মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫,
৩ আষাঢ় ১৪৩২
বাংলা English

মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
শিরোনাম: পাল্টা হামলায় ইরানে ৪৫০, ইসরায়েলে ৫০ জন নিহত      নেত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাবের স্ক্রিনশট ভাইরাল, সারোয়ার তুষার বললেন আমার না      মুশফিক-শান্তর ফিফটিতে স্বস্তিতে বাংলাদেশ      জ্বালানি তেলের দাম আপাতত বাড়ছে না: অর্থ উপদেষ্টা      সচিবালয়ে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত      পোশাক খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ      ভোটের আগেই হচ্ছে বৃহত্তর ইসলামি ঐক্য      
খোলাকাগজ স্পেশাল
বিএসএফের বাধায় বন্ধ বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ
মো. এহসানুল হক, মৌলভীবাজার
প্রকাশ: শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০৫ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের বাধাসহ নানা জটিলতায় ৪ বছর ধরে উপজেলার শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ আটকে আছে। এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে ভারতে। বাংলাদেশ অংশে কাজ না হলেও সীমান্তের ওপারে ভারতে বিএসএফের উপস্থিতিতে বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ভারতের। আর বাংলাদেশের অংশে ৫টি স্থানে বিএসএফের বাধার কারণে ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে সাময়িক কাজ বন্ধ থাকে। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। বিএসএফের বাধা, জমি অধিগ্রহণ ও অর্থসংকট জটিলতায় ৪ বছর পার হলেও সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নের ৪টি স্থান ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে একটি স্থানে এখনো কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্পের সার্বিক কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এ বছরও বর্ষা মৌসুমে ফের বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
 
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিএসএফের বাধায় ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০০ ফুট ভাঙনের কাজ এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু সীমান্তের ওপারে ভারতের মাগুরউলি, দেবীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁটাতার ঘেঁষে বেড়িবাঁধে বিএসএফের উপস্থিতিতে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল আহমদ, জসিম মিয়া, আতিক হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। 
এর আগেও ২০১৮ সালের বন্যায় উপজেলার টিলাগাঁও, হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর আমাদের গ্রাম কোনটির অস্তিত্ব থাকে না। সেইসঙ্গে আমাদের ইউনিয়নগুলোর বানভাসি মানুষ প্রতিটি মুহূর্তে বন্যা আতঙ্কে থাকি। তারা আরো বলেন, বিএসএফের বাধায় বাংলাদেশ অংশে কাজ বন্ধ হলেও ভারতীয় অংশে ঠিকই কাজ চলছে। 

পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা আব্দুল লতিফ বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখের নাম হলো খরস্রোতা মনু নদী। যখনই নদীতে পানি বাড়ে তখন এ নদীটি পৃথিমপাশা, টিলাগাঁও, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়ন দিয়ে ভাঙন দেখা দেয়। বন্যা হলে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের ৫টি সীমান্তবর্তী স্থানে কাজ বন্ধ থাকলেও ভারতের অংশে বিএসএফের উপস্থিতিতে বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। এখন যদি বাংলাদেশ অংশে কাজ না করা হয় তাহলে ভারতীয় অংশের কাজ শেষ হয়ে গেলে বিএসএফ আরো কঠোর হবে বলে আশঙ্কা করছি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মনু নদীর ভয়াবহ বন্যা আর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলাকে বন্যা ও নদীভাঙন থেকে মুক্ত রাখতে ২০২০ সালের ২১ জুন ৯৯ কোটি ২৮ লাখ টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পটি একনেকের সভায় অনুমোদন হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ প্রকল্পে কুলাউড়া উপজেলায় মোট ২৮টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে। যার মোট চুক্তিমূল্য ৩০৭ কোটি টাকা। ২৮টি প্যাকেজের মধ্যে স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের ২০টি, চর অপসারণ কাজের ৪টি এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনারাকৃতিকরণ কাজের ৪টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলায় কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ। সীমান্তবর্তী কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুরসহ মোট ৪টি স্থানে মোট ২ কিলো ২০০ মিটার অংশে স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাখে। কিন্তু ৪টি স্থানে ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে বিএসএফের বাঁধার কারণে সাময়িক কাজ বন্ধ থাকে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বাঁধ নির্মাণ কাজ।
 
প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় সীমান্ত এলাকার স্থানীয় বাংলাদেশি বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগে এ বিষয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

তবে জেলা প্রশাসন জানায়, চলতি মাসে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা উন্নয়ন সভায় মনু নদীর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আলোচনা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল দিনব্যাপী মনু নদীর চলমান বিভিন্ন বাঁধের কাজ পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলিদ। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাব্বানী কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার রুবেল আহমদ বলেন, মন্দিরা এলাকায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। কিন্তু সময়মতো কাজের বিল না পাওয়ায় হতাশ। এদিকে প্রকল্প এলাকায় কয়েকটি ঘর পুনর্বাসন না করায় পুরো কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলিদ বলেন, বিএসএফের বাঁধায় শরীফপুর ইউনিয়নে চারটি স্থানে ১৪০০ মিটার কাজ বন্ধ রয়েছে। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের কাজ গত বছর শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএসএফের বাধায় কাজ শুরু করা যায়নি। অন্যান্য এলাকায় নদী প্রতিরক্ষার কাজ দ্রত শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ৪টি স্থানের কাজের অনুমতি চেয়ে ২০২৩ সালে যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ হতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন ভারতের নয়া দিল্লিতে একটি পত্র পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ মার্চ মাসে কলকাতায় দু’দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনাসভা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অনুমোদন আসেনি। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  বিএসএফ   বন্যা প্রতিরক্ষা   বাঁধ   বিজিবি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপি নেতা সুজনের জন্মদিনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় সন্তানের মৃত্যুর পর মারা গেল মা, নিহত ৩
টেস্ট দল হিসেবে টাইগারদের প্রথম বছর
পাল্টা হামলায় ইরানে ৪৫০, ইসরায়েলে ৫০ জন নিহত
ফিউচার নেশন : উদ্ভাবন ও নেতৃত্বে যুব সমাজের ক্ষমতায়ন

সর্বাধিক পঠিত

মাদ্রাসায় না এসেও ১২ বছর ধরে বেতন তোলেন অফিস সহকারী!
ঈশ্বরগঞ্জে গরু-ছাগল ও বসতঘর লুটপাট
কাউনিয়ায় টাকার বিনিময়ে টিসিবি কার্ড বিতরণ, ইউপি চেয়ারম্যান আটক
জাতীয় নির্বাচন কোনো অজুহাতেই পেছানো উচিত নয় : সিপিবি নেতা প্রিন্স
বাঞ্ছারামপুরে বিএনপি নেতা সুজনের জন্মদিনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close