দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতির সংক্রমণ আবারো বাড়ছে। তার সঙ্গে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপও। প্রতিদিনই নতুন আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এতে করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৫ হাজার ৯৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। শুধুমাত্র গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত এক দিনেই ২৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং একজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরো ৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট ১৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় এসব শনাক্ত হয়। তবে এ সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ প্রতিদিন লাখো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একসঙ্গে অবস্থান করেন। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। অনেকেই সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠানো নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করেছে। এতে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণার কাজে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে।
গতকাল জারি করা এই নির্দেশনায় মাউশির সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) খালিদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে প্রচারণামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমরোধে বলা হয়েছে, বার বার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড); জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা; আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা; অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা; হাঁচি-কাশির সময় বাহু/টিস্যু/কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে।
তবে বাস্তবে এসব নির্দেশনা কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল নির্দেশনা পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না; প্রয়োজন কঠোর তদারকি এবং অভিভাবক ও স্থানীয় প্রশাসনের অংশগ্রহণে কার্যকর সচেতনতামূলক কর্মসূচি।
এ বিষয়ে কথা হলে উত্তরার দক্ষিণখান এলাকার এক অভিভাবক সেলিনা বেগম খোলা কাগজকে বলেন, আমার ছেলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। স্কুলে স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই, মাস্কও কেউ পরে না। এখন করোনার নতুন ঢেউ আর ডেঙ্গুর প্রকোপ দুই মিলে আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। প্রতিদিন তাকে স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে।
মোহাম্মদপুরের এক শিক্ষার্থী রাফসান জানান, ক্লাসে একজন হাঁচি-কাশি করলেই সবাই ভয় পায়। কিন্তু স্কুলে এসব ঠেকানোর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।
অভিভাবক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ বলে সব ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবে ক্লাসরুমে গাদাগাদি, স্প্রে নেই, আর ডেঙ্গুর এই মৌসুমে মশার উপদ্রবও ভয়াবহ।
তবে এ ধরনের অভিযোগ শুধু ঢাকাতেই নয়; নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতেও পাওয়া যাচ্ছে। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ না থাকায় তারা সন্তানদের পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ও ডেঙ্গু উভয়ই ভয়াবহ ভাইরাল সংক্রমণ। একে ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে, পরিষ্কার পানি ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা জরুরি। তা না হলে একজন শিক্ষার্থী থেকে অনেকেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
মাউশির এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন তদারকি চলবে এবং প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
কেকে/এআর