একেবারে ছোটবেলায় বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু দৃঢ়চেতা নাসিমা খানমের লক্ষ্য ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তাই তো যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই একটি সমিতি গড়ে তোলেন। আর সেই সমিতির মাধ্যমে স্বনির্ভরতার আলো জ্বেলে দিয়েছেন জয়পুরহাটের কালাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে। আশপাশের কয়েক গ্রামের নারীদের স্বাবলম্বী করেই ক্ষান্ত হননি নাসিমা। যেখানেই দুস্থ নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে যান, সেখানেই উঠান বৈঠক করে নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও মাদকাসক্তি রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান।
তাই নাসিমা এখন এক সমাজসেবী নারীর প্রতিমূর্তি। বর্তমানে উপজেলার পুনটের মাদাই গ্রামের বেলাল হোসেনের সহধর্মিণী নাসিমা। তিনি পোশাক তৈরি, নকশিকাঁথা সেলাই, ক্রিস্টালের শো পিস তৈরির ওপর প্রায় ৩০০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এ পর্যন্ত। এদের মধ্যে যারা দুস্থ, অসহায়, তাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। গত ২০ বছরে তার সহায়তায় স্বাবলম্বী হয়েছেন অন্তত ৪০০ নারী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মাদাই নুর মহিলা উন্নয়ন সংস্থা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কয়েকজন নারী গোল হয়ে বসে নিপুণ হাতে নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করছেন। সেখানে তাদের সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন নাসিমা খানম।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে মাদাই নুর মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে সমিতি গড়ে তোলেন। ২০১১ সালে সংস্থাটি জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রশন লাভ করে। সবশেষ ২০১৮ সালে জয়পুরহাট জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন পায় তার প্রতিষ্ঠান। তার কাছে এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, মানুষের মতো বাঁচার, বাঁচতে শেখানোর অবলম্বন এটি।
পোশাক তৈরির কারিগর উপজেলার পুনটের মিনারা বেগম জানান, ঋণগ্রস্ত হয়ে পালিয়ে যায় তার স্বামী। ফলে অভাবের সংসারের পুরো ভার এসে পড়ে তার ঘাড়ে। সে সময়ই তিনি নাসিমা খানমের কাছ থেকে পোশাক তৈরির ওপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে অন্যের দোকানে কাজ করতেন। এখন নিজের বাড়িতেই পোশাক তৈরির কাজ করছেন। প্রতি মাসে তার আয় ৮-১০ হাজার টাকা।
আরেক নারী সারেজাহান শিপন বলেন, স্বামীকে ঋণ করে বিদেশে পাঠানোর পর সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ সময় তিনি পোশাক তৈরির ওপরে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নেন। এখন সেই কাজ করেই তিনি সন্তান-সন্ততি নিয়ে সচ্ছল জীবনযাপন করছেন।
নকশিকাঁথা ও কাপড় সেলাইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কলেজছাত্রী কামরুন নাহার। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে নকশিকাঁথা ও কাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি বাহারি নকশিকাঁথা সেলাই করতে দুই মাস সময় লাগে। এগুলো একেকটি ৫-৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এতে আমার পড়াশোনার খরচ চলে যায়। মায়ের হাতেও তুলে দিতে পারি কিছু টাকা।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নাসিমা খানম ইতোমধ্যে পেয়েছেন জাতীয় যুব পুরস্কার-২০১৮। এ ছাড়া মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে তৃণমূল সংগ্রামী নারীদের অনুপ্রাণিত ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় ২০১৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন।
কে/এমএ