বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ      হংকংয়ে একাধিক আবাসিক ভবনে ভয়াবহ আগুন, নিহত ৪      
বেগম রোকেয়া
কৃষিতে বাড়ছে নারীর অবদান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বহুজাতিক কোম্পানিসহ তথাকথিত আধুনিকায়নের করাল গ্রাসে আমাদের কৃষির অনুষঙ্গগুলো একে একে নষ্টের পথে। বীজ থেকে সার, সেচ এমনকি বীজের ক্রয় ও বিক্রয় বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তাদের নির্ধারিত ব্যবস্থায়। এমন অবস্থায় শঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে কৃষিতে হাত লাগাচ্ছেন নারী। নারীর অধিকার বা চাকরিতে সম-অধিকারের কথা বেশ পুরোনো। কৃষিতে একটা সময় প্রান্তিক নারীরা ছিলেন দিনমজুর মাত্র। এখন নারীরা কৃষি উদ্যোক্তা। তারা সার থেকে ফসল, খামার থেকে বিপণন সবই করছেন নিজ হাতে। 

যদিও তথ্য বলছে, কৃষির বেশিরভাগ ছোট-বড় সুযোগ-সুবিধা এখনো চলে পুরুষকেন্দ্রিকভাবে, তবুও কৃষিতে নারী উদ্যোক্তার হার ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি সুযোগ-সুবিধার অর্ধেক অংশও যদি নারীকেন্দ্রিক বরাদ্দ হয়, তাহলে প্রান্তিক এই কৃষি অর্থনীতির জাতীয় অর্থনীতির চাকায় শামিল হতে সময় লাগবে না।

ফাতেমা বেগম। বয়স ৫৫ বছর। চার বছর বোনের কাছে টাকা ধার করে একটা ক্রস জাতের ফ্রিজিয়ান গাভি কিনেছিলেন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। সেই গাভীর দুধ ও গোবর সবই তার পণ্য। ক্রেতারা আগাম টাকা দিয়ে যান। এখন ওই এক গরুর বাচ্চা থেকে তার ছয়টি গরু। বিক্রি করেছেন দুটি। এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার পুঁজি এখন ১২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে চার বছরে। গরুর গোবর থেকে ভার্মিকম্পস্ট সার প্রস্তুত করছেন। এই সার প্রস্তুত করতে গিয়ে দেখছেন নতুন আলো। চিন্তায় এসেছে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের।

তিস্তাপাড়ের মোহসেনা আক্তার নীলা। বয়স ৩০ বছর। তার সঙ্গে আলাপ হয় তিস্তার গহিন চরে। মাথার ওপর সূর্য নিয়ে কাজ করছেন বাদাম খেতে। নীলা জানান, এবার চরে নিজের ও অন্যের জমিসহ মোট ১০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন। ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, বাদাম, মিষ্টিকুমড়া ও তামাক লাগিয়েছেন, ধান লাগিয়েছিলেন। ধান তুলে সেই জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন। আলু তোলা শেষ। এখন সেই জমিতে শাক-সবজি লাগিয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া প্রণোদনার বাদামের ফলনও হয়েছে বেশ।

নীলা বলেন, এবার বর্ষার শেষে সিকিমের বাঁধ ভেঙে যে বন্যা হলো, সেই বন্যার পরে তার জমিগুলোয় কালো রঙের পলির আস্তরণ পড়েছে। সেই পলিযুক্ত বালিতে যা-ই লাগাচ্ছেন, সেই ফসলই বাম্পার ফলন দিচ্ছে। এমন পলিযুক্ত চর তার সারা জীবনে দেখেননি। আর পলিতে যে এত ভালো ফলন হয় সার পানির কম খরচে, তাও জানা ছিল না। এবারের চাষাবাদে সে আসার আলো দেখছেন। আধুনিক কৃষিসেবা পেলে এক জমিতে এরকমভাবে কয়েক রকম ফসল ফলানো যায়। এই চাষাবাদ তিনি চালিয়ে যেতে চান, দাবি শুধু সঠিক পরামর্শের।

হালিমা বেগমের বয়স ২৮ বছর। কৃষি বিভাগ তার শ্বশুরকে দুটি রিং ও ২৫০ গ্রাম কেঁচো দেয়। হালিমার শ্বশুর নিজের জমির জন্য ভার্মিকম্পোষ্ট বা কেঁচো সার তৈরি করছিলেন খুবই ছোট করে। ভার্মি কম্পোষ্ট সার প্রয়োগে হালিমার বাড়িতে লাগানো শাকসবজির ফলন বাড়ে আশার চেয়ে বেশি। হালিমা তার শ্বশুরের কাছ থেকে কেঁচো চেয়ে নেন। শুরু করেন ছোট করে ভার্মিকম্পস্ট সার উৎপাদন। এখন দুই ফুট বাই ১০ ফুটের ১০টি হাউসে ভার্মিকম্পোষ্ট উৎপাদন করছেন এবং ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এর এতটাই চাহিদা যে পূরণ করতে পারছেন না। হালিমার সার উৎপাদনে ১০ শ্রমিক কাজ করেন। 

তিনি জানালেন, গত মাসে ৩০০ টন সারের অর্ডার পেয়েছেন। এত চাহিদার বিপরীতে তার উৎপাদন কম। তিনি উৎপাদন বাড়াচ্ছেন। নতুন ঘরের পাশাপাশি হাউস তৈরি করছেন।

মিনতী রানী দক্ষিণ ভোটমারি গ্রামের তিস্তার চরে প্রতি বছর রবিশস্য চাষাবাদ করেন। এক বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেছেন। প্রতি বছর এক বিঘা জমিতে ৯০ থেকে ১০০ মণ মিষ্টিকুমড়ার ফলন হয়। এবার পলি পড়ায় ফলন বেড়েছে। প্রতি কেজি মিষ্টিকুমড়া স্থানীয় বাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। প্রতিবছর বাইরে ফুড কোম্পানিগুলো এই চর থেকে মিষ্টিকুমড়া কিনে নিয়ে যায়। এবার আসেনি। ১৫ টাকা কেজি দরে এক বিঘায় ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন। বাইরের কোম্পানিগুলো ৪০ টাকা কেজি পর্যন্ত কিনে নেয়। ভাগ্য ভালো থাকলে বাইরের কোম্পানি আসবে। তখন ৪০ টাকা দরে এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় তার কুমড়া বেচতে পারবেন বলে আশা করেন।

কালীগঞ্জ কৃষি দপ্তর বলছে, রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভোটমারী ইউনিয়নে ১০টি কৃষক গ্রুপ রয়েছে, যা ওই প্রকল্পের অর্থায়নে চরের অনাবাদি পতিত জমিতে মিষ্টিকুমড়া আবাদ উদ্বুদ্ধ করে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করছে। এতে পতিত জমিতে মিষ্টিকুমড়া আবাদ করে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

খামার নিয়ে কাজ করা একাধিক সূত্র বলছে, খামারি বা কৃষিতে লাভবান হতে হলে বাইপ্রডাক্টের দিকে নজর দিতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে আচার তৈরিসহ নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। খামারিরা তাদের নিজের খামারে বায়োগ্যাস, ভার্মিকম্পস্ট, দই ও ছানার মতো প্রডাক্ট খুব সহজে করতে পারেন। এক জমিতে একাধিক ফসল আর এক ফসলেই একাধিক ভোগ্যপণ্য তৈরি সম্ভব। এ বিষয়ে দপ্তরগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

কেকে/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  কৃষি   নারীর অবদান  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

একান্নবর্তী ভাঙছে, কৃষি জমি কমছে
কাপাসিয়ায় অবৈধ কয়লা চুল্লি পুনরায় চালু, পরিবেশ বিপর্যস্ত
শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড
গোয়ালন্দে ফেরি থেকে জুয়ারি চক্র আটক
দারিদ্র্য বৃদ্ধির আশঙ্কা, নীতি সংস্কারে জোর দিন

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির মহাসমাবেশে লাখো মানুষের ঢল
চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বিএনপি'র প্রার্থী পরিবর্তনের দাবীতে ফটিকছড়িতে মশাল মিছিল
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
বেনাপোলে বিজিবি'র অভিযান, চোরাচালান পণ্যসহ আটক ২

বেগম রোকেয়া- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close