নিজ হাতে হরেক রকমের কেক বানিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন শারমিন। পেশায় তিনি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্বামীসহ তিন সন্তানের ঘর সামলে অবসর সময়ে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কেক বানিয়ে বেশ আয় করেছেন তিনি। প্রতি মাসে পাচ্ছেন ৩০-৪০টির বেশি কেকের অর্ডার। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হুবহু যে কোনো কেক বানিয়ে দিতেও পারদর্শী তিনি।
জানা গেছে, বাটার স্কচ, চকোলেট, ভ্যানিলা, অরেঞ্জ, লেমন, পানদান, ম্যাংগো, স্ট্রবেরি ইত্যাদির পাশাপাশি কালোজাম, চমচম, রসমলাইসহ বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেমস বানাতেও বেশ দক্ষ শারমিন। তার বানানো কেক সংগ্রহ করতে কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ক্রেতারা।
শিক্ষিকা শারমিন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে বাসায় খাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথম কেক বানানো শুরু করি। পরে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজ হাতে বিভিন্ন ডিজাইনের কেক বানিয়ে উপহার দিতাম। কেক খাওয়ার পর অনেকেই তখন তার প্রশংসা করেন। ২০২০ সালে করোনাকালীন যখন রাঙ্গুনিয়ার লিচুবাগানস্থ নিজ বাসায় অবসর সময় পার করছিলাম তখন শারমিন’স কিচেন নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে নিজের তৈরিকৃত বিভিন্ন ডিজাইনের কেকের ছবি তিনি সেখানে প্রকাশ করি। পেইজ খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি কেকের অর্ডার পেয়ে যাই এবং ওই কেক বিক্রির মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ২৫০ টাকা আয় দিয়ে ব্যবসায় শুরু করে বর্তমানে প্রতি মাসেই প্রায় ৩০টির বেশি কেকের অর্ডার পাচ্ছি। আয় হচ্ছে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
এ পর্যন্ত কত টাকা আয় করেছেন জানতে চাইলে এ শিক্ষিকার বলেন, গত ৪ বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকার কেক বিক্রি করেছেন তিনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ মাসেই প্রায় ৭০ হাজার টাকার কেক বিক্রি করেছেন তিনি এখন অনেকে আমাকে দেখে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই শারমিনের বানানো কেকের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই উপজেলায়। তবে তিনি কেবল কেক বানিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি। ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে এ বিষয়ে ‘শারমিনস কিচেনে বেকিং ট্রেনিং’ কোর্সও চালু করেছেন। যেখান থেকে এখন পর্যন্ত ১৭০ জনের অধিক নারীকে কেক বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে তার প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী স্বাবলম্বীও হয়েছেন। তার অনেক ছাত্রী কেক বানিয়ে বর্তমানে তারাও বেশ আয় করছে।
শারমিনস কিচেনে বেকিং ট্রেনিং নেয়া সোমাদ্রিতা জানান, আমি ফেসবুকে শারমিন আপুর বেকিং কোর্সের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করি। ৫ দিনের ট্রেনিং নিয়ে এখন আমি নিজেও একটি পেজ খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আপুর সব স্টুডেন্টকে আন্তরিকতার সঙ্গে ক্লাস করান এবং ব্যবসার খুটিনাটি শিখিয়ে দেন। উনার শেখানো পথ ধরে আজ আমি সফলভাবে ব্যবসা করছি।
শারমিন আকতার জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা যেন আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে। সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানান, আমার একটা বেকিং স্টুডিও এবং বেকারি ও পেস্ট্রি আউটলেট খোলার পরিকল্পনা আছে। যেখানে ভবিষ্যতে তিনি আরো অনেক পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে কাজ করবেন তিনি।
চাকরির পাশাপাশি তিনি এত কাজ কিভাবে সামাল দেন জানতে চাইলে তিনি জানান, চাকরি শেষে বাসায় ফেরার পর উনি মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেন, এছাড়া সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি ও বন্ধের দিনগুলোতে তিনি বেকিং কোর্সটা পরিচালনা করেন। রান্না ও বেকিং এর প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি টিভি রিয়ালিটি শো- সেরা রাধুনী, মার্কস ডের্জাট কুইনসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রান্না বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আইসিআই কর্তৃক ডে লং মাল্টি কুইজিন প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছেন।
কেকে/এমএ