সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ঘুষ-দুর্নীতির শীর্ষে বিআরটিএ-পুলিশ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম আপডেট: ২০.০৬.২০২৫ ৫:৩৫ পিএম
ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৩৮.৬২ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২২.৭১ শতাংশ। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ, যেখানে ৬৩.২৯ শতাংশ সেবাগ্রহীতা ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। এরপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৬১.৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিস ৫৭.৪৫ শতাংশ এবং ভূমি অফিস ৫৪.৯২ শতাংশ। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই সার্ভে প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)-এর ১৬ নম্বর অভীষ্টের ছয়টি সূচক মূল্যায়নে এই জরিপ পরিচালিত হয়।

দেশের ৬৪টি জেলার ১৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানায় সাক্ষাৎকার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৮৪ হাজার ৮০৭ জন নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে সংগৃহীত এই তথ্য দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধ, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচার ও বৈষম্য বিষয়ে একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার জানামতে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য হয়। আর সেটি বেশিরভাগই বদলিকে কেন্দ্র করে। আমি গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছি, তারা বলেছে- এখানে মধ্যস্বত্বভোগী অনেক।’ তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার ধারণা ছিল সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। তারপরও জরিপে উঠে এসেছে ৩১ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়। নারীদের কাছে তুলনামূলক ঘুষ কম চাওয়া হয়েছে। তুলনামূলক উচ্চবিত্তরা ঘুষ দেন বেশি। ঘুষ দিয়ে তারা মূলত সেবা কিনে নেন। পুলিশের দুর্নীতিতে হতাশা প্রকাশ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, তারা তো এখনো দাঁড়াতেই পারেনি, তারপরও তারা দ্বিতীয় অবস্থানে এটি ভালো কথা নয়। 

নিরাপত্তাবোধে বাড়িতে স্বস্তি, পথে লিঙ্গবৈষম্য: জরিপ অনুযায়ী, ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করেন। তবে এই নিরাপত্তাবোধে স্পষ্ট লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য দেখা যায়, পুরুষের ক্ষেত্রে এটি ৮৯.৫৩ শতাংশ হলেও নারীদের ক্ষেত্রে তা ৮০.৬৭ শতাংশ। শহর ও গ্রামভেদেও কিছু পার্থক্য রয়েছেÑ শহরে ৮৩.৭৫ শতাংশ ও গ্রামে ৮৫.৩০ শতাংশ নাগরিক নিরাপদ বোধ করেন। অপরদিকে, সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নিরাপত্তাবোধের হার ৯২.৫৪ শতাংশ, যা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৯১.৮২ শতাংশ ও ৯৩.৩৫ শতাংশ।

মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা : মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন তারা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এই হার পুরুষদের মধ্যে ৩১.৮৬ শতাংশ, অথচ নারীদের মধ্যে তা ২৩.০২ শতাংশ- একটি স্পষ্ট লিঙ্গবৈষম্যের চিত্র। পাশাপাশি ২১.৯৯ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন যে তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় সহজলভ্যতা, মান নিয়ে প্রশ্ন: গত এক বছরে ৪৭.১২ শতাংশ নাগরিক অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৮২.৭২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯.৩৪ শতাংশ সেবার ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তবে সেবার মান, স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় প্রদান ও আচরণে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৫.০৭ শতাংশ, ৬৩.১৩ শতাংশ ও ৬৩.১৯ শতাংশ, যা উন্নয়নের সুযোগ নির্দেশ করে।

সরকারি শিক্ষায় সন্তুষ্টি ও প্রবেশাধিকারে ইতিবাচক চিত্র : ৪০.৯৩ শতাংশ নাগরিক জানান, তাদের অন্তত একটি শিশু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। প্রাথমিক স্তরে ৯৬.৪৬ শতাংশ নাগরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজে প্রবেশের কথা বলেন এবং ৯২.৬৬ শতাংশ শিক্ষাব্যয় সামর্থ্যরে মধ্যে বলে উল্লেখ করেন। মাধ্যমিকে এই হার কিছুটা কম হলেও এখনও যথেষ্ট ইতিবাচক (৮২.২০ শতাংশ ও ৮০.৮৬ শতাংশ)। মানসম্পন্ন শিক্ষা বিষয়ে সন্তুষ্টির হার প্রাথমিক স্তরে ৬৭.৯৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৭১.৮৬ শতাংশ।

অন্যান্য সরকারি সেবায় প্রাপ্তিযোগ্যতা ভালো, মানে ঘাটতি : পরিচয়পত্র ও নাগরিক নিবন্ধনের মতো সেবায় ৭৮.১২ শতাংশ নাগরিক প্রাপ্তিযোগ্যতায় সন্তুষ্ট এবং ৮৬.২৮ শতাংশ ব্যয়কে সামর্থ্যরে মধ্যে মনে করেন। তবে কার্যকর সেবা প্রক্রিয়া, সময়মতো সেবা ও সম-আচরণে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬২.৬০ শতাংশ, ৫১.২৮ শতাংশ ও ৫৬.২৬ শতাংশ- যা মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকারে ইতিবাচক চিত্র : গত দুই বছরে ১৬.১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধের সম্মুখীন হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৩.৬০ শতাংশ নাগরিক বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে ৪১.৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) এবং ৬৮.৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী) পন্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন।

বৈষম্য ও হয়রানির শিকার নাগরিক এক-পঞ্চমাংশ: গত এক বছরে ১৯.৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। শহরাঞ্চলে (২২.০১ শতাংশ) এই হার গ্রামাঞ্চলের (১৮.০৭ শতাংশ) চেয়ে বেশি। আর্থ-সামাজিক (৬.৮২ শতাংশ) এবং লিঙ্গভিত্তিক (৪.৪৭ শতাংশ) বৈষম্য সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে। বৈষম্যের স্থান হিসেবে শীর্ষে রয়েছে পরিবার (৪৮.৪৪ শতাংশ), গণপরিবহন বা উন্মুক্ত স্থান (৩১.৩০ শতাংশ) এবং কর্মস্থল (২৫.৯৭ শতাংশ)। কিন্তু মাত্র ৫.৩৫ শতাংশ ভুক্তভোগী তাদের অভিজ্ঞতা রিপোর্ট করেছেন।

বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, সিপিএস ২০২৫-এর ফলাফল এসডিজি ১৬-এর ৬টি সূচকে দেশের অগ্রগতি মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ হবে। একই সঙ্গে এই তথ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার ও প্রশাসনিক কাঠামোয় নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে। জাতিসংঘের গ্লোবাল কাস্টোডিয়ান প্রতিষ্ঠানসমূহ UNDPUNODC এবং OHCHR-এর নির্দেশনা অনুযায়ী জরিপের নকশা, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়েছে। এতে নাগরিকদের গোপনীয়তা ও মতামতের মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেকে/এএস


মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close