শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫,
২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলা English

শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
শিরোনাম: ঢাকায় নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না কোনো ঈদ জামাত      ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, ভোগান্তি ঘরমুখো মানুষের      শেরপুরে ৭ গ্রামে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত      চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন      হজের খুতবায় মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতির আহ্বান      ঈদকে সামনে রেখে ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ      লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফার ময়দান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
স্বপ্নের তিন শূন্যের বাজেট
সাজেদ রোমেল
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৯:০৪ এএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

আগের বছরের চেয়ে আকার কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

নজিরবিহীন এমন বাজেট দিয়ে তিনি আগামী বাজেটে অবশ্য আয়ের লক্ষ্য আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি দিয়েছেন। আগের বছরের চেয়ে ঘাটতিও কমিয়েছেন তিনি, নামিয়ে এনেছেন জিডিপির সাড়ে তিন শতাংশে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকারও কমেছে। বৃহৎ কোনো প্রকল্পও নেই দেশের ৫৫তম বাজেট প্রস্তাবে। প্রবাসী আয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত মোটামুটি হলেও রফতানি, বিনিয়োগ, দেশি-বিদেশি কর্মসংস্থানে কাহিল অবস্থায় দেশ। বিদেশি ঋণও পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। এ অবস্থায় সরকার বাধ্য হয়েই ছোট আকারের বাজেট দিয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যও ছোট করা হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতি এক অংকে ধরে রাখার প্রত্যয়ও আছে অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায়। এসব কিছু মিলে ড. সালেহউদ্দিন যে বাজেটটি দিয়েছেন, তার পুরোটাই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিখ্যাত তিন শূন্য তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়েছে। 

খরচের রাশ টানা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটে:

গত বছরের মূল বাজেটের চেয়ে সাত হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এবার বাজেট দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার। গতবারের চেয়ে দশমিক ৮৭ শতাংশ কম হলেও সংশোধিত বাজেট ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকার চেয়ে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। 

নতুন বাজেটে অনুন্নয়নমূলক খাতে ৫ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ খরচ। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ঋণ ও সুদ পরিশোধে প্রায় আগের সরকারের হিসাবটাই নিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন। বৈদেশিক সুদ তিনি রেখেছেন আগের বাজেটের এক্কেবারে হুবহু, ২২ হাজার কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণে ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিনি বরাদ্দ রেখেছেন ১ লাখ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে, এডিপি, এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্প এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ উন্নয়নমূলক ব্যয় পুরো লাগাম টেনে ধরেছেন অর্থ উপদেষ্টা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে তিনি বরাদ্দ করেছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি বাবদ তিনি খরচ করতে চান ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এখানেও তিনি গতবারের চেয়ে কমিয়েছেন ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এমনকি কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে কমানো হয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা, বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৫৫৫ কোটি টাকা। 

সব কমিয়ে আয় বাড়াতে মরিয়া অর্থ উপদেষ্টা 

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯ শতাংশ।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআর তাদের উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। কর অব্যাহতি যুক্তিসংগত করা এবং মধ্যমেয়াদি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চেষ্টা চলছে। এসব প্রচেষ্টা সফল করতে জনবল বাড়িয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। কর-অব্যাহতির সুবিধা ধীরে ধীরে কমানো, করজাল বাড়ানো এবং যেখানে সম্ভব সেখানে একক ভ্যাট হার চালুর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজস্ব আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ হবে এনবিআরের মাধ্যমে। বাকি ৬৫ হাজার কোটি টাকা আসবে অন্যান্য উৎস থেকে।

অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবারের বাজেট তুলনামূলকভাবে ছোট রাখা হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই বাজেটের লক্ষ্য নিম্ন আয়ের মানুষদের কিছুটা ‘পরিত্রাণ’ দেওয়া।

বাজেট ঘাটতি পূরণে যে ছক এঁকেছে সরকার

বাজেটের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর ভরসা করছে সরকার। এ ছাড়া এ ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে। ছক অনুযায়ী, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসাবে নেবে ৯৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

আসন্ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এরপর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় এত বড় ঋণের চাপে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার বৈদেশিক ঋণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
 
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে কমবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও

মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। 

বাজেট প্রস্তাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। 
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। 

তিনি বলেন, আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুনেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।

বাজেটে ‘তিন শূন্য’ বাস্তবায়নের স্বপ্ন:

শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নির্গমন, এই তিন লক্ষ্য বাস্তবায়ন ২০২৫-২৬‘ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অন্যতম উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সমাজ গঠনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে এবারের বাজেটে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে একটি উন্নত সমাজ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে আমরা যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছি, তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বনভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ। যার মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন হবে এ দেশের মানুষের জীবনমানের এবং মুক্তি মিলবে বৈষম্যের দুষ্টচক্র থেকে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস টেকসই উন্নয়নের ‘তিন শূন্য’ তত্ত্ব দিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ চালুর জন্য বিশ্বজুড়ে আলাদা সম্মান পেয়েছে তার এই ‘তিন শূন্য’ বা থ্রি জিরো তত্ত্ব।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যে স্বপ্নকে ধারণ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিত রচিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর, বাসযোগ্য আবাসস্থল রেখে যেতে চাই, জনগণের জীবনযাত্রায় নিয়ে আসতে চাই এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের ঢেউ। আমরা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবারের বাজেট সাজানোর চেষ্টা করেছি।’

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ‘আমাদের এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে আমরা এবারের বাজেটে প্রাধান্য দিয়েছি মানুষকে।’

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ঢাকায় নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না কোনো ঈদ জামাত
মুচলেকা ভেঙে ঈদ উদযাপন, সেনাবাহিনীও পুলিশের পাহারায় জামাত
যমুনার পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, দুশ্চিন্তায় কৃষক
সৌদির সঙ্গে মিল রেখে রৌমারীতে ঈদ উদযাপন
সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হলো রামুর ডাকাত শাহীন

সর্বাধিক পঠিত

ইবির পরিবেশবাদী সংগঠনের ভাবনায় ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট
নীলসাগর গ্রুপের ডোর টু ডোর প্রকল্পের ইনচার্জের মাতার ইন্তেকাল
বাঞ্ছারামপুরে প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার বিতরণ
টঙ্গীতে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত ৩০

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close