপথ সামঞ্জস্য করার সক্ষমতাও রয়েছে এ ক্ষেপণাস্ত্রটির। ইরানে নির্মিত এর আগের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর তুলনায় অনেকটাই নির্ভুলভাবে লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এটি।
প্রযুক্তিগতভাবে খাইবারের সর্বোচ্চ গতি বায়ুমণ্ডলের বাইরে আনুমানিক ম্যাক ১৬। যা শব্দের গতির ১৬ গুণ এবং এর ভেতরে আনুমানিক ম্যাক ৮। প্রযুক্তিগতভাবে এ ক্ষেপণাস্ত্র এতটাই শক্তিশালী যে প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে এ ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো বেশ কঠিন।
কেকে/এআর