বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড      শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ      
বেগম রোকেয়া
চাকরি না করে স্বাবলম্বী কানিজ ফাতেমা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
কানিজ ফাতেমা

কানিজ ফাতেমা

কানিজ ফাতেমা সব সময়ই স্বপ্ন দেখতেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তাই পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনার ফল পাওয়া গেল যখন তিনি এসএসসি পরীক্ষায় তাক লাগানো রেজাল্ট করলেন। যা তার আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে এইচএসসিতে ভালো করে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর থেকে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই বিভাগে ভর্তি হলেন তিনি। কিন্তু সিএসই বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করলেও কানিজ ফাতেমা প্রকৌশল বিষয়ক কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেননি। 

তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন উদ্যোক্তা হবেন। যেই কথা, সেই কাজ। তবে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে যখন উদ্যোক্তা হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজ বেছে নিলেন, আশপাশের মানুষ তখন রীতিমতো হইচই শুরু করে দিল। 

তাদের বক্তব্য, এমন কাজ কেউ করে? কোথায় বিশাল বেতনে চাকরি করবে, তা না করে একটা অনিশ্চয়তার দিকে নিজেকে টেলে দিচ্ছে! কিন্তু ফাতেমার ভাষ্য, চাকরি করবো অন্যের অধীনে। স্বাধীনতা তো পাবো না। আমি চাই সফলও হতে হবে, আবারো স্বাধীনতাও থাকবে- এমন কাজ। তাই স্বাধীনভাবে কিছু করার স্বপ্নে বিভোর থেকেছেন তিনি। সেদিনের সেই প্রত্যয়ই যেন আজকের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে কানিজ ফাতেমাকে। এখন তিনি কেবল সফল উদ্যোক্তাই নন, উদ্যোক্তা ‘সৃষ্টির কারিগর’ও বটে।

রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে যেদিকে হাত দিয়েছেন সেই খাতেই যেন সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এখন তিনি কাপড় ও রেস্তোরাঁসহ একাধিক ব্যবসায় সামলে চলেছেন। সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প তুলে ধরেন ফাতেমা। 

ফাতেমা জানান, ১৯৯৯ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য চাঁদপুর থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান। এরপর পড়াশোনা শেষ করেছি। কিন্তু এর মাঝেই বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু ফাতেমা দমে যাওয়ার পাত্র নন। তিনি স্বপ্নে স্থির থেকে এগিয়ে চলেছেন পরিকল্পনা মতো। 

নারী উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, ২০০৭ সালে ‘ডিভাস স্টাইল’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করি। এর অফিশিয়াল যাত্রাও তখনই শুরু হয়। এরপর আর আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘ডিভাস স্টাইলে’ মূলত তৈরি পোশাক; যেমন-শাড়ি, পাঞ্জাবি, বেডশিট, শিশুদের পোশাক, কাপল ড্রেসসহ নিজস্ব ডিজাইনের পোশাক বিক্রি হয় অনলাইন ও অফলাইন। এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২০ জন কাজ করছেন।’ 

উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্য এলেও শুরুর দিকে কানিজের গল্পটা ছিল ভিন্ন। প্রকৌশল হিসেবে ভালো চাকরির সুযোগ ছেড়ে দেওয়াটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের অনেকে ভালোভাবে নেননি। মুখে না বললেও অনেকের আচরণে প্রকাশ পেয়েছে কটাক্ষ। কিন্তু এসব আচরণ কানিজ গায়ে মাখেননি। তিনি তার মতো করে এগিয়েছেন।

কানিজ ফাতেমা বলেন, আমি জানতাম, আমার যে উদ্যোগ, এটি সফল হলে সবাই গ্রহণ করবে। তাই আমি আমার কাজে সর্বোচ্চ ফোকাস করতাম। জীবনটা আমার, তাই এর ভালো থাকাটা আমাকে নিশ্চিত করতে হবে। সফল হলে সবাই পাশে থাকে।

কানিজ ফাতেমা জানালেন, মা-বাবা শুরুর দিকে মেয়ের উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত পছন্দ না করলেও এখন তারা খুশি। তার স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম সুমন একজন চিত্রশিল্পী। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। 

নিজের কাজের ক্ষেত্রে সবসময়ই স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান তিনি। 

কানিজ ফাতেমা আরো বলেন, মূলত তার স্বামীর সহযোগিতা আমাকে ভীষণভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ফাতেমা বলেন, আমি শুধু নিজে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। গ্রামের নিম্ন আয়ের নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ‘আর্ট অব ডিভা ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করি। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহজশর্তে পণ্য দেওয়া হয়। 

এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ, এতিমদের খাওয়ানোসহ বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করা হয় বলে জানালেন তিনি। অনেক নারী উদ্যোক্তা শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই ঝরে পড়েন। এমন হওয়ার কারণ কী? 

এ ব্যাপারে কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের সমাজে সহযোগিতার অভাব, সেটা যেমন সামাজিক ও পারিবারিক- দুই জায়গাতেই। আবার অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যাংক লোন পেতে গেলে জামানত চায়। এসবের ব্যবস্থা করতে না পারাই ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ।’

তিনি বলেন, তবে আমাদের দেশের নারী প্রথম বাধার সম্মুখীন হয় পরিবার থেকে। পরিবারের সহযোগিতা নারী উদ্যোক্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই আমি মনে করি মেয়েদের পরিবার থেকেই সহায়তা দেওয়া উচিত।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে কানিজ ফাতেমা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। 

তার মতে, যারা উদ্যোক্তা হওয়ার মতো কাজে যুক্ত হতে চান তাদের প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর যে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে চান, সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। মার্কেট বিষয়ে গবেষণা (রিসার্চ) করতে হবে। এছাড়া যে বিষয়টা নিয়ে কাজ করবেন, তার চাহিদা সম্পর্কে জানতে হবে এবং সঠিক কাঁচামাল নির্বাচন করা জরুরি।

কাজই হচ্ছে কানিজ ফাতেমার ধ্যানজ্ঞান। পরিশ্রম, সততা আর একাগ্রতার জন্যই আজ তিনি সমাজের সফল নারী। অন্য নারীদের জন্য অনুকরণীয়। উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি বেশ কয়েকবার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। পেয়েছেন উদ্যোক্তা পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে- ২০১৯ সালে জয়িতা, ২০২১ সালে পাওয়ার উইমেন পদ্মাব্যাংক পুরস্কার, এবং ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ১০০ সেরা নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামনে ব্যবসায় আরো বড় করার ইচ্ছা রয়েছে। আমি স্বপ্ন দেখি আমার উদ্যোগে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। গ্রামের নিম্ন-আয়ের নারীরা নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন। 

এমন পরিকল্পনা নিয়েই ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে চলেছেন তিনি।

কেকে/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  চাকরি   স্বাবলম্বী   কানিজ ফাতেমা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দ্বিতীয় বারের মতো ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-মার্কিন দ্বৈরথ
বয়ান শিল্পাঙ্গনের তৃতীয় নাট্য কর্মশালা ৩০ নভেম্বর থেকে
অস্থিতিশীল বিদ্যুৎ খাত : উত্তরণের উপায়
প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড

সর্বাধিক পঠিত

চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
ধামরাইয়ে সাত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ১৫ লাখ জরিমানা
বিএনপি যে কথা দেয় সে কথা রাখে : নাসিরুল ইসলাম
বুধবারের আলোচিত ছয় সংবাদ

বেগম রোকেয়া- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close