বুধবার, ২১ মে ২০২৫,
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলা English

বুধবার, ২১ মে ২০২৫
শিরোনাম: গণঅভ্যুত্থানের দশমাসেও জনজীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা আসেনি: সাইফুল হক      স্কুল-কলেজে ফিরে এসেছে পুরনো শপথবাক্য      ‘২৮ মের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না হলে জেলে যেতে হবে’      মবের চাপে প্রশাসন      এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচির ঘোষণা      ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথের আদেশ আগামীকাল      নগর ভবন ছেড়ে মৎস্য ভবন মোড়ে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
মার্কিন শুল্কযুদ্ধে বাণিজ্যের সংকট-সম্ভাবনার মুখে দেশ
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: রোববার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৫৪ এএম
ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন দেশের ওপর পণ্যে যে বিপুল শুল্ক আরোপ করেছে, তাতে সংকট ও সম্ভাবনার মাঝে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। এতে করে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্প আরোপ হওয়ায় পোশাক খাতে শীর্ষ রফতানিকারক দেশটিকে ধরে ফেলার সুযোগও তৈরি হয়েছে। মার্কিন শুল্ক ঘোষণারা পর পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেই বলছেন, ধসে পড়বে রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার, আবার কেউ বলছেন এটা হতে সময় লাগবে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া 
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেছেন, রফতানি পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানিতে ধস নামবে, এমনটা আমি মনে করছি না। দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ নীতি টেকসই হবে কি না, সেটিও এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, বাড়তি শুল্কের চাপ শেষ পর্যন্ত দেশটির ভোক্তার ওপরই পড়বে। ফলে ভোক্তাদের দিক থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ কম দামের বা বেসিক পোশাক বেশি রফতানি করে থাকে। সেসব পণ্য খুবই মূল্য সংবেদনশীল। পরিষ্কার করে বললে, বেসিক পোশাকের অনেক বেশি প্রতিযোগিতা থাকায় পাল্টা শুল্ক আরোপের পরও ভোক্তা পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম না-ও বাড়তে পারে। কারণ, দাম বাড়ালে বিক্রি কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। সেই ঝুঁঁকি সহজে নিতে চাইবে না যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা যেটি করবে, বাড়তি শুল্কের একটা অংশ নিজেরা বহন করবে। বাকিটা আমাদের মতো উৎপাদকদের দিকে ঢেলে দেবে।

আবার বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক বলবৎ থাকলে তৈরি পোশাকের কিছু ক্রয়াদেশ ভারত ও পাকিস্তানে চলে যাবে। শুল্ক কম থাকায় এ দেশগুলোয় হেভি জার্সি, ডেনিম প্যান্ট, হোম টেক্সটাইলের মতো ক্রয়াদেশ চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কয়েকটি দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম তাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিরি আকারের ২৯ শতাংশের সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে। কম্বোডিয়া করে ২৭ শতাংশ; নিকারাগুয়া করে ২৪ শতাংশ; গায়ানা করে ২৩ শতাংশ; তাইওয়ান ১৫ শতাংশ, থাইল্যান্ড ১২ শতাংশ; মালয়েশিয়া ১২ শতাংশ; দক্ষিণ কোরিয়া ৭ শতাংশ; সুইজারল্যান্ড ৭ শতাংশ; জর্ডান ১২ শতাংশ ও ভেনেজুয়েলা ৬ শতাংশ।

ভিয়েতনামের ওপর আরোপ করা হয়েছে ৪৬ শতাংশ শুল্ক, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক, নিকারাগুয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, গায়ানার ওপর ৩৮ শতাংশ, তাইওয়ানের ওপর ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ওপর ৩৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩২ শতাংশ, জর্ডানের ওপর ২০ শতাংশ ও ভেনেজুয়োর ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ, সতর্ক করলেন ট্রাম্প
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে চীন। দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শুক্রবার এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় বেইজিং।

ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঘোষণার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, তারা নতুন করে ১৬টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে রফতানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য চীনের বাজার ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারে বিধিনিষেধ আরও বাড়বে। এ ছাড়া ১১টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ‘অবিশ্বস্ত সত্তা’ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর আওতায় চীন এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধ বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে। বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে শুরু হয়েছে বড় দরপতন। অর্থনীতিতেও দেখা দিয়েছে মন্দার শঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ। গত অর্থবছরে পণ্যটি আমদানি হয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ। গড়ে ৪ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে পুরোনো লোহার পণ্য আমদানিতে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য এলপিজির উপাদান বিউটেন আমদানি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। বাংলাদেশের শুল্কহার গড়ে ৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানি সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে ৩২ কোটি ডলারের। এ পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর নেই।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এ পণ্য আমদানি হয়েছে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের। এটিতেও শুল্ক-কর নেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির তালিকায় আরো রয়েছে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, হুইস্কি, গাড়ি, গম, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, সয়াকেক, কাঠবাদাম ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে ভারতের লাভ-ক্ষতি

এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের ওপর পাল্টা শুল্কের প্রভাব সবচেয়ে কম পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মানে, রফতানি খাতে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারে ভারত।
এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভারত ও চীন। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতির ফলে ভারতের কিছু খাত প্রতিযোগিতায় সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসতে পারে। চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর তুলনামূলক উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক বসানোয় বিশ্ববাজারে তাদের চেয়ে ভারত নতুনভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে সহজলভ্য নয়, সেগুলো শুল্কের আওতায় আসবে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তামা, ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি, খনিজ, কাঠজাত পণ্য, স্বর্ণ, রুপা, স্টিল বা লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো পণ্য। 

তবে বাড়তি শুল্কের কারণে ভারতের বস্ত্র, ইলেকট্রনিক ও প্রকৌশল শিল্প প্রভৃতি মূল খাতের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার ওষুধশিল্প ও কিছু কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে দেশটি তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

শুল্কের হিসাব-নিকাশে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় দেশ, প্রথম দেশ চীন। প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, এর পরপর ভারত ও পাকিস্তান। চীনের ওপর শুল্ক ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ৩০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর শুল্ক ৩৭ শতাংশ হওয়ায় ভিয়েতনামের চেয়ে সুবিধা পাবে, শ্রমমূল্য কম হওয়ায় সুবিধা মিলবে চীনের চেয়ে বেশি। পাকিস্তান ও ভারতই শুধু বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবে যুক্তরাষ্ট্রে। পাক-ভারতের ওপর কম শুল্কের কারণে সেসব দেশে চলে যেতে পারে ক্রয়াদেশ। আবার চীন-ভিয়েতনামের বেশি শুল্ক দেওয়ায় সেসব দেশ থেকে চলে আসতে পারে আদেশ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কেকে/এএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যমুনার সামনে ইশরাক
১০০ বিলিয়ন ডলারের আরএমজি লক্ষ্যে ঐক্য চায় সম্মিলিত পরিষদ
জুনে ৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে রিজার্ভ
কাপাসিয়ায় মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন
ঢাকাস্থ লাখাই উপজেলা উলামা পরিষদের আত্মপ্রকাশ

সর্বাধিক পঠিত

গজারিয়ায় অবৈধ বালুমহালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ কনস্টেবলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের এক মাস পর সাত সহকর্মীর নামে মামলা
বাঞ্ছারামপুরে নামে ৫০ শয্যা, কাজে ৩১ শয্যার সরকারি হাসপাতাল চলছে খুঁড়িয়ে
বাউফলের প্রধান শিক্ষক সোহেল মল্লিকের যত অপকর্ম
কালীগঞ্জে গ্রাম আদালতবিষয়ক ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ শুরু
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close