বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫,
১৪ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: বিএনপির লক্ষ্য আধুনিক ও গণমুখী বাংলাদেশ গড়া : তারেক রহমান      দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকে ট্রাম্প-জিনপিং       সংঘাত উসকে দিল ঐকমত্য কমিশন       নির্বাচন ঠেকানোর পাঁয়তারা জামায়াত-এনসিপির      ৭ নভেম্বর ঢাকায় ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করবে আইসিএবি      একলাফে স্বর্ণের ভরিতে বাড়ল ৮৯০০ টাকা      ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
ভেনেজুয়েলায় ট্রাম্প কী চান?
অলোক আচার্য
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৫৪ এএম আপডেট: ৩০.১০.২০২৫ ১১:০১ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কৌশলগত দিক থেকে ভিন্ন অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে শুরু করে মিত্রতার সমীকরণ সব ক্ষেত্রেই যেন বিগত প্রেসিডেন্টদের তুলনায় এক ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে অটল থাকার প্রচেষ্টা হিসেবে দেশটির বহু বছরের পরীক্ষিত মিত্রদেরও খুব একটা ছাড় দেননি। আবার কয়েকটি যুদ্ধ থামানোর সফল প্রচেষ্টার ক্রেডিটটাও তিনি নিয়েছেন। নোবেল পাওয়া দাবিদার নিয়ে বিশ্বে কম জল্পনা হয়নি! যদিও রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রায় এক তরফা যুদ্ধ কীভাবে থামবে সেটি ঠিক হয়নি। রাশিয়াকে কোনোভাবেই বাগে আনতে পারছেন না। কারণ যাই হোক তিনি চেষ্টা করছেন। আবার তিনিই ভেনেজুয়েলার সঙ্গে প্রায় যুদ্ধাবস্থায় নিয়ে গেছেন।

শান্তিপ্রিয় অবস্থান থেকে সরে কেন যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটাই প্রশ্নের। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে সম্পর্কটা অনেকটা সাপে নেউলে অর্থাৎ নিকোলাস মাদুরোর ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কটা গত কয়েক বছর ধরেই তিতা ধরনের। যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্ক তার মধ্যে অন্যতম ভেনেজুয়েলা। মাদুরো সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই মেনে নিতে পারেনি। সেই সম্পর্ক এখন আরো বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অবস্থা এমন যে, যে কোনো সময় অল্পবিস্তর যুদ্ধও শুরু হতে পারে। 

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের গোপন অভিযান চালানোর খবর প্রকাশ্যে আসতেই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও মাদুরো বলেছেন তিনি শান্তি চান। নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘দয়া করে, কোনো পাগলাটে যুদ্ধ শুরু করবেন না। মাদকের ইস্যু কেন্দ্র করে ভেনেজুয়েলাকে যে মানসিক চাপ প্রয়োগ করছেন যদি সেখানেই ঘটনাটি সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে এবং যদি সিআইএ এর গোপন সেই অভিযান হয় তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। পৃথিবী হয়তো আরেকটি যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে পারে। সেই যুদ্ধ যে খুব সুখকর হবে না বলাই বাহুল্য। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, তিনি সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছেন এবং প্রয়োজনে স্থল হামলার কথাও বিবেচনা করছেন। তিনি মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক চক্র পরিচালনার অভিযোগ এনেছেন। তবে মাদুরো এ অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। গত দুই মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক সমাবেশ ঘটাচ্ছে। যদিও বিষয়টির ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এসব করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্র শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে কারাকাসকে বার্তা দিতে চায়। কিন্তু ঠিক কি বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলাকে? সরকার পরিবর্তনের? কারণ ভেনেজুয়েলার ভেতরেও যথেষ্ট অস্থিরতা রয়েছে। মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের অভিযোগ অনেক পুরাতন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ছোট ছোট নৌযানে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করেছে। 

কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন এটি যুক্তরাষ্ট্রের মাদুরো সরকারকে সরিয়ে দিতে এক ধরনের মানসিক চাপ দেওয়ার প্রক্রিয়া। যা আদতে যুদ্ধ নয়, ভয় দেখানো। নিজের সামর্থ্য দিয়ে সরাসরি সামরিক অভিযানে না গিয়ে প্রচেষ্টা করা। সরাসরি সামরিক অভিযান এই মুহূর্তে হয়তো ট্রাম্প শুরু করবেন না। যুক্তরাষ্ট্র মাদুরো সরকারকে ক্ষমতায় না দেখতে চাইলেও দেশটির সেনাবাহিনী মাদুরোর পাশে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় সরকার পরিবর্তনের নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন বিদেশি সরকার উৎখাতের দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না। এখনও এটি স্পষ্ট নয় যে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই চাইছেন। তবে দিন যত গড়াচ্ছে এই মনোভাবটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে মাদুরো সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই এত আয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে গ্রেফতারের তথ্যের জন্য ঘোষিত পুরস্কার বাড়িয়ে ৫ কোটি ডলার করেছে। 

মাদক বিষয়টি কেবল সামনে আনা হয়েছে মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এখনো মাদুরোকে ভেনেজুয়েলার বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ২০২৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার বিরোধী দল উভয়েই স্বাধীন ও সুষ্ঠু নয় বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এখন পর্যন্ত মাদুরোকে সেনাবাহিনী যথেষ্ট সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যতক্ষণ সেটি রয়েছে ততক্ষণ কেবল বাইরে থেকে চাপ প্রয়োগ করে মাদুরোকে সরানো আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি হলো সেনাবাহিনী। 

সেক্ষেত্রে সরাসরি সামরিক অভিযানেই তা ছোট পর্যায়ে হলেও তাহলেই সম্ভব।  সমুদ্র পথে মাদক আটকাতে যুক্তরাষ্ট্র যে আধুনিক নৌবহর মোতায়েন করেছে সেটির প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। মাদকবাহী নৌযানে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। এর এক দিন পরই পাদ্রিনোর কাছ থেকে সামরিক মহড়ার বিষয়ে ঘোষণা এলো। গত আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর ৮টি নৌযান, ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও পারমাণবিক শক্তিচালিত ১টি সাবমেরিন মোতায়েন করেছে। এরই অংশ হিসেবে লাতিন আমেরিকা অভিমুখে বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য তিনি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে অনুমোদন দিয়েছেন। এটা সামনে আসার পরপরই সারা বিশ্বে এ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে ভেনেজুয়েলাও। নিজেরাও সামরিক হামলা ঠেকাতে পুরোদস্তুর প্রস্তুত হচ্ছে। সিআইএ এর যে গোপন অভিযানের কথা বলা হচ্ছে সেটি যদিও অমূলক ধারণা নয়।

এটি হতেও পারে। তবে এতটাই গোপন এবং সূক্ষ্ম যে তা মোকাবিলা করা সত্যিই কঠিন। সরাসরি সামরিক অভিযান থেকেও এটি অনেক সময় বেশি কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। দেশটির জনপ্রিয় নেতা হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসেন নিকোলাস মাদুরো। সেই নির্বাচন থেকেই দেশটির বিরোধীদল কারচুপির অভিযোগ আনেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা টানাপোড়েন তৈরি হয়। তবে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো ছিল। চলতি বছর ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিকোলাস মাদুরোর এক কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হলো ভেনেজুয়েলায় ট্রাম্পের উদ্দেশ্য কি? মাদকের বিস্তার রোধ করা না মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিরোধী মিত্রকে ক্ষমতায় আনা? বিষয়টি এ রকম হতে পারে যে একটি হলো ইস্যু এবং পরেরটি লক্ষ্য! ইস্যু ধরে সামনে এগিয়ে লক্ষ্য অর্জন করা! তবে অতীত বলছে বিষয়টি অতটা সহজ হবে না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট        

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দশমিনায় আ.লীগের ২ নেতা গ্রেফতার
পুঠিয়ায় বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার
বিএনপির লক্ষ্য আধুনিক ও গণমুখী বাংলাদেশ গড়া : তারেক রহমান
ফতুল্লায় যৌথ অভিযানে ১৬ জন মাদকসেবীকে কারাদণ্ড
ষড়যন্ত্রকারীরা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে : আবুল খায়ের ভূঁইয়া

সর্বাধিক পঠিত

‘বিগত সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের দপ্তরগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে’
শ্রীমঙ্গলে চার দশক পর মিলনায়তন কাম গ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
দক্ষ প্রকৌশলী গঠনই টেকসই অবকাঠামোর মূল ভিত্তি : শাহেদুল আজিম
নবীনগর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে তীব্র জনবল সংকট
আদিতমারীতে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনসভা

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close