আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণাসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক।
তাদের দাবিগুলো হলো বর্তমান নারী কমিশন বাদ দিয়ে নতুন করে কমিশন গঠন করে যেখানে আলেম ও ওলামাদের যুক্ত করা, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন ও বহুত্ববাদ বাতিল করা, শাপলা চত্বরের হত্যার বিচার করা, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করে তাদের বিচার করা, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, চিন্ময় দাসের জামিন বাতিল করা, আওয়ামী লীগের আমলে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার করা, প্রাইমারি থেকে ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, রাখাইনে করিডোর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ও কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা। নারী অধিকার সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাব বাতিল, শাপলা ট্র্যাজেডিসহ আওয়ামী শাসনামলে সব গণহত্যার বিচারসহ চার দফা দাবিতে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এর আগে শনিবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশ সফল করতে দলে দলে সমাবেশস্থলে আসেন। এরপর সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় সমাবেশ। এতে হেফাজতের সিনিয়র নেতারাসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এরপর দুপুর ১টার পর হেফাজতের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরীর মোনাজাতের মাধ্যমে মহাসমাবেশ শেষ হয়।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘এসব দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, প্রয়োজনে জেহাদ করব।’
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, জাতি রাস্তায় নামলে, হেফাজত রাস্তায় নামলে কোনো উপদেষ্টা দেশে থাকতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুসলিমদের পক্ষ থেকে দাবি করছি, যে নারী সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। এই কমিশন রেখে কোনো সংস্কার হবে না। আমরা দাবি করছি, এই কমিশন যে প্রস্তাব পেশ করেছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। জাতি তা প্রত্যাহার করেছে। আর কোনো বিকল্প নেই।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘যদি দাবি মানা না হয়, তাহলে আমরা পরবর্তী সময় আরো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করব। আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের নামানোর ব্যবস্থা করবেন না। যদি জাতি নেমে যায়, হেফাজত নেমে যায় তাহলে কোনো উপদেষ্টা এ দেশে থাকতে পারবেন না।’
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলছি, আগামী দুই মাসের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সব নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।’
মামলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ড. ইউনূসের সঙ্গে আমরা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকবার সাক্ষাৎ করে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করেছি, আমাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। প্রফেসর ড. ইউনূস আপনি কি সেই কথা ভুলে গিয়েছেন, কয়েক মাস মাস আগেও আমাদের সামনে আদালতের পাড়ায় ঘুরতেন।
মহাসমাবেশে হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মুফতি ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন নায়েবে আমির মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, মুফতি জসীম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, সরোয়ার কামাল আজিজি, মহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমেদ আলী কাসেমী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, চরমোনাই পীরের সাহেবজাদা সৈয়দ ইসহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের, মাহবুব জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল কাদের, মাওলানা আইউব বাবুনগরী, মাওলানা আফজালুর রহমান, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী, হাসান জামিল, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি মনির হোসেন কাসেমী, মুফতি খলিলুর রহমান নেছারাবাদী ও মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ প্রমুখ।
কেকে/ এমএস